Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল: ভারতীয়রা কেন ট্রুডোর সাথে নেই?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৪

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল: ভারতীয়রা কেন ট্রুডোর সাথে নেই?

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ছবি: সংগৃহীত

উত্তর আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন ও গ্রুপ সেভেনের দীর্ঘদিনের সদস্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী তার দেশের পার্লামেন্টে ভারত সম্পর্কে একটি গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তখন আপনি হয়তো ভাবছেন ভারতীয়রা তার এমন বক্তব্যকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন জানাবেন! তার পক্ষেই অবস্থান নিবেন বলে আশা করছেন! পক্ষান্তরে প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের বিপরীতে ভারত দীর্ঘদিন ধরে নিজেদেরকে নিজস্ব একটি আইনী কাঠামোর মধ্যদিয়ে সুনিয়ন্ত্রিতভাবেই গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। যদিও ভারতের অর্থনীতিকে মজবুত কাঠামোর ওপর দাঁড় করাতে পশ্চিমাদের সাহায্য বেশ প্রয়োজন।

সম্প্রতি গত জুন মাসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভ্যাঙ্কুভারে শিখ-কানাডিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার সঙ্গে ভারতীয় সরকারি এজেন্টদের "সম্ভাব্য যোগসূত্র থাকতে পারে বলে যে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ এনেছেন সেটির সঙ্গে ভারতীয়রা তাদের একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। 

অন্যদিকে ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রীর এ অভিযোগকে "অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত" বলে খারিজ করে দিয়েছে। আর এরপরই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কানাডার অটোয়া থেকে বহিষ্কার করে ট্রুডো প্রশাসন। আর প্রতিশোধের বদলা নিতে একজন কানাডিয়ান কূটনীতিককেও বহিষ্কার করেছে ভারর। এমনকি কানাডাকে নয়াদিল্লিতে তার দূতাবাসের আকার কমানোর পাশপাশি কানাডিয়ান নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মোদি সরকার।

ইতিমধ্যে, ভারতীয় মিডিয়া মিঃ ট্রুডো এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে বলা যেতে পারে এক জিহাদ শুরু করে দিয়েছে। একটি নিউজ চ্যানেল অবশ্য পরামর্শ দিয়েছে যে নরেন্দ্র মোদি "কানাডাকে দুই ভাগে বিভক্ত করতে চাইছেন। আর অন্য এক অনুষ্ঠানে একজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় কূটনীতিকসহ সবাই মিঃ ট্রুডোকে একজন কোকেন আসক্ত বলে অভিযুক্ত করেছেন (যা কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরখাস্ত করেছে)। নয়াদিল্লিতে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো সুশান্ত সরীনের টুইটারে একটি মন্তব্যের সার কথা দাঁড়াচ্ছে- “যদি আমরা এটা করে থাকি, এটা ঠিক ছিল; যদি আমরা না করি, আপনি ভুল ছিলেন।"

অন্যদিকে হোয়াইট হাউজের এ বিষয়ে ভূমিকাও বেশ অন্যমাত্রার বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি কূটনৈতিক সংকীর্ণতা নিয়ে হাঁটছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এবং সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিনকেনের বিবৃতিতে পাওয়া যায়, আমেরিকা কানাডাকে কোনভাবেই ত্যাগ করবে না,আবার ওয়াশিংটন সরাসরি ভারতের সমালোচনাও করেনি।

এখন দেখবার বিষয় নাটকটি কীভাবে উন্মোচিত হতে যাচ্ছে আর তার সবটাই বলা যেতে পারে নির্ভর করছে অটোয়ার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের ভিত্তিতে। যদি কানাডিয়ান সরকার প্রমাণ করতে পারে যে, ভারতীয় এজেন্টরাই নিজ্জারের উপর গ্যাংস্টার স্টাইলে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে যা কিনা  অন্য কোন গোয়েন্দা সংস্থা বা প্রতিদ্বন্দ্বী শিখ চরমপন্থীদের দ্বারা সংঘটিত হয়নি তবে পশ্চিমের কাছে ভারতের সুনাম হুমকির মুখে পড়বে। এটিকে দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেও ফাটল ধরাতে পারে। 

কিন্তু কানাডা যদি তার দাবির পক্ষে জোরালো প্রমাণ নিয়ে আসতে না পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে মিঃ ট্রুডো সম্পর্কে সংশয় ঘনীভুত হওয়ার সুযোগ থেকে যাবে। সহজভাবে বলা যায়-ভারতীয়রা কানাডার কোনো বার্তাকে তেমন গুরুত্বের সাথে নেয় না কারণ তাদের বার্তাবাহক সম্পর্কে কম গুরুত্ব দিয়ে থাকেন ভারতীয়রা। ভারতীয় সাংবাদিক বরখা দত্তের এক উদ্ধৃতি থেকে জানা যায়, ‘মিঃ ট্রুডো ভারতের সবচেয়ে অপছন্দের বিশ্ব নেতা"।

টুঙ্কু ভারদারাজনের স্মরণীয় এক লেখার বর্ণনায় ট্রুডোকে একজন সুযোগসন্ধানী, হালকা ব্যক্তিত্বের এক রাজনীতিবিদ ও প্রচারক হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। আবার অনেক ভারতীয় এমন মন্তব্যের সাথে একাত্মতা জানিয়ে মনে করেন তিনি এমন এক রাজনীতিবিদ যিনি ভোটের জন্য এবং তার দেশের স্বার্থের জন্য নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বেশি ইচ্ছুক। 

অনেক ভারতীয় বিশ্বাস করেন, সঙ্গত কারণেই, মিঃ ট্রুডো তার দেশের বৃহৎ এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী শিখ সম্প্রদায়ের কাছে অনেকটা কুক্ষীগত। যদিও কানাডার মোট জনসংখ্যার অনুপাতে মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ (আনুমানিক ৭ লাখ ৭০ হাজার) শিখ জনসংখ্যার বাস দেশটিতে। ক্ষমতার সমীকরণে মিঃ ট্রুডোর সংখ্যালঘিষ্ঠ সরকার বামপন্থী নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির জগমিত সিংয়ের সমর্থনের ওপর কিন্তু বেশ নির্ভরশীল। একজন শিখ রাজনীতিবিদ যিনি ভারতে ব্যাপকভাবে শিখ কট্টরপন্থী হিসাবে পরিচিত এবং ২০১৩ সাল থেকে ভারত প্রবেশে যার ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। 

১৯৮০ এবং ১৯৯০ দশকে খালিস্তান নামে একটি পৃথক শিখ আবাসভূমি তৈরির জন্য একটি সহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কারণে কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জটিলতাগুলো ভারতীয় জনসাধারণের চেতনায় প্রথম উদ্ভাসিত হয়। যদিও কানাডিয়ান শিখদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিজ দেশ ভারতে তাদের আন্দোলনের সুফলতা বয়ে আনবার জন্য যথেষ্ঠ নয়। এর আগে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী নির্মমভাবে ২০ হাজারেরও বেশি শিখকে হত্যা করেছিল।

টরন্টোর গ্লোব অ্যান্ড মেইলে গত সপ্তাহে একটি অপ-এডে, ওমের আজিজ (ট্রুডোর একজন প্রাক্তন পররাষ্ট্র-নীতি উপদেষ্টা) লিখেছেন যে, "কানাডার অন্ততপক্ষে আমাদের ভূমি সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের জন্য ব্যবহার না করার নিশ্চিতের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। . . . একমাত্র সমস্যা ছিল, মিঃ ট্রুডো শিখ ভোট হারাতে চাননি।”

ভারতীয়রা বলছে কানাডার উচিত ছিল নিজ্জারকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা কারণ যেখানে তাকে সন্ত্রাসী হিসাবে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। হত্যা এবং থিয়েটার বোমা হামলা সহ নানা গুরুতর অপরাধের সাথে জড়িত ছিল নিজ্জার (যদিও এসবের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন নিজ্জার)। মিঃ ট্রুডোর সমালোচনায় ভারতীয়দের মন্তব্য হলো- এমন একটি পরিবেশে তিনি সভাপতিত্ব করেন যেখানে শিখ চরমপন্থীরা প্রকাশ্যে ভারতীয় কূটনীতিকদের হত্যার জন্য আহ্বান জানান। এর আগে ১৯৮৪ সালে শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড উদযাপনের মত ঘটনাও রয়েছে শিখদের বিরুদ্ধে। এমনকি কানাডিয়ান হিন্দুদেরকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছিল এই সম্প্রদায়। 

এরপরে কি হতে যাচ্ছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক এখনও অনেকাংশে অক্ষত হয়ে ওঠতে পারে যদি ট্রুডোর অভিযোগ অপ্রমাণিত থাকে। তবে কানাডার সাথে ভারতের সম্পর্কের শীঘ্রই যে উন্নতি হবে না এমন শঙ্কা অবশ্য দেখছেন কূটনীতিক বিশেষজ্ঞরা। অন্তত যতদিন মিঃ ট্রুডো সরকারের দায়িত্বে থাকবেন ততদিন হয়ত নয়! 

সূত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫