Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘে গৃহীত রেজ্যুলেশন জনগণের জন্য কতটা কার্যকরী

Icon

জাফর খান

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১৪:১৬

জাতিসংঘে গৃহীত রেজ্যুলেশন জনগণের জন্য কতটা কার্যকরী

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের ২৫ জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ) ‘ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রদান হতে বিরত থেকে আন্তঃধর্মীয় এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ বিষয়ক সহনশীলতাভিত্তিক প্রচার’ শীর্ষক একটি রেজ্যুলেশন গ্রহণ করে। পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক সহিংসতা ও ঘৃণা ছড়ায়- এমন কিছু কাজের তালিকাও প্রকাশ করে সাধারণ পরিষদ। আর এরপরই আনা হয় নিন্দা প্রস্তাব।

এ সময় রেজ্যুলেশনে বিশেষভাবে লেখা হয়, ‘যারা ধর্ম বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে সহিংসতামূলক কাজে যুক্ত তাদের প্রতি সমর্থন নেই জাতিসংঘের। ধর্মীয় মত অনুসারে কেউ অন্য কারও সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতীক, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা, সম্পত্তি, স্কুল, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলে সেটির প্রতিও জানাই কঠোর নিন্দা। পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র, ধর্মীয় সাইট, ধর্মীয় পবিত্র স্থান ইত্যাদি বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সকল প্রকার আক্রমণের বিষয়েও জাতিসংঘ নিন্দা জানায়।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলও (ইউএনএইচআরসি) জুলাই মাসের শুরুতে অনুরূপ রেজ্যুলেশন নিয়েছিল। আর তার ধারাবাহিকতায় এমনটা করা হয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। আর এরই আলোকে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে তাদের জাতীয় আইন, নীতি এবং আইন প্রয়োগকারী কাঠামো পরীক্ষা করে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানোর ওপর জোর তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। 

সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় মুসলিম দেশগুলোতে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে। যদিও সাধারণ পরিষদে এই রেজ্যুলেশনটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। তবে ইউএনএইচআরসির রেজ্যুলেশনটি গ্রহণের সময় ইউরোপীয় দেশগুলো এর বিরুদ্ধে ভোট প্রদান করে। বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর প্রধান সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন বা ওআইসির দাবি, কোরআন পোড়ানোর মতো কাজগুলোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হোক। অন্যদিকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে এটি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, তারা প্রকাশ্যে স্পষ্টতই এমন সহিংসতা ও ঘৃণ্য কাজ সংঘটিত করতে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাচ্ছে, যা নিন্দার বিপরীতে সংঘর্ষের পথকে অনুপ্রাণিত করার বহিঃপ্রকাশ। ইউরোপীয় নেতাদের স্পষ্ট মত, পবিত্র গ্রন্থ পোড়ানোর বিষয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন নয়। তাই এ বিষয়ে নিন্দা জানানোর কিছু নেই। 

সাধারণ পরিষদে রেজ্যুলেশনের সুযোগ

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৩টি দেশ নিয়ে গঠিত। এটি জাতিসংঘের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক নিয়ামক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। মূল ভূমিকার আওতায় বহুপাক্ষিক কূটনীতির আদলে একটি ফোরাম প্রণয়নের পাশপাশি গুরুত্বপূর্ণ রেজ্যুলেশন গ্রহণ করে থাকে যা কিনা রাষ্ট্রগুলোর আন্তর্জাতিক আচরণের নীতি এবং মানকে সংজ্ঞায়িত করে থাকে। সাধারণ পরিষদ জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হলেও এটি  বেশি শক্তিশালী নয়। 

মূলত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বা ইউএনএসসি সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী একটি অঙ্গ সংগঠন। মোট ১৫টি রাষ্ট্র নিয়ে এটি গঠিত। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া- এ পাঁচটি দেশ স্থায়ী সদস্য। অন্যদিকে অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে রয়েছে ১০টি দেশ। ইউএনএসসি বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে থাকে। এটিও রেজ্যুলেশন গ্রহণ করে, তবে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের (মানবাধিকার কাউন্সিলসহ) রেজ্যুলেশনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো যে নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত রেজ্যুলেশন আইনগতভাবেই বাধ্যতামূলক করা হয় প্রয়োজনে, যা সাধারণ পরিষদে করা হয় না। 

তাহলে যা দাঁড়ায়, বাস্তবিক অর্থে সাধারণ পরিষদের (মানবাধিকার কাউন্সিলসহ) গৃহীত রেজ্যুলেশন আন্তর্জাতিক আইনের প্রামাণিক উৎস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। তারা কেবল একটি রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে, যার উপেক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব। কিন্তু আইনগত ভিত্তি তৈরিতে এটি অক্ষম যা নির্যাতিত বা দুর্বল রাষ্ট্রের জন্য অর্থবহ হতে পারে না। 

সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলের রেজ্যুলেশন কি আসলেই পরিবর্তন আনতে সক্ষম? সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণ পরিষদে গৃহীত রেজ্যুলেশন হয়তো ধর্মীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রভাব ফেলতে কিছুটা প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমনটি আগে বলা হয়েছে, এটির আইনি অবস্থানের চেয়ে নীতিগত বিষয় নিয়েই কাজ করে থাকে। সৃষ্ট ইস্যুর সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে অবস্থানরত রাষ্ট্রগুলো অন্যদের কাছে ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে সহিংসতামূলক পথ তৈরি করে। ইউএনজিএ রেজ্যুলেশন মূলত কোনো ধরনের বাস্তব পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। আর এমন অবস্থায় হতাশা তৈরি হয়। তাই যে কোনো গৃহীত রেজ্যুলেশনের ব্যবহারিক প্রয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায় তাৎপর্যের সঙ্গে তা ভাবনার হয়তো সময় এসেছে এই অঙ্গসংগঠনটির। 

কোনো ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ পোড়ানোর মতো ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের সমতুল্য হিসেবে বিবেচ্য হলে সেটির গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আন্তর্জাতিক এই সংস্থার জন্য। কারণ এর আগে জাতিসংঘের এমন রেজ্যুলেশন মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল ইউরোপীয় দেশগুলো। অন্যদিকে জাতিসংঘে কোনো প্রস্তাব পাস করা হলে সেটি বাতিলের ক্ষমতাও নেই সংস্থার। তবে এটিও কিন্তু আবার বলা চলে না যে সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব কোনো ভূমিকা পালন করে না। রাষ্ট্রের সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐকমত্যের অভিব্যক্তি হিসেবে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কাজের বড় অংশ এটি। আন্তর্জাতিক আচরণের নীতি এবং মান প্রকাশের পাশাপাশি সতর্কতার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক গুরুত্বের বহিঃপ্রকাশ করে থাকে মূলত ইউএনজিএ। 

তবে সম্প্রতি এ সংস্থায় গৃহীত রেজ্যুলেশনগুলো একটি দীর্ঘমেয়াদি আন্তঃধর্মীয় এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপের অংশ; যা যৌক্তিকভাবেই বিশ্ব দরবারের কাছে অপরিহার্য। আর তাই এটিকে আরও শক্তিশালী করা, ঐকমত্যের ভিত্তিকে মজবুত অবস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া অতীতের চেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্ববাসী।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫