দক্ষিণ এশিয়ার ৩০ কোটি ৭০ লাখ নারী অপুষ্টিতে ভুগছে: ইউনিসেফ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:৫৫

ছবি: ইউনিসেফ
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রজনন বয়সী প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একজন যা কিনা ৩০ কোটি ৭০ লাখ মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের ঘাটতিতে ভুগছেন। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রায় ৬৩ শতাংশের জীবনে প্রথম ছয় মাসে শারীরিক বৃদ্ধির হার স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যা একটি শিশুর জীবনের প্রথম ৫০০দিন হিসেবে পরিচিত, এসময়ে একটি শিশু পুষ্টির জন্য সম্পূর্ণরূপে তার মায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকে।
এ অবস্থা পরিবর্তনে বিশ্বের অপুষ্টি ও রক্ত স্বল্পতায় ভোগা কিশোরী ও নারীদের কেন্দ্র দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফের মতে, অগ্রগতিসত্ত্বেও, বিশ্বের খর্বাকৃতির শিশুদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় যে সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৪০লাখ। আড়াই কোটির বেশি শিশু কৃশতা উচ্চতার তুলনায় ওজন কম। ইউনিসেফ থেকে পাঠানো প্রেস রিলিজে এতথ্য জানা গেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়ে ও নারীদে জন্য সঠিক পুষ্টি পরিচর্যা জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে ইউনিসেফ ১৮ সেপ্টেম্বর নেপালের কাঠমান্ডুতে পুষ্টি বিষয়ক তিন-দিনব্যাপী এক আঞ্চলিক সম্মেলনের সূচনা করেছে।
ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক কার্যালয় আয়োজিত এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ- বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অংশগ্রহণ করেছে। দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে সরকারি প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী, গবেষক, আইনবিদ ও অন্যান্য অংশীদারেরা অংশগ্রহণ করছেন। আগামী তিনদিন, বিশেষজ্ঞরা এই অঞ্চলের কিশোরী ও নারীদের পুষ্টি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন; পাশাপাশি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মেয়ে ও নারীদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের ক্ষেত্রে এই সংকট মোকাবিলার জন্য নতুন কার্যকরী সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন।
দক্ষিণ এশিয়ার অপুষ্টির এই আন্তঃপ্রজন্মীয় চক্র ভাঙার লক্ষ্যে নারীদের জন্য সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা আবশ্যক। ইউনিসেফের ‘অপুষ্টি ও উপেক্ষার শিকার’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী অপুষ্টির শিকার শিশুদের এক তৃতীয়াংশই বাস করে এই অঞ্চলে। একইভাবে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি পাঁচ জন নারীর মধ্যে একজনের ওজন কম এবং দুইজনের মধ্যে একজন রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। ইউনিসেফের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলে মাতৃত্বকালীন অপুষ্টি সর্বোচ্চ মাত্রায় বিদ্যমান, সেসব অঞ্চলে অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যাও সর্বোচ্চ।
সম্মেলনের উদ্বোধনীতে ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সঞ্জয় উইজেসে কেরা বলেন, মেয়ে ও নারীদের পূর্ণ বিকাশ ও জীবনে সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক পুষ্টির ভূমিকা অপরিহার্য। একজন মায়ের পুষ্টির প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায় তার সন্তানের ওপর।একারণেই দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়ে ও নারীদের অপুষ্টির বিষয়টির সমাধান ব্যতীত শিশুদের অপুষ্টির সমস্যার সমাধান করা যাবেনা। নারী ও শিশুদের পুষ্টির বিষয়টি যেন জাতীয় উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রে থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের সরকার শিশু ও নারীদের মধ্যে অপুষ্টি মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তবে এর অগ্রগতি খুব কম এবং একেক দেশের সাফল্য অর্জনের হার একেক রকম। তদুপরি, কোভিড-১৯ মহামারি, অবিরাম ও ক্রমবর্ধমান সংঘাত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ও বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
“স্বাস্থ্য, খাদ্য ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে পুষ্টি সেবাকে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে সর্বাধিক সাফল্য নিশ্চিত করা যাবে। শুধুমাত্র এইভাবে আমরা কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা ও যেসকল শিশুরা এখনও মায়ের বুকের দুধ খায় সেসকল নারীদের অপুষ্টির সমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি তাদের শিশুদের ও অপুষ্টির সমস্যার সমাধান করতে পারি”, সঞ্জয় যোগ করেছেন। কিশোরী ও নারীদের পুষ্টির পেছনে পর্যাপ্ত লোকবল ও বিনিয়োগ বরাদ্দ করার জন্য তিনি দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
দরিদ্র পরিবারের কিশোরী ও নারীদের ওজন স্বল্পতায় ভোগার হার ধনী পরিবারের মেয়ে ও নারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। শহর ও গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের মধ্যে এই বৈষম্যের চিত্র আরও খারাপ।
সম্মেলন থেকে সরকারগুলোর কাছে নিন্মোক্ত দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- ফলমূল, শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার (ফরটিফাইড খাবার) সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানো, পুষ্টিহীন ও অস্বাস্থ্যকর অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয় থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নীতিমালা ও বাধ্যতামূলক আইনি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা, গর্ভধারণের আগে ও সময়ে এবং সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর সময়ে অপরিহার্য পুষ্টি পরিষেবাগুলো প্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানো, মানবিক সংকটময় সময়েও এই পরিষেবা নিশ্চিত করা, যেকোন অনিশ্চিত পরিস্থিতি ও মানবিক সংকটসহ সোশ্যাল ট্রান্সফার কর্মসূচিগুলোতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বাড়ানো এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন কে শক্তিশালী করে–এমন জেন্ডার-রূপান্তর মূলক নীতিমালা ও আইনি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা।