
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ফাইল ছবি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বেইজিং পৌঁছেছেন। পঞ্চম দফায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর পুতিনের এটাই প্রথম বিদেশ সফর। সফরকালে পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। দুই দেশের সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন করবেন তারা। খবর বিবিসির।
ধারণা করা হচ্ছে, পুতিনের এ সফরে দুই দেশ বহু চুক্তির ঘোষণা দেবে। তবে চুক্তির বাইরেও পুতিনের এ সফর বিশ্ব রাজনীতিতে ভিন্নমাত্রা ও গুরুত্ব বহন করছে। তাই পুতিনের এই সফরের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন পশ্চিমা বিশ্ব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার প্রতি যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সমর্থন রয়েছে এবং পুতিন যে নতুন মেয়াদেও শির মতো শক্তিশালী রাজনৈতিক মিত্রকে পাশে পাচ্ছেন তা ফুটে উঠবে গোটা বিষয়টির মধ্য দিয়ে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, পুতিনের দুই দিনের সফর পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তার ও শির মধ্যকার সীমাহীন অংশীদারত্বের বিষয়টি তুলে ধরবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার (১৫ মে) পুতিনের সফর সম্পর্কে নিশ্চিত করা হয়। জানানো হয়, শি ও পুতিন ‘অভিন্ন উদ্বেগের আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুগুলো নিয়ে’ মতবিনিময় করবেন।
কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিন রাশিয়ার যুদ্ধকালীন অর্থনীতির জন্য শির কাছে সমর্থন চাইবেন। নিজ সামরিক শিল্পের জন্য যন্ত্র থেকে শুরু করে রাসায়নিক পদার্থ চাইবেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক রুশ কর্মকর্তা জানান, ‘চীন ও রাশিয়া কৌশলগত অংশীদার– এই পথটিই বেছে নিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও চীনের নেতা। কোনো কিছুই সেটি পরিবর্তন করতে পারবে না, পশ্চিম যা-ই বলুক বা করুক না কেন।’
চীনের সংবাদ সংস্থা শিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গত বুধবার পুতিন জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানে চীন যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিকল্পনা করেছে, সেটিতে সমর্থন রয়েছে তার। কারণ বেইজিং জানে এর নেপথ্যের কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। পুতিন বলেন, ‘বেইজিংয়ে তারা এটির মূল কারণ ও বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অর্থের বিষয়টি বুঝে।’
এবারের সফরে পুতিন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা নিয়ে আলোচনা করবেন। এ ছাড়া তিনি হারবিন শহর সফর করবেন। চীনের উত্তর-পূর্বের ওই শহরটির সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার সংযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
গত মাসের শেষ ভাগে বেইজিংয়ে সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও। সে সময় তিনি রাশিয়াকে সামরিক সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়্যাং ই-কে সতর্ক করেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, সীমাহীন সম্পর্কের ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়াকে অস্ত্র বা গোলাবারুদ দেয়নি চীন। মাঝে গুঞ্জন উঠেছিল, চীনের বিভিন্ন ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কর্মকর্তারা গত মাসে জানান, তাদের এখনো এ রকম কোনো পরিকল্পনা নেই।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়াকে পাশে পেতে চাইছেন পুতিন। এ প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আলেক্সান্ডার নেইল বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে পুতিন ইউক্রেন ইসুতে চীনের সহায়তা পেতে চাইবেন।’ ওয়াশিংটনের দিক থেকে কোনো সমস্যা তৈরি না করে চীন এ বিষয়ে কী করতে পারে, সেটি এ সফরের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হবে বলেও উল্লেখ করেন নিল।
সূত্র: রয়টার্স