গবেষণা: সাত বছরেই বিশ্ব তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি ছাড়াবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৫৪

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বিশ্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। ছবি: সংগৃহীত
ভবিষ্যতের জন্য চিরতরে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধে ও গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য দুবাইতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন। এই সম্মেলে সবাই পৃথিবী থেকে কার্বন নিঃসরণের জন্য মানবসৃষ্ট কারণকেই দাবি করছে। আর সবাই মিলে সহমত ও একতার ভিত্তিতে কীভাবে কার্বন নিঃসরণ পুরোপুরি বন্ধ করা যায় সে লক্ষ্যে চুক্তিতে পৌঁছাতেও রয়েছে তৎপর।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, গত বছরে বিশ্বজুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ বেড়েছে ১.১ শতাংশ। কার্বন নিঃসরণের দিক থেকে ভারত ও চীন যথাক্রমে প্রথম ও তৃতীয় অধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশ। এদিকে বিজ্ঞানীরা জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক কপ–২৮ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলোকে এখন থেকেই কয়লা, তেল ও গ্যাস দূষণের জন্য কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে জোর আহ্বান জানিয়েছেন।
জলবায়ুবিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ৫০ শতাংশ জোর সম্ভাবনা এখনও রয়েছে যদি প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে একাধিক বছরে অতিক্রম করা সম্ভব। তবে তারা নন-কার্বন সংক্রান্ত গ্রিনহাউস গ্যাস থেকে উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়টিতে অবশ্য তাদের অনিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের ফ্রায়েড লিংসটেইন জানিয়েছেন, বিষয়টি দিন যত যাচ্ছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সময় ও ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার বিষয়টি সংকুচিত পথে হাঁটছে। তাই আমাদের সুযোগ রয়েছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা অন্তত এটির কাছাকাছি অবস্থান করা। আর তা করতে হলে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।
তবে অনেকটা উচ্চাভিলাষী ১.৫ ডিগ্রির লক্ষ্যটি বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ এটির উর্ধ্বে বিশ্ব উষ্ণতা বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আর তা ছাড়িয়ে গেলে আআমদের জন্য অপেক্ষামান রয়েছে চরম বিপদ সংকুল পথ। জাতিসংঘের আইপিসিসি জলবায়ু বিজ্ঞান প্যানেল বলছে, এ লক্ষ্যমাত্রায় বিজয় আনতে চাইলে এ মুহুর্তে পৃথিবী থেকে কার্বন নির্গমন এই দশকেই অর্ধেক করতে হবে। আর গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টে দেখা গেছে, নির্গমন ক্রমাগত বাড়তে থাকায় বিষয়টি আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে।
‘CICERO’ বা সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট রিসার্চের জ্যেষ্ঠ গবেষক গ্লেন পিটার্স জানান, প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরকালীন সময়ের তুলনায় বর্তমানে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের হার ছয় শতাংশ বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘’বিষয়গুলো সম্পূর্ণ ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে।‘’
পিটার্স আরও বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতিশ্রুতিশীল বৃদ্ধি সত্ত্বেও, দুবাই জলবায়ু সম্মেলনের প্রধান ইস্যু হল, এই দশকের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার তিনগুণ বাড়াতে। আর এ লক্ষ্যে ১০০ টিরও বেশি দেশ এ আহবান জানিয়েছে।
"সৌর বায়ু, বৈদ্যুতিক যানবাহন, ব্যাটারিচালিত যানের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও আক্ষরিক অর্থে এটি কেবল অর্ধেক গল্প‘’ বলেও দাবি পিটার্সের।
অন্যদিকে চীন, যা বৈশ্বিক নির্গমনের প্রায় এক তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী, চলতি বছর জীবাশ্ম জ্বালানীর ফলে দেশটি চার শতাংশ কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি করবে বলে আশংকা গবেষকদের।
ইতোমধ্যে ভারতে আট শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে আর এর অর্থ হল দেশটি এখন তৃতীয় বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানী নির্গমনকারী হিসাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে অভিমত বিজ্ঞানীদের। এ বিষয়ে পিটার্স বলেছেন, ভারত ও চীন উভয় দেশেই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। ফলে উল্লেখযোগ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
আর এভিয়েশন খাত থেকে এই বছর কার্বন নিঃসরণের হার ২৮ শতাংশ বেড়েছে বলে একটি গবেষণা সম্প্রতি ‘আর্থ সিস্টেম সায়েন্স ডেটা’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ১.২ ডিগ্রি পর্যন্ত উষ্ণতার ফলে ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহ, দাবানল, বন্যা এবং ঝড় দেখতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে।
চলতি বছর ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলছে, ২০২৩ সালটি অক্টোবরের মধ্যে প্রাক-শিল্পযুগের বেঁধে দেয়া তাপমাত্রা থেকেও ১.৪ ডিগ্রি বেশি ছিল।
সূত্র: ফ্রান্স২৪