লোহিত সাগরে মারস্ক কোম্পানির একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজে ইরান-সমর্থিত হুতি গোষ্ঠী আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়ার সময় মার্কিন বাহিনী হেলিকপ্টারযোগে অভিযান চালিয়ে আক্রমণ প্রতিহত করেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এসময় হুথিদের তিনটি নৌকা ডুবিয়ে দেয় মার্কিন বাহিনী। অভিযানে হুতিদের ১০ সদস্যকে হত্যার বিষয়ে মার্কিন বাহিনী, মারস্ক কোম্পানি ও হুতি সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

রবিবার গ্রীনিচ সময় সাড়ে ৩ টায় এই নৌ যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। মারস্ক এবং ইউএস কেন্দ্রীয় কমান্ড জানিয়েছে, সশস্ত্ররা সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ‘মারস্ক হ্যাংজুতে’ আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় ‘ইউএসএস আইজেনহাওয়ার’ এবং ‘ইউএসএস গ্রেভলি’ মডেলের যুদ্ধ হেলিকপ্টার আক্রমণ প্রতিহত করতে ঘটনাস্থলে এসে জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। 

মারস্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, হামলার সময় ৪৮ ঘন্টার জন্য লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে সকল নৌযানের চলাচল স্থগিত করা হয়।

এদিকে হুতিদের এক মুখপাত্র বলেন, জাহাজের ক্রুরা আমাদের দেয়া সতর্কতামূলক নির্দেশনা মানতে অস্বীকৃতি করায় গোষ্ঠীটি এই হামলা চালিয়েছে। এসময় তিনি লোহিত সাগরে তাদের নৌকায় মার্কিন বাহিনীর হামলার ফলে ১০ হুতি সদস্য "মৃত ও নিখোঁজের" বিষয়টি স্বীকার করেন। 

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক আন্তঃসীমান্ত হামলার পর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল অবিরাম গোলাবর্ষণ শুরু করে। জবাবে ইয়েমেনের হুতিরা হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজ লক্ষ্য হামলা শুরু করে। হুতিরা পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে সুয়েজ খালের পরিবর্তে দীর্ঘ ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল রুট হিসেবে পরিচিত আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপের মধ্যদিয়ে চলাচলের জন্য বার্তা দিয়ে আসছিল। 

লোহিত সাগরে সুয়েজ খাল ব্যবহার করে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য প্রায় ১২ শতাংশ পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে থাকে, যা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য অত্যাবশ্যক।

এর আগে ১৯ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ান’ নামে অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানায়। এই অভিযানে ২০টিরও বেশি দেশ ইয়েমেনের কাছে লোহিত সাগর দিয়ে যাতায়াতকারী জাহাজগুলোকে সুরক্ষা দিতে অংশ নিবে বলা জানানো হয়।

বিশ্বের শীর্ষ পণ্যবাহী জাহাজের প্রতিষ্ঠান মারস্ক ২৪ ডিসেম্বর জানায়, তারা লোহিত সাগর দিয়ে আবারও যাত্রা শুরু করবে। 

এদিকে হুতি পরিচালিত হামলার কয়েক দিনের মধ্যে ‘মারস্ক হ্যাংজুতে’ দ্বিতীয় হামলা ছিল গোষ্ঠীটির। জাহাজটি সিঙ্গাপুর থেকে ১৪ হাজার কন্টেইনার বহন করে আসার সময় শনিবার ইয়েমেনের আল হোদেইদাহ থেকে প্রায় ৫৫ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম হতে ছোঁড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের সম্মুখীন হয়। 

তবে এ হামলায় জাহাজের ক্রুরা নিরাপদ ছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি জাহাজটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেনি। পরে উত্তরে সুয়েজ খালের দিকে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি।

এদিকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি এবিসি-র "গুড মর্নিং আমেরিকা"-অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, "আমরা হুতিদের কাছে এটি স্পষ্ট করেছি- আমরা এই অঞ্চলে আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের ওপর চালানো হামলার হুমকিগুলো গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি।"

অন্যদিকে ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব গ্রান্ট শ্যাপস লিখেছেন,"আমরা সরাসরি পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক, এবং লোহিত সাগরে নৌ চলাচলের স্বাধীনতার হুমকি রোধ করতে আমরা আরও পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করব না।"

এর আগে রবিবার, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ক্যামেরন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ানকে টেলিফোন বার্তায় লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা বন্ধে সহায়তার আহবান জানান। সূত্র: রয়টার্স