
প্রতীকী ছবি।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইরান থেকে রাশিয়া হয়ে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত অন্তত ৫০ দেশে ২০২৪ সালে নির্বাচন (প্রেসিডেন্ট অথবা পার্লামেন্ট) নির্বাচন হবে (বা হওয়ার কথা)। এই দেশগুলোতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বাস করে। এই দেশগুলোর মোট ভোটারের সংখ্যা ২শ কোটির ওপর বলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেস জানিয়েছে। সার্কের আটটি দেশের মধ্যে পাঁচটিতেই এ বছর নির্বাচন হবে।
তাইওয়ানে ১৩ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির সাই ইংওয়েন এবার প্রার্থী হতে পারছেন না। পরিবর্তে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই চিং তে দলের পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার প্রতিপক্ষ কুয়োমিন্টাং পার্টির হোউ ইইউ ইহ এবং তাইওয়ান পিপলস পার্টির কো ওয়েন জে। কুয়োমিন্টাং ও পিপলস পার্টি যৌথভাবে একক পার্টির দেওয়ার কথা ভাবলেও শেষ পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি।
শ্রীলঙ্কায় সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। এতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ক্ষমতাসীন রনিল বিক্রমাসিংহে ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার মধ্যে। অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্রতর হওয়ায় দুই বছর আগে দেশটিতে রাজনৈতিক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছিল।
রাশিয়ায় মার্চের ১৫ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটি রাশিয়ার অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে ৭ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ হতে পারে। এতে ক্ষমতাসীন ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নিকোলাই খারিতোনভের মধ্যে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ৫ নভেম্বর। এতে বর্তমান ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়বেন। অন্যদিকে রিপাবলিকান শিবিরে একজন্য প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চলবে তোড়জোড়। জুনের প্রথম সপ্তাহেই প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত হবে। দেশটি ভোটারের সংখ্যা এবার ১৬ কোটি। এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানের মতো প্রথাগত দুটি প্রধান দল ছাড়াও লিবারেটারিয়ান ও গ্রিন পার্টির মতো কিছু দল অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে অল্প সময়ের ব্যবধানে কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তন ঘটার পর ঋষি সুনাক এক বছরের বেশি সময় এই পদে আছেন। দেশটিতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারিত সময়সীমা ২০২৫ সালের ২৮ জানুয়ারি। তবে ঋষি গত মাসে ঘোষণা করেন যে ২৪ সালের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করবেন। এবারের নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আসনের সীমা নতুন করে নির্ধারণ করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে ডিসেম্বরে এই নির্বাচন হতে পারে। এর আগে যুক্তরাজ্যে নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে কনজারভেটিভ পার্টির বরিস জনসন সরকার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার প্রতিপক্ষ ছিলেন লেবার পার্টির জেরেমি করবিন। এবার ঋষি সুনাকের প্রতিপক্ষ হতে পারেন লেবার দলীয় কিয়ের স্ট্যামার। ব্রেক্সিটের পর এটি ব্রিটেনের প্রথম সাধারণ নির্বাচন। তাছাড়া ব্রিটেনের এই নির্বাচন হবে মার্কিন নির্বাচনের ঠিক পরপরই। তাই মার্কিন নির্বাচনের একটি প্রভাব এর ওপর পড়তে পারে।
ভারতে সাধারণ নির্বাচন যথারীতি এপ্রিল-মে মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা চ্যাথাম হাউসের তথ্য অনুযায়ী যা বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচন। ১৪০ কোটি জনঅধ্যুষিত দেশটিতে ভোটারের সংখ্যা ৯০ কোটি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা করছেন। গত বছর অনুষ্ঠিত কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ভালো ফল করেছে। জনসংখ্যার হিসেবে দেশটি ২০২২ সালে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। তা ছাড়া ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী মেক্সিকোতে ২ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। মার্কিন গবেষণা সংস্থা উইলসন জানিয়েছে, দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী ছয় বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রধান প্রার্থীই নারী। তারা হলেন ক্লাদিয়া শেইনবাম পারদো, যিনি বর্তমানে মেক্সিকো সিটির মেয়র এবং সাবেক সিনেটর জোচিটল গালভেজ।
জুনের ৬ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন। ২৭ জাতি জোট ইইউর ৪০ কোটির ওপর ভোটার নির্বাচন করবে ৭২০ জন সদস্যকে। যেহেতু নির্বাচনটি অনেকগুলো দেশ মিলে আয়োজন করা হয়। তাই একে বলা যায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ বহুজাতিক নির্বাচন।
পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও নির্বাচনটি গত বছর হওয়ার কথা ছিল। তেহরিক-ই-ইনসাফ, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত জনসমর্থনের চিত্রটি ছিল তেহরিক ইনসাফ ৩২, মুসলিম লীগ ২৪ ও পিপলস পার্টি ১৩ শতাংশ। ইমরান খান কারগারে থাকায় গওহর আলী খান দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দুবছর ধরে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সঙ্কট তো আছেই। এই প্রেক্ষাপটে দেশটিতে এই নির্বাচন হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ নির্বাচনের দিকেও এবার সবার দৃষ্টি থাকবে। বর্ণবাদ অপসারণের পর ১৯৯৪ সাল থেকে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) হাতেই ক্ষমতা রয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন এই দল থেকে নির্বাচিত দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। দীর্ঘকাল একটি দল ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ ভোটাররা পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সেখানে কোনো দলের পক্ষেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব হবে না, কোয়ালিশন সরকার হতে পারে বলে ব্লুমবার্গ পরিচালিত জনমত জরিপে জানা গেছে।
চলতি বছর আরও যেসব দেশে বা ভূখণ্ডের নির্বাচনের কথা রয়েছে:
এশিয়া : ভুটান, ইরান, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মঙ্গোলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া।
ইউরোপ : অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বেলজিয়াম, বেলারুশ, বসনিয়া-হার্জেগোভিনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, জর্জিয়া, আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, মলদোভা, পর্তুগাল, নর্থ মেসেডোনিয়া, মাল্টা, পোল্যান্ড, রুমানিয়া, সান মারিনো, স্লোভাকিয়া ও স্পেন।
আফ্রিকা : আলজেরিয়া, বতসোয়ানা, শাদ, কমোরোস, ঘানা, মৌরিতানিয়া, মোজাম্বিক, মরিশাস, নামিবিয়া, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সোমালিল্যান্ড, সাউথ সুদান, তিউনিসিয়া ও টোগো।
দুই আমেরিকা : কানাডা, এলসাভাদর, ডোমিনিকান রিপাবলিক, পানামা, উরুগুয়ে, ব্রাজিল ও ভেনেজুয়েলা।
ওশেনিয়া : পালাউ।