Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

মোদির ‘অবতার’ প্রচারণার নেপথ্যে

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪, ১৯:৩৯

মোদির ‘অবতার’ প্রচারণার নেপথ্যে

‘ঈশ্বরের দূত’ দাবিদার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিভিন্ন সময়ে তার দলীয় নেতা-কর্মীরা দেবতা বা দেবতার ‘অবতার’ বলে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্র বিজেপির মুখপাত্র অবধুত ওয়াঘ টুইট বার্তায় লেখেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রভু বিষ্ণুর ১১তম অবতার।’ 

তবে উড়িষ্যায় বিজেপি বিপাকে পড়েছে তাদের মুখপাত্র ও পুরি কেন্দ্রের প্রার্থী সম্বিত পাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্য। সম্বিত গত কয়েক বছর ধরেই মোদিকে ‘ঈশ্বরের অবতার’ দাবি করে আসছিলেন। 

সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘প্রভু জগন্নাথ দেব নরেন্দ্র মোদির ভক্ত।’ মোদি নিজেই নিজেকে পরমাত্মার অংশ বলে দাবি করলেও সম্বিত একটু বাড়িয়ে বলতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। অবস্থা সামাল দিতে ও প্রায়শ্চিত্ত করতে সম্বিত তিন দিন উপবাস থাকার ঘোষণা দেন।

গত জানুয়ারিতে মোদি অযোধ্যায় দেবতা রামের একটি বিশাল মন্দির উদ্বোধন করেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করে, ওই স্থানটিই ছিল দেবতা রামের জন্মস্থান। মন্দিরে মোদি নিজেই পূজা দিয়েছেন। এমনকি প্রধান হিন্দু ধর্মীয় নেতা শঙ্করাচার্যদেরও সেখানে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। তখন থেকে মোদির আধ্যাত্মিক দাবি-দাওয়া ভিন্ন মাত্রা পায়। 

২৯ এপ্রিল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদি বলেন, ‘আমি কঠিন সিদ্ধান্ত নিই না, আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু মাঝে মাঝে আমি ভাবি, কীভাবে এসব সম্ভব। আমি যা করছি, তা একটি ঐশ্বরিক শক্তি দ্বারা অনুপ্রাণিত। এটা ঈশ্বরের উপহার হতে পারে। ঈশ্বর আমাকে দিয়ে এই কাজটি করাতে চান এবং আমাকে এখানে একটি উদ্দেশ্য নিয়েই পাঠিয়েছেন।’ এমনকি নিজের জন্ম সম্পর্কেও ঐশ্বরিক বক্তব্য প্রদান করেছেন মোদি। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘মা যত দিন বেঁচে ছিলেন আমার মনে হতো, হয়তো জৈবিকভাবেই আমার জন্ম হয়েছে। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর নানা রকম অভিজ্ঞতা থেকে আমি নিশ্চিত, ভগবান আমাকে পাঠিয়েছেন। আমার মধ্যে যে শক্তি রয়েছে তা সাধারণভাবে জন্ম নেওয়া কোনো মানুষের থাকতে পারে না!’

ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনের আগে মোদি আবারও নিজেকে ‘ঈশ্বরের অবতার’ বলে দাবি করেন। গত ২৪ মে এনডিটিভিতে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ঈশ্বর আমাকে বিশেষ কাজের দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।’ মোদি নিজেকে শুধু ‘ঈশ্বর প্রেরিত’ বলেই জাহির করেননি; তিনি বলেছেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’ গড়ার সংকল্প অপূর্ণ রেখে ফিরে গেলে পরমাত্মা তাকে গ্রহণ করবেন না। অতএব ভোটারদের কাছে তার প্রার্থনা, এবারও জনতা তাদের জয়যুক্ত করুক, যাতে দ্রুত তিনি ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারেন। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিজেকে আধ্যাত্মিক হিসেবে মোদি উপস্থাপন করেছেন মূলত তার প্রতি ভারতের সাধারণ ধর্মভীরু মানুষের সমর্থনকে আরও জোরালো করার জন্য। তার হিন্দুবাদী এজেন্ডার জন্য আরও বেশি ভোট পেতে প্রচারণার একটি কৌশল। তবে এটি আজীবন ক্ষমতায় থাকারও একটা কৌশল বলে মনে করছেন অনেকে। 

১০ বছর আগে ৭৫ বছর বয়স হলেই বিজেপি নেতাদের বাধ্যতামূলক অবসরের তত্ত্ব দিয়েছিলেন মোদি। এতে পূর্বসূরি সব সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী শীর্ষ নেতাদের মাঠের বাইরে বের করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আসন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পেরেছেন তিনি। এবার ১০ বছর পর সেই ফর্মুলা এড়িয়ে যেতে নিজেকে ‘ঈশ্বরের অবতার’ দাবি করছেন মোদি। অবতার রূপে হাজির হলে তার বয়সের দোহাই থাকে না। ঈশ্বরের আদেশে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে চান বলে অভিযোগ রয়েছে। তখন মোদির বয়স ৯৬ বছর হয়ে যাবে।

আবার বিরোধীদের অভিযোগ, সব গণতান্ত্রিক চর্চা ও প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী শাসনের দিকে এগোচ্ছেন মোদি। আর এই শাসন কাঠামো গড়তেই নিজেকে ‘ঈশ্বরের অবতার’ দাবি করছেন মোদি। কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনেত বলেন, ‘বিজেপি নেতারা সুপরিকল্পিতভাবে প্রচার করে মোদিকে ঈশ্বরের অবতার হিসাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মোদি নিজেও বলছেন তিনি পরমাত্মার দূত। একইভাবে হিটলারের প্রচারযন্ত্র তাকে ঈশ্বরের দূত বলত। এটাই স্বৈরাচারীদের লক্ষণ।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫