
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ছবি: সংগৃহীত
“বাংলার মাটি বাংলার জল” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটির কয়েকটি শব্দ বদল করে সেটিকে রাজ্য সঙ্গীত করার প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের “বাংলা দিবস” ও রাজ্য সঙ্গীত বিষয়ে সর্বদলীয় এক বৈঠকে এই প্রস্তাব দেন মমতা ব্যানার্জী। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা সংস্করণ।
বৈঠকে পহেলা বৈশাখকে বাংলা দিবস হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের শব্দ পরিবর্তন নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে সবার মতামত চেয়েছেন। এরপর প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্য বিধানসভায় তোলা হবে। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গানের শব্দ বদল করতে চাওয়া নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
‘বাঙালির’ পরিবর্তে ‘বাংলার’ চান মমতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ জানিয়ে হিন্দু-মুসলিমদের নিয়ে যে রাখি বন্ধন উৎসব করেছিলেন, সেই লক্ষ্যে তিনি লিখেছিলেন “বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু, বাংলার ফল- পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান” গানটি।
এই গানে “বাঙালির পণ বাঙালির আশা” এবং “বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন” যে লাইনগুলোতে রয়েছে, সেখানে বাঙালি শব্দটির পরিবর্তে বাংলা বসিয়ে “বাংলার পণ বাংলার আশা” ইত্যাদি করা যায় কি-না, তা ভেবে দেখার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে মমতা বলেন, “রাখি বন্ধনের জন্য রবীন্দ্রনাথ যখন গানটি লিখেছিলেন, তখন তিনি সব সমাজকে নিয়ে কথা বলেছিলেন, যারা বাংলায় কথা বলেন। কিন্তু এখন বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গে) বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায়, ধর্মের মানুষ বাস করেন। তিনি বেঁচে থাকলে বলতেন ‘বাংলার’।”
বৈঠকে মতান্তর তৈরি হলে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা” গানটিকে রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব দেন মমতা ব্যানার্জী।
‘রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে টানাটানি কেন?’
রবীন্দ্রনাথের গানে মুখ্যমন্ত্রীর শব্দ বদলের প্রস্তাব সামনে আসতেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী এবং বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, রবীন্দ্রনাথের গানের শব্দ বদল করা উচিত নয়, সেটি অন্যায়।
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার বলেন, “শুধু রবীন্দ্রনাথ কেন, যেকোনো স্রষ্টার সৃষ্টিকে কেউ পাল্টাতে পারেন না। সেটি তার নিজের রচনা। প্রয়োজনে নতুন একটি রচনা করা যেতে পারে। সেই নতুন রচনায় হয়তো অনুপ্রেরণা থাকতে পারে, যেমন রবীন্দ্রনাথের গানের অনুপ্রেরণা দেখতে পাই সলিল চৌধুরীর গানে, আবার লালনের কোনো গানের অনুপ্রেরণা হয়তো কবীর সুমনের গানে পাবো।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তো নিজে গান লেখেন, সুর করেন, গানও করেন। তিনি নিজেই একটা গান লিখতে পারেন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে টানাটানি কেন? এটি সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত, অন্যায়।”
বাংলা দিবস
রাজ্য সঙ্গীত নিয়ে আলোচনার সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি বিশেষ দিনকে ‘বাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার।হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এ বছর থেকে জোরেশোরে ২০ জুন দিনটিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করছে। ওই তারিখেই ১৯৪৭ সালে অবিভক্ত বাংলার আইনসভায় বাংলা ভাগ নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল।