Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিন তবে স্বাধীন হবে কবে

Icon

অরুন্ধতী সুরঞ্জনা

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪, ১৭:৩৫

ফিলিস্তিন তবে স্বাধীন হবে কবে

ফিলিস্তিনের পতাকা। ফাইল ছবি

‘একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে’-এ বিশ্বাস জীবনমুখী কথাশিল্পী নচিকেতার। সেদিন বাঙালি এই জীবনমুখী কথাশিল্পীর ভাবনায়, ‘বসতি আবার উঠবে গড়ে, আকাশ আলোয় উঠবে ভরে, জীর্ণ মতবাদ সব ইতিহাস হবে।’ ঝড় থেমে যায়, কিন্তু ক্ষতচিহ্ন তো রেখে যায়। এই প্রশ্নটায় রেখে গেছেন ফিলিস্তিনের কণ্ঠস্বর, কবি মাহমুদ দারবিশ।

‘যুদ্ধ থেমে যাবে’ কবিতায় তিনি বলেছেন-

‘একদিন যুদ্ধ থেমে যাবে,

নেতারা হাত মেলাবে;

কিন্তু মা অপেক্ষা করবে কবে তার শহীদ ছেলে ঘরে ফিরবে,

বধূ অপেক্ষা করবে কবে তার প্রাণের স্বামী ফিরে আসবে,

বীরোচিত বাবার ফেরার অপেক্ষায় শিশুরা চেয়ে থাকবে; 

আমি জানি না, ওরা কারা যারা আমাদের জন্মভূমি বেচে দিয়েছে, 

তবে, আমি দেখেছি তাদের যাদের জীবন দিয়ে এর খেসারত দিতে হয়েছে।’

ফিলিস্তিনিদের বঞ্চনা ও বেদনা এবং ইসরায়েলের বর্বরতার সারকথা যেন এই কটা বাক্যেই নিহিত রয়েছে। ‘নিজঘরে পরবাসী’ হয়ে আছে ফিলিস্তিনিরা, সেই ১৯৪৮ সাল থেকে, যখন তাদের ভিটাচ্যুত করে অভিশপ্ত ভিত গড়েছিল ইসরায়েল। বিশেষ করে, ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে শ্বাসরুদ্ধকর অবরোধের শিকার ফিলিস্তিনিরা। এর শেষ কোথায়? 

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ৩০ বছর পরও ফিলিস্তিন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়নি। ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর ফিলিস্তিন মুক্তি সংগঠন (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন বা পিএলও) ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান ইয়াসির আরাফাত। ১৯৯৩ সালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের অসলো চুক্তিতে সম্মতিজ্ঞাপন ও সই প্রদানের কারণে পরের বছর তিনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন। 

এরপর গড়ে উঠেছিল ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ, যার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু ২০০৭ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক দল ফাতাহ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে বিভাজন ঘটে। সেই থেকে গাজা শাসন করে আসছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস, আর পশ্চিম তীর শাসন করে আসছে ফাতাহ। ভাইয়ে-ভাইয়ে এই দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়েছে ভিলেন ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে দখলদার রাষ্ট্রটির বর্বরতার চরম রূপ সবাই প্রত্যক্ষ করছে।

সবাই চোখ বুজে রেখেছে, এ কথা বলা যায় না। পৃথিবী কথা বলছে। আওয়াজ উঠেছে সবপ্রান্তে। স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির সুর ধ্বনিত হচ্ছে ইউরোপ থেকে আফ্রিকায়। ২০২৪ সালের ২৮ মে স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৪ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত ১৪৬টি এ পর্যন্ত এই স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে রয়েছে ফিলিস্তিন। ২০২৪ সালের ১০ মে এই পরিষদের পূর্ণাঙ্গ সদস্য রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়ার পক্ষে বড় রায় পেয়েছে দেশটি। কিন্তু সত্যিকারের স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা আর কত দূর?

২০২৪ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ আহ্বান জানিয়েছেন, জাতিসংঘের অবশিষ্ট সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত ওই ১৪৬ রাষ্ট্রের মতো অবিলম্বে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। তারা মনে করেন, মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম করে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা, তাদের স্বীকৃতি দেওয়া শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিস্তিনিরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারুক, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরা গড়ুক, স্বাধীনভাবে ও নিরাপদে চলাফেরা ও জীবনযাপন করুক-তা নিশ্চিত করতে হবে। তারা বলেছেন, ফিলিস্তিন ও সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হতে হবে ও ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসন থামাতে হবে। তারা আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, সহিসংতার পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান শর্ত ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’।

স্বাধীনতা ঘোষণার পরদিনই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ। চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে যে বিদ্রোহের বাণী ছড়িয়ে পড়েছে দুনিয়াব্যাপী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালেও চোখে পড়ে সেই বিদ্রোহের দিব্যি, ‘আস্থা রাখি মনে দেখবো যে সেই দিন/নদী থেকে সমুদ্রতক স্বাধীন ফিলিস্তিন।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫