
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। ছবি: সংগৃহীত
গাজায় সামরিক তৎপরতাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে কি না, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) সে সিদ্ধান্ত দেবে।
আজ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। এই আদেশ বিশ্বজুড়ে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইতোমধ্যে আইসিজে বলেছেন, গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলায় শুক্রবারের রায় হবে যুগান্তকারী।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে গাজায় আক্রমণ শুরু করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। আজকের রায়ে আইসিজে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীকে দ্রুত সামরিক তৎপরতা বন্ধের আদেশ দিতে পারেন। তবে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে কি না, সে প্রশ্নের সুরাহা আজ করবে না আইসিজে। শুধু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। গণহত্যা বিষয়ে রায় দিতে আরো সময় লাগবে বলে জানা গেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিজের দেওয়া আদেশ দেশটির ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াবে।
গত ডিসেম্বরে আইসিজেতে মামলাটি করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিষয়টি চলতি মাসের শুরুর দিকে আইসিজেতে দুই দিনের শুনানি হয়। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেন। জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আদালতের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ ঘোষণা করা জরুরি বলেও তারা উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, গাজায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরই বেশি নারী ও শিশু। দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে মোট ৯টি আরজি জানিয়েছে। গাজায় সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ স্বাভাবিক রাখতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থা আইসিজে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত এই আদালত দুই দেশের মধ্যে বিরোধ মেটাতে পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। আইসিজের দেয়া সিদ্ধান্ত মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তা মানার জন্য কোনো দেশের ওপর খুব কম শক্তিই খাটাতে পারেন এই আদালত। আইসিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, আইসিজের আদেশ তিনি মানার বাধ্যবাধকতা অনুভব করেন না। এর আগে ১৪ জানুয়ারি টেলিভিশনে প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কেউ আমাদের থামাতে পারবে না—দ্য হেগ নয়, শয়তানের অক্ষ নয়, অন্য কেউ নয়।’ ওই বক্তব্যে ‘দ্য হেগ’ বলতে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) কথা বুঝিয়েছেন নেতানিয়াহু। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোটকে ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ বলে ডাকা হয়। যাকে ‘শয়তানের অক্ষ’ বলেছেন নেতানিয়াহু।-সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান