
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত সপ্তাহে চীনে যান। বেইজিংয়ে তিনি ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত ২৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন স্থিতিশীলতা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ-এই দুটির একটিকে বেছে নেওয়ার মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ, দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কে টান টান উত্তেজনা চলছে। উত্তেজনা প্রশমনের মিশন নিয়ে ব্লিঙ্কেন গত বছর জুনের পর আবার চীনে গেলেন। ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত এ সফরে তিনি প্রথমে সাংহাই ও পরে বেইজিং যান।
উল্লেখ্য, ব্লিঙ্কেনের চীন সফর শুরুর দিনটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শর্ত সাপেক্ষে চীনা সামাজিক মাধ্যম টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। সাংহাইয়ের দিওয়াওতাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়। ওয়াং প্রশ্ন রাখেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতামূলক অবস্থান অথবা একটি অনিশ্চয়তার পথ বেছে নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘চীন-মার্কিন সম্পর্ক এখন স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।’ তিনি এমন এক সময় কথাগুলো বলেন যখন জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র চীনা প্রযুক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে বেইজিংয়ের নীতি নির্ধারণী মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বাইডেন ২৪ এপ্রিল যে বিলটি সই করেন তাতে বলা হয়েছে, টিকটকের স্বত্বাধিকারী চীনা কোম্পানি বাইটডান্স টিকটক বিক্রি না করলে সেটা পুরো যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হতে পারে।
ব্লিঙ্কেন তার বক্তব্যে বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে উভয় দেশের ‘অভিন্ন দায়’ রয়েছে। আমি আশা করি যেসব ইস্যুতে আমাদের দুই দেশের প্রেসিডেন্ট একমত হয়েছে সে ব্যাপারে অগ্রগতি অর্জিত হবে। এ ছাড়া যেসব ইস্যুতে আমরা ভিন্নমত পোষণ করি সেসব বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন। গত নভেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ায় এক সম্মেলনে বাইডেনের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হয়েছিল। ব্লিঙ্কেন এবারের সফরে রাশিয়ার প্রতি সমর্থনের রাস টেনে ধরার আহ্বান জানান। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রুশ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতার বিষয়ে বেইজিংকে সতর্ক করেছেন ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, বেইজিং যেভাবে রাশিয়ার শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করছে তার ফলে শুধু ইউক্রেন নয়, পুরো ইউরোপের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে।
চীন-মার্কিন সম্পর্কে চড়াই-উতরাই নতুন কিছু নয়। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর দুদেশের সম্পর্ক প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর একের পর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে; কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। এর অন্যতম কারণ চীন। দুই দেশের মধ্যে অতীতে সম্পর্কে এতটা উষ্ণতা না থাকলেও এই যুদ্ধ রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, ইরান ও বেলারুশের মধ্যে নতুন এক বলয় তৈরি করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্প চাঙ্গা রাখতেও ভূমিকা রেখে যাচ্ছে এ দেশগুলো। এদের সবার চেয়ে এগিয়ে আছে চীন। সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলার পর ইরানের প্রভাব খর্ব করতে চীন ভূমিকা রাখতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। তবে এ ক্ষেত্রে বেইজিং আদৌ কোনো ভূমিকা পালন করবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গেছে।