জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ভোট দিলো যে ৯ দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ১৫:৫৬

জাতিসংঘ। ছবি সংগৃহীত
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় নিরীহ সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত ও বাস্তুহারা হয়েছেন অগণিত ফিলিস্তিনি। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন বলে মনে করেন বিশ্বের শান্তিকামী রাষ্ট্রগুলো।
সেই লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার (১০) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে পাশ হয় ফিলিস্তিনকে সদস্যপদ দেয়ার প্রস্তাব। প্রস্তাবে ফিলিস্তিনকে সদস্যপদ দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে সুপারিশ করা হয়।
সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি দেশের মধ্যে এ প্রস্তাবনার পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪৩টি দেশ। আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৯টি দেশ। এ ছাড়া ভোট প্রদানে বিরত ছিলো ২৫টি দেশ।
ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ভোট দেয়া দেশের মধ্যে আছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য দেশ হলো- আর্জেন্টিনা, চেচনিয়া, হাঙ্গেরি, ইসরায়েল, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পলাউ ও পাপুয়া নিউগিনি। আর হাজার হাজার নিরীহ মানুষের হত্যাতেও টনক নড়ছে না ইউরোপীয় ২৫টি দেশের। তারাও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকে।
ফিলিস্তিনকে কার্যত রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ারই পদক্ষেপ এটি। গত মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রচেষ্টা ভেস্তে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে। সাধারণ পরিষদে ভোটের এই ফলে ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ না পেলেও ভূ-খণ্ডটি এই বিশ্ব সংস্থায় যোগ দেয়ার যোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল।
ফিলিস্তিন বর্তমানে জাতিসংঘ সদস্য না হলেও ২০১২ সালে তারা জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পেয়েছে। জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য ফিলিস্তিন বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তাদের এ প্রত্যাশার সঙ্গে দিন দিন বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমর্থন বাড়ছে।
প্রস্তাব পাশের পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে দেশটির নিরাপত্তা, সীমানা ও জেরুজালেমের ভবিষ্যতসহ মূল সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে পূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধিতা করে যাবে। তবে একই সঙ্গে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ খুঁজতে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যাবে তারা।
এদিকে প্রস্তাব পাশের পর ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, প্রস্তাব পাস হওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও অধিকারের পক্ষে রয়েছে। একই সঙ্গে তারা দখলদার ইসরায়েলের বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবের ওপর এত দেশের সমর্থনের বিষয়টির কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ ‘আধুনিক নাৎসিদের’ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পুরস্কৃত করতে চাচ্ছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেয়ার সময় কেউ ৭ অক্টোবরের (হামাসের) হামলার ঘটনা বিবেচনায় রাখেননি।
তিনি আরও বলেন, আজকে যদি সাধারণ ভোটাভুটিই চূড়ান্ত রায় হতো, তবে হামাস জিতে যেত। এতে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে কর্মকাণ্ড চালাতে হামাসকে সুযোগ করে দেয়া হতো।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে প্রথমে সংস্থাটির ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে একটি পাস হতে হয়। এরপর সেটি সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস হবে। তারপর প্রস্তাবটি আবার নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হয়। এ সময় ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেটি আটকে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।