লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সামনে পরাস্ত হতে হয়েছে বিজেপিকে। রাজ্যটিতে এবার তৃণমূল কংগ্রেস দল মোট ৪২ আসনের মধ্যে ২৯টি পেয়েছে। অন্যদিকে বিজেপি একই রাজ্যে আসন পেয়েছে ১২টি, কংগ্রেস ১টি। 

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল আসন পেয়েছিল ২২টি। আর বিজেপি সেবার জিতেছিল ১৬ আসনে। সে হিসেবে গতবারের তুলনায় এবার বেশ ভালো অবস্থানে আছে তৃণমূল। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীদের বড় একটি অংশ ভোট দিয়েছে তৃণমূলকে। মূলত তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ইত্যাদির মতো যেসব সামাজিক প্রকল্পগুলো চালায়- যেগুলোর মাধ্যমে সরাসরি অর্থ পৌঁছায় ভোটারদের হাতে- বিশেষত নারীদের হাতে, সেই ব্যবস্থায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন ভোটাররা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াল’-এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক অমল সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রায় ১১টি এরকম প্রকল্প আছে, যা সরাসরি সাধারণ মানুষকে সহায়তা করে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের এই প্রকল্পগুলো থেকে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, সেগুলো কিন্তু ধরাছোঁয়া যায়, এগুলো কোনো স্লোগান নয়। এর মধ্যে অনেক প্রকল্পই নারীদের জন্য। তাদের কাছে ওই মাসে হাজার টাকা হাতে পাওয়া কিন্তু বড় ব্যাপার, এটা মাথায় রাখতে হবে।’

ফলে বিশ্লেষকরা একমত যে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দলকে আগের বারের থেকে বেশি আসন পেতে এ ধরনের প্রকল্পগুলো বেশ সহায়তা করেছে। 

ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে আরও উঠে আসছে যে- তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া আর কোনো অ-বিজেপি দলই পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের মনে দাগ কাটতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষক শুভাশিস বলেন, ‘যারা বিজেপিকে হারাতে হবে বলে মনে করেছেন, তারা অন্য কোনো দিকে নজর না দিয়ে সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসকেই যে ভোট দিয়েছেন, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে। কংগ্রেস-সিপিএম যৌথভাবে মোট ভোটের মাত্র ১১ শতাংশেরও কম পেয়েছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় দফার ভোটের পর থেকেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করে- তার আগে নিজেদের দশ বছরের কাজের খতিয়ান দিচ্ছিল তারা।

অনেক স্থানে বিজেপির প্রধান নরেন্দ্র মোদিকেই ধর্মীয় মেরুকরণের বিষয়গুলো সামনে আনতে দেখা যায়। যেমন- কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে হিন্দু নারীদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে, হিন্দুদের ধনসম্পত্তি ছিনিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে ইত্যাদি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘যখনই এই মেরুকরণ শুরু হলো পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ভোটার, যারা হয়তো একটা সময়ে ভাবছিলেন কংগ্রেস-বাম জোটকে ভোট দেওয়ার কথা, তারা সম্ভবত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন যে বিজেপিকে আটকাতে হলে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দলকেই ভোট দেওয়া দরকার।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশিস বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, ‘এদিক থেকে বিজেপির প্রচার বুমেরাং হয়েছে। তারা ভেবেছিল ধর্মীয় মেরুকরণ করে ফলাফল ভালো করবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হয়েছে বিপরীত। এটা তাদের প্রচারাভিযানে একটা বড় ভুল ছিল।’ 

সূত্র: বিবিসি