নেসরিনের ৩২ শিক্ষার্থীর কেউ বেঁচে নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:২৪

ফাইল ছবি।
গত সপ্তাহে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মরক্কোতে। ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৩০০০ মানুষ মারা যায়। আরবি এবং ফরাসিভাষার শিক্ষিকা নেসরিন আবু এলফাদেল নামে একজন শিক্ষিকা ভূমিকম্পের পর নিজের ৩২ জন ছাত্র-ছাত্রীর খোঁজে বেরিয়ে ছিলেন।
তার স্কুল ছিলো আদাসেল নামের পাহাড়ি গ্রামে। সেখানেই তার ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি ছিলো। খোঁজ নেওয়ার পর তিনি ভয়াবহ এক সত্য জানতে পারেন। তার ৩২ জন ছাত্র-ছাত্রীর কেউ আর বেঁচে নেই। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী সবাই ভূমিকম্পে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, আমি গ্রামে গিয়ে আমার বাচ্চাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম। সোমায়া কোথায়? ইউসুফ কোথায়? এই মেয়েটা কোথায়? ওই ছেলেটা কোথায়? কয়েক ঘণ্টা পরে উত্তর এল, ওরা সবাই মারা গেছে।
তিনি বিবিসিকে বলেন, আমি চিন্তা করছিলাম ক্লাসের উপস্থিতির খাতাটা হাতে ধরে রেখেছি এবং একের পর এক শিক্ষার্থীর নাম কেটে দিচ্ছি। নাম কেটেই যাচ্ছি যতক্ষণ না আমি ৩২ জনের নাম কেটে ফেলছি। তারা সবাই এখন মৃত। মরক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত প্রায় ৩ হাজারের মধ্যে এই ক্ষুদে শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ছিলো মারাকেশের দক্ষিণে। যেখানে অনেক পাহাড়ি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। আদাসেল সেই জায়গাগুলোর মধ্যে একটি ছিলো।
শিক্ষিকা এলফাদেল জানান কীভাবে ছয় বছর বয়সী খাদিজাকে উদ্ধার করা হয়েছিলো। উদ্ধারকারীরা শিশুটির মৃতদেহ তার ভাই মোহাম্মদ এবং তার দুই বোন মেনা ও হানানের পাশে পড়ে থাকতে দেখেন। ভূমিকম্পের সময় তারা সবাই তাদের বিছানায় ছিলো। সম্ভবত তারা ঘুমিয়ে ছিলো। নিহত শিশুরা সবাই এলফাদেলের শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, ‘খাদিজা আমার প্রিয় ছিল। সে খুব সুন্দর, স্মার্ট এবং গান গাইতে পছন্দ করত। সে আমার বাড়িতে আসত। তার সঙ্গে পড়াশোনা করতে এবং কথা বলতে পছন্দ করতাম। মর্মাহত শিক্ষিকা তাদের ফেরেশতা এবং সম্মানিত শিশু হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যারা শিখতে খুব পছন্দ করত। দারিদ্র্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয়বহুল সংকটের সঙ্গে লড়াই করা সত্ত্বেও তারা এবং তাদের পরিবার স্কুলে যাওয়াকে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বলে মনে করত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শেষ ক্লাস ছিলো শুক্রবার রাতে। ভূমিকম্পের ঠিক পাঁচ ঘণ্টা আগে। আমরা মরক্কোর জাতীয় সঙ্গীত শিখছিলাম এবং সোমবার সকালে পুরো স্কুলের সামনে এটি গাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম।