Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

জলবায়ু সম্মেলন: কপ-২৮ থেকে প্রত্যাশা

Icon

জাফর খান

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১০:১৫

জলবায়ু সম্মেলন: কপ-২৮ থেকে প্রত্যাশা

কপ-২৮ সম্মেলনের লোগো। ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৮ এ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্মেলন। জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের সকল রাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অদূর ভবিষ্যতে আরও কী ঘটতে পারে তা থেকে পরিত্রাণে উন্নত, উন্নয়নশীল কিংবা অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর সঠিক কর্মপরিকল্পনা কী হওয়া উচিত তা নিয়েই আলোচনা হয়ে থাকে। এর আগে কপ-২৭ সম্মেলনে প্রশমন, অভিযোজন, অর্থায়ন এবং লিঙ্গ সমতা, তরুণ প্রজন্ম এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অগ্রগতির কথা বলা হয়েছিল। 

২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু ইস্যুতে কার কী ভূমিকা থাকবে, তা উল্লেখ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বর্তমান বিশ্ব এমন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে যেখানে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু শাসনের এমন মেকানিজম তৈরি করা, যার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক স্তরে সঠিকভাবে জলবায়ু আইন প্রয়োগের সক্ষমতা ঘটানো যায়। সংকট সমাধানে জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (ইউএনএফসিসিসি) ২৭তম কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস (COP27)-এর বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা ছিল কীভাবে মিডিয়া এবং অংশগ্রহণকারীদের মাধ্যমে সম্মেলনে গৃহীত পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ঘটানো যায়।

সম্মেলনে লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান নেতিবাচক প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অবিলম্বে হ্রাস ও নির্মূল এবং আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করা। কিন্তু প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত বিশ্বের গড় তাপমাত্রা কোনোভাবেই যেন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে না ওঠে সে লক্ষ্যে এখনো পৌঁছানো যায়নি। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২০১০ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে পর্যবেক্ষণ বলছে। অথচ ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে এই হার ৪৫ শতাংশে কমিয়ে আনার কথা ছিল। ওই চুক্তিতে ১৯৩টি দেশ জাতীয়ভাবে নির্ধারিত কর্মসূচির (এনডিসি) আওতায় এ বিষয়ে কাজ করবে বলেও অঙ্গীকার করেছিল। পরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ এবং মিশরের কপ-২৭-এর আগে কিছু নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মিটিগেশন: সোনোরা পরিকল্পনা
কপ-২৭-এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে একটি ছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে দূষণকারী গ্যাস নির্গমন হ্রাসে জলবায়ু পদক্ষেপকে দ্রুত স্বীকৃতি দেওয়া এবং ফেব্রুয়ারি ২০২২-এর আন্তঃসরকারি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেল (আইপিসিসি) কর্তৃক ষষ্ঠ মূল্যায়নের প্রতিবেদন আমলে আনা। হাইড্রোকার্বন থেকে জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত এবং জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি বাদ দেওয়া ছিল এর অন্তর্ভুক্ত। 

অভিযোজন: ক্ষতি হ্রাসের বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য
প্যারিস চুক্তি মতে, অভিযোজনের ওপর বৈশ্বিক লক্ষ্য স্থাপিত হয়েছিল। অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানো, স্থিতিস্থাপকতা জোরদারসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস ও কার্যকর অভিযোজন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রচার চালানো ছিল বৈশ্বিক লক্ষ্য। কপ-২৭ সম্মেলনে দেশগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভিযোজন সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছিল। এসবের মধ্যে ছিল পর্যবেক্ষণ, যাচাইকরণ, আর্থিক সহায়তা এবং কৌশলগুলোর সঠিক সংজ্ঞা প্রণয়ন, যেটিকে নেতারা ক্রস-কাটিং নামে অভিহিত করেছিলেন। 

অভিযোজন তহবিলে ২৩০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এবং তা প্রধানত দুর্বল দেশগুলোকে দেওয়া উচিত বলেও সবার সম্মতি ছিল। এ ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে কপ-২৮-এ অভিযোজন অর্থ দ্বিগুণের বিষয়টিও বিবেচনার জন্য জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিকে একটি প্রতিবেদন তৈরির অনুরোধ জানানো হয়।

লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড 
তহবিলটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতি থেকে বাঁচাতে একটি কার্যকরী প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক এবং অ-অর্থনৈতিক খরচের গুরুত্ব বিবেচনা করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দেশ ও অঞ্চল বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের জন্য এই তহবিলের জোগান থাকবে ন্যায়বিচার ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। দেশগুলো এখনো তহবিল ছাড়ের পরিমাণ এবং উৎস নিয়ে জাতীয় সংস্থাগুলোর আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতেও এ পর্যন্ত একটি সঠিক মানদণ্ডে পৌঁছাতে পারেনি। 

জলবায়ু অর্থায়ন 
উন্নত দেশগুলোই শিল্পের বিস্তার ঘটাতে সর্বোচ্চ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী। সে কারণেই ২০০৯ সালে ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে ক্ষতি মোকাবিলায় ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। তবে প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২০ সালে উন্নত দেশগুলো মাত্র ৮৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের ব্যবস্থা করে, যেখানে ৬৭ শতাংশ প্রশমন ও ২৪ শতাংশ অভিযোজনের জন্য রাখা ছিল। 

২০২০ সাল নাগাদ ধনী দেশগুলো প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহে তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করে কপ-২৭ জলবায়ু অর্থায়নের ওপরে একটি নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের আলোচনা অব্যাহত রাখে, যা ২০২৪ সালে গৃহীত হবে ও প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল-২-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। 

কপ-২৮ ও প্রত্যাশা
৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে কপ-২৮ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বাস্তবায়ন, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ এবং অভিযোজনে অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া সামগ্রিক পরিস্থিতি কী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মেকাবিলায় কতটুকু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে একটি রেজ্যুলেশন গ্রহণ করা হবে। এতে রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে নতুন অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫