
(বাঁ থেকে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তেলেগু দেশম পার্টি বা টিডিপির নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু ও জেডিইউ নেতা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ বেশি আসন পেলেও তাদের সরকার গঠন এবং এর স্থায়িত্ব নিয়ে নানা সংশয় তৈরি হয়েছে।
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখন অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের নীতীশ কুমারকে নিয়ে সরকার গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এ দু’জন যদিও মোদিকে সমর্থনও দিয়েছেন, তবুও আশঙ্কার বিষয়– এ দু’জনেরই বদলে যাওয়ার এবং বদলে দেওয়ার ইতিহাস আছে।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক হলেও নাইডু ও নীতীশ আদর্শিকভাবে আলাদা। সম্প্রতি নাইডু এক সাক্ষাৎকারে এটা স্পষ্টও করেছেন। তেলেগু দেশম পার্টি বা টিডিপির এ নেতা নিজ এলাকায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে জনপ্রিয় এবং তাদের ভোটে নির্বাচিত।
একইভাবে জেডিইউ নেতা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিজেপির মিত্র হলেও সংখ্যালঘু ও দলিতদের পক্ষে কথা বলেন। অন্যদিকে ভোটের প্রচারণায় নেমে স্পষ্ট ভাষায় ভারতের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন মোদি।
তাই এই দুই নেতার সঙ্গে বিজেপি বা মোদির আদর্শিক কোনো মিল নেই। তাছাড়া মোদি এর আগে মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করলেও কোয়ালিশন সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই তার।
অনেকের শঙ্কা, মোদির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার টিকিয়ে রাখা কঠিন হতে পারে।
হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, বুধবার বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন শিবসেনার জ্যেষ্ঠ নেতা সঞ্জয় রাউত। তিনি বলেন, একটি জোট সরকার চালানো মোদির সামর্থ্যের বাইরে। কারণ, তিনি তাঁর ‘মোদি সরকার’, ‘মোদির গ্যারান্টি’ সূচক মনোভাব দেখাতে থাকবেন। সঞ্জয় বলেন, ‘চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমার তো সবার বন্ধু। যিনি গণতন্ত্র ও সংবিধানের জন্য হুমকি– তাঁকে তাদের সমর্থন দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি না।’
ভারতের ৫৪৩ আসনের লোকসভার ২৪০টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। সরকার গঠনে তাদের কমপক্ষে ২৭২ আসন প্রয়োজন। নাইডুর টিডিপি ১৬ ও নীতীশের জেডিইউ ১২ আসন পেয়েছে। এ দু’জন ও জোটের অন্য শরিকদেরসহ ২৯৩ আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি।
এর আগে ২০১৯ ও ২০১৪ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপি। এবার সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় প্রথমবারের মতো জোট সরকার চালানোর অভিজ্ঞতা মোকাবিলা করবেন মোদি।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এটা তার জন্য অতটা সহজ হবে না। কারণ, মতানৈক্য হলে যে কোনো সময় সমর্থন প্রত্যাখ্যান করতে পারেন নাইডু ও নীতীশ। তাতে মোদি সরকারের পতন ঘটতে পারে।
এরই মধ্যে দুই দলই মন্ত্রিসভায় তাদের কয়েকজন নেতাকে স্থান দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি নানা শর্তও জুড়ে দিয়েছে। এ নিয়ে চলছে জোর দরকষাকষি। লোকসভা স্পিকারের পদ চেয়েছেন নাইডু। এনডিটিভি জানায়, এ দাবির প্রতি সম্মতি নেই বিজেপির। তারা চাচ্ছে টিডিপিকে ডেপুটি স্পিকারের পদ দিতে। বিজেপি স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। এ নিয়ে টিডিপির সঙ্গে তাদের বিরোধ বাধতে পারে।
মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে নীতীশের জেডিইউও। দলটি বলেছে, অগ্নিপথ প্রকল্প (সেনাবাহিনীতে অস্থায়ী নিয়োগ) পুনর্বিবেচনা করে দেখুক কেন্দ্রীয় সরকার। বিজেপির ইশতেহারের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়েও জেডিইউ উষ্মা প্রকাশ করেছে। জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী বৃহস্পতিবার ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআইকে বলেন, ভোটদাতাদের একাংশ অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ কারণে এটা প্রত্যাহার করা হোক। পাশাপাশি জাতি জনগণনার দাবি জানিয়েছে দলটি। জেডিইউ বলছে, বিহারকে যেন বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।
এ প্রেক্ষাপটে মোদির শপথ গ্রহণের দিনক্ষণ পিছিয়ে আগামী রবিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তিনি। শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বন্ধুদেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নিতে পারেন এ শপথ অনুষ্ঠানে।