রয়টার্স বিশ্লেষণ: এপেক ২০২৩ সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন ও বাইডেন-শি বৈঠক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৫৪

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ফাইল ছবি
বুধবার (১৫ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এশিয়া প্যাসিফিক কো-অপারেশন ফোরাম (এপেক) উপলক্ষ্যে সানফ্রান্সিসকোতে এক বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছেন। মূলত দুই দেশের মধ্যে চলমান বিদ্বেষমূলক সম্পর্কের অবসান ঘটাতে এমন সাক্ষাৎ হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিধর দুই দেশ শক্তিধর অবস্থানে রয়েছে গত কয়েক দশক ধরে। এর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ছয়বার একঘণ্টা নিজেদের মধ্যে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে শি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সানফ্রান্সিস্কোতে পৌঁছেছেন। এর আগে ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর শি যুক্তরাষ্ট্রে আর তার সফরসূচী রাখেননি।
কী নিয়ে কথা হতে পারে?
হোয়াইট হাউস বলছে, সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরীয় অঞ্চলে একটি অঘোষিত স্থানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য হল প্রতিদ্বন্দ্বিতা যাতে কোনোভাবেই সংঘাতে পরিণত না হয়। আর এটিকে মাথায় রেখেই উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে এই বৈঠকের আয়োজন। বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত থেকে শুরু করে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন, রাশিয়ার সঙ্গে তাইওয়ান ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক, মানবাধিকার ইস্যু, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। এছাড়াও ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক কীভাবে স্থাপন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে বাইডেন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ও অংশীদারদেরদের পাশে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী থাকবে বলেও শিকে জানাবেন। গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরের কাছে অবস্থিত তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনের চাপের বিষয়টিও তুলে ধরবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এছড়াও ফিলিপাইনের নিরাপত্তার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকারও প্রকাশ করবেন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আমরা কী আশা করতে পারি?
হোয়াইট হাউস বলছে, ওয়াশিংটন এসব বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান আশা করছে। একইসঙ্গে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়েও অগ্রগতির আশা রাখছে ওয়াশিংটন।
এছাড়াও শক্তিশালী সিন্থেটিক ওপিওড ড্রাগ ফেন্টানাইলের বাণিজ্য নিষিদ্ধকরণের বিষয়েও উভয় দেশ এক হবে বলে আশা যুক্তরাষ্ট্রের। ফেন্টানাইল ইস্যুতে একমত হলে ওয়াশিংটন চীনের পুলিশ ফরেনসিক ইনস্টিটিউটের ওপর থেকে মানবাধিকার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে বলেও জানায় ওয়াশিংটন।
এর আগে মঙ্গলবার বাইডেন উভয় দেশের মধ্যে সামরিক যোগাযোগসহ চীনের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের লক্ষ্যে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে এ আলোচনায় ২০২৪ সালের শুরুতে তাইওয়ানের নির্বাচনের সময় দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা না দেয়া এবং দেশটির স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়েও চীনের সহযোগিতার বিষয়টি ওঠে আসবে বলে আশা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে শি জিনপিং, বাইডেনকে শুল্ক এবং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ইস্যুগুলো সহজীকরণের বিষয়ে সমর্থন আদায়ে সক্ষম হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে একটি পৃথক নৈশভোজে চীনা রাষ্ট্রপতির অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়াও উভয় নেতা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ফ্লাইট কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে তাদের পরিকল্পনাও তুলে ধরতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে। নীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে সাংবাদিক ভিসার উপর বিধিনিষেধ তুলে সেটিকে আরও সহজ করা দরকার যাতে করে উভয় পক্ষই সুবিধা নিতে পারে।
এদিকে বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ইস্যুতে ইরানের সাথে চীনের প্রভাব ব্যবহার না করতে অনুরোধ করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটন সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির রিচার্ড ফন্টেইন বলেন, সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা এমনটা আশা করছি না যাতে করে কোন বড় দর কষাকষিতে জড়িয়ে উভয় দেশের মধ্যে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। আমরা দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতা ও উত্তেজনার একটি স্থায়ী সমাধান চাচ্ছি।
বাণিজ্য ক্ষেত্রে এই বৈঠক কতটা প্রভাব ফেলবে?
বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দুই সরকারের মধ্যে কী ধরণের আলোচনা হতে পারে সেদিকে গভীর মনোযোগ রাখবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
২১ টি দেশ নিয়ে গঠিত এই এপেক সম্মেলনে মার্কিন-চীন উত্তেজনা প্রশমনে বিশ্ব অবশ্য দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অগ্রগতি হলে এটিকে ইতিবাচকভাবেই দেখবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্থায়ী মেয়াদে অগ্রগতি হলেও হতে পারে।