কাশ্মিরে মসজিদে ঢুকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করলো সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৩, ১৯:৪২

ছবি: সংগৃহীত
ভারত-শাসিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভারতীয় সেনাবাহিনী জোর করে একটি মসজিদে ঢুকে মুসলিমদের ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান দিতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেত্রী মেহবুবা মুফতি গত শনিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় প্রথম টুইটারে এই অভিযোগ তোলেন। এর পরদিন আরও দুজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, ওমর আবদুল্লাহ ও গুলাম নবি আজাদও বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা চরম নিন্দনীয়। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
তবে এই অভিযোগ সামনে আসার পর প্রায় দুদিন কেটে গেলেও ভারতীয় সেনাবাহিনী এই অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। সেনা মুখপাত্র যেমন ঘটনাটি স্বীকার করেননি, তেমনি অস্বীকারও করেননি।
শ্রীনগরে বিবিসির সংবাদদাতা মাজিদ জাহাঙ্গীরকে সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র পর পর দুদিন জানিয়েছেন, এরকম কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের জানা নেই। তবে তারা বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেবেন।
দেশটির ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলেছে, তাদের সংবাদদাতা যখন এই বিষয়ে জানতে কাশ্মিরের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন করেছিলেন তারা হয় জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন, নয়তো ফোনই ধরেননি।
তবে পুলওয়ামার যে জাদ্দোরা গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে বলে বলা হচ্ছে, সেই গ্রামের সিভিল সোসাইটি গ্রুপের চেয়ারম্যান আলতাফ আহমেদ ভাট আজ রবিবার (২৬ জুন) দাবি করেছেন, শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তারা তাদের গ্রামে এসে ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গেছেন।
কলকাতার ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকা ভাটের বরাত দিয়ে বলেছে, সেনাবাহিনীর যে মেজরের নেতৃত্বে ওই ঘটনা ঘটেছিল তাকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সেনা কর্মকর্তারা গ্রামবাসীদের জানিয়েছেন। তবে সেনাবাহিনীর সূত্রে এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ তারা বিষয়টি নিয়ে মুখে পুরোপুরি কুলুপ এঁটে রয়েছেন।
মেহবুবা মুফতি শনিবার সন্ধ্যায় টুইট করেন, ‘৫০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সেনারা পুলওয়ামাতে একটি মসজিদে জোর করে ঢুকে পড়েছে এবং তার ভেতরে মুসলিমদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করেছে। এ খবর শুনে আমি স্তম্ভিত।’
অমরনাথ যাত্রার ঠিক আগে এবং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন নিজে কাশ্মিরে আছেন, তখন এ ধরনের একটি ঘটনা ‘প্ররোচনা’ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মুফতি মন্তব্য করেন।
মেহবুবা মুফতির পর ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি খবর পোস্ট করে লেখেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পুলওয়ামাতে একটি মসজিদের ভেতরে ঢুকেছে এ খবর খুবই বিচলিত করার মতো।’
‘মসজিদে ঢোকাটাই খুব খারাপ, তার ওপর যেভাবে তারা সবাইকে দিয়ে জয় শ্রীরাম বলিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন সেটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না,’ মন্তব্য করেন আবদুল্লাহ।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে তিনি গোটা ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি জানান। বর্তমানে বিজেপির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রবীণ কাশ্মিরি রাজনীতিবিদ গুলাম নবি আজাদও রবিবার এক টুইটে পুলওয়ামার ঘটনাটি প্রসঙ্গে লেখেন, ‘এই ধরনের জিনিস আমাদের সংস্কৃতিতে নেই, আইনও এর কোনও অনুমতি দেয় না।’
এটা এখনও অভিযোগের পর্যায়ে থাকলেও সত্যি সত্যি সে দিন কী ঘটেছিল তা খুঁজে বের করা এবং দোষীদের কঠোরতম সাজা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে, মেহবুবা মুফতিও তার টুইটে সেনাবাহিনীর চিনার কোরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাইকে ট্যাগ করে এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছিলেন।