লোকসভার চতুর্থ দফায় সহিংসতা, ভোটের হার বাড়েনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৯:০৯

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার (১৩ মে)। বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্য দিয়ে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরসহ ৯ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯৬টি আসনে এ ভোট গ্রহণ হয়। এই দফায় ভোট পড়েছে ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন আসনে সহিংসতা ঘটেছে। ভোটের আগের রাতে এক তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী নিহত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, বিজেপি ১৯৫ আসনের বেশি পাচ্ছে না। ইন্ডিয়া জোট পাবে তিন শতাধিক আসন।
শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে কাশ্মীরে। সেখানে বিজেপি এবার প্রার্থী দেয়নি। তবে সেখানেও ক্ষমতাসীণ বিজেপির বিরুদ্ধে সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগের অভিযোগ তুলেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা।
ভারতশাসিত জন্মু-কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লাহ বলেছেন, ভোটের আগে তাঁর দলের নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন মেহবুবা মুফতিও। এবার কাশ্মীরে কোনো প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। রাজনীতি বিশেষজ্ঞ খ্রিস্টোফার স্নেডেন বলেন, হারের ভয়ে প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন দলটি।
গতকাল উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, বিজেপি সরকারের মন্ত্রী গিরিরাজ সিং, তেলেঙ্গানায় এআইএমআইএমের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে। তবে সবার দৃষ্টি ছিল পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বীরভূম ও বোলপুর আসনে ভোট হয়। বহরমপুরে হেভিওয়েট প্রার্থী কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, রানাঘাটে বিজেপির জগন্নাথ সরকার, বর্ধমান পূর্ব আসনে বিজেপির সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়া, বর্ধমানের দুর্গাপুরে বিজেপির দিলীপ ঘোষ, বোলপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের অসিত মাল, কৃষ্ণনগরে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র, আসানসোলে তৃণমূল কংগ্রেসের শত্রুঘ্ন সিনহা, বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের শতাব্দী রায়ের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে।
চতুর্থ দফায় সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে ৭৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর পরই আছে মধ্যপ্রদেশ। সেখানে ৬৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীর ও মহারাষ্ট্রে ভোট পড়েছে যথাক্রমে ৩৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও ৫২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বিহারে এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ১৪ ও উত্তরপ্রদেশে ৫৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশে ৬৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, ঝাড়খণ্ডে ৬৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, উড়িষ্যায় ৬২ দশমিক ৯৬ শতাংশ ও তেলেঙ্গানায় ৬১ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
দক্ষিণ ভারতের হায়দরাবাদে বিজেপি প্রার্থী মাধবী লতার বিরুদ্ধে জোর করে এক মুসলিম ভোটারের নেকাব খুলে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে জানান, মাধবীর বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন ও নির্বাচনী আইন ভঙ্গের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হয়েছে। মাধবী ওই আসনে আসাদউদ্দীন ওয়াইসির বিরুদ্ধে লড়ছেন।
কলকাতা প্রতিনিধি জানান, পশ্চিমবঙ্গে রোববার রাতে ভোটকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এক তৃণমূল কর্মী নিহত হন। পূর্ব বর্ধমান জেলায় বাড়ি ফেরার সময় দুর্বৃত্তরা মিন্টু শেখ নামের ওই কর্মীর ওপর হামলা চালায়। দুর্গাপুরে তৃণমূলের পোলিং ক্যাম্পে হামলার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। এতে কয়েকজন তৃণমূল কর্মী আহত হয়েছেন। বহরমপুর লোকসভা আসনের নওদা বিধানসভা এলাকার মাড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের দলুয়া গ্রামের তৃণমূল কর্মী মোহাম্মদ হাসিবুলের কান কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কালনায় বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে।
নির্বাচনের ব্যাপারে আসামের গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অখিল রঞ্জন বিশ্বাস আলজাজিরাকে বলেন, এবার ক্ষমতাসীন জোট কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি এক মাস আগের কথাও বলেন, তাহলে দেখবেন, সবাই বলছেন– বিজেপি ভূমিধস বিজয় পাবে। কারণ, সরকার বেশ কিছু বিষয় নিয়ে এসেছিল। এর মধ্যে আছে– নতুন সংসদ ভবন, রামমন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা, সফল চন্দ্রাভিযান। কিন্তু এখন দেখেন, চতুর্থ দফায় এসে মনে হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের জয়ী হওয়াটাই কঠিন হয়ে উঠেছে।’ বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এর পেছনে দায়ী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বার্তা সংস্থা এপি লিখেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১০ বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর দেশটির রাজনীতির পুরো নিয়ন্ত্রণ নিলেও দক্ষিণের ধনাঢ্য রাজ্যগুলোতে তা পারেননি। দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্যে ভারতের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বসবাস। এ রাজ্যগুলো দেশটির অর্থনীতিতে ৩০ শতাংশ ভূমিকা রাখে। এসব রাজ্যের একটিও নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নিয়ন্ত্রণে নেই।