Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ভারতের নির্বাচনে চমক রাবণ ও খালিস্তানি নেতার জয়

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪, ১৮:১৫

ভারতের নির্বাচনে চমক রাবণ ও খালিস্তানি নেতার জয়

চন্দ্রশেখর আজাদ রাবণ ও অমৃতপাল সিং। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুসলিম-বিদ্বেষী প্রচারণা সেভাবে কাজে দেয়নি। নতুন করে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন রাহুল গান্ধী। তবে এর থেকেও বড় চমক রামরাজ্যে রাবণের জয় এবং কারাবন্দি স্বঘোষিত খালিস্তানি এক নেতার জয়।

উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলে চন্দ্রশেখর আজাদের পরিচয় ‘রাবণ’ নামে। ওকালতি পাস করলেও তার পেশা-নেশা দলিত সমাজকে ন্যায় ও মর্যাদার স্তরে দাঁড় করানো। রাবণের গড়া সামাজিক সংগঠন ভীম আর্মি গত এক দশক ধরে বিভিন্ন রাজ্যে দলিত ও অনগ্রসরদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে। উত্তর ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন রাবণ। শাহীনবাগ সমাবেশে যোগ দিয়ে কারাগারেও যেতে হয়েছিল। ২০২০ সালের মার্চ মাসে রাজনৈতিক দল ‘আজাদ সমাজ পার্টি’ গড়েন তিনি। গত বছর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে গোরক্ষপুর কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন রাবণের জামানতের টাকাও ফেরত পাননি।

গেরুয়া বাহিনীকে ঠেকাতে লোকসভা ভোটে বিরোধী দলগুলোর ‘ইন্ডিয়া’ জোট থেকে লড়তে চেয়েছিলেন; কিন্তু জোটের শরিকরা তাকে বাদ দিয়েছে। এরপর ‘একলা চলো’ নীতিতেই লোকসভা ভোটে নেমে পড়েন রাবণ। উত্তরপ্রদেশের নাগিনা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন এই আম্বেদকরের আদর্শের বাহক। 

নাগিনা কেন্দ্রে রয়েছে সাড়ে তিন লাখ দলিত ভোটার। সেখানে মানুষের মন জিততে রাবণের হাতিয়ার ছিল ‘দরিদ্রের শাসন’ মন্ত্র। কেটলি প্রতীক নিয়ে সাধারণের দরবারে গিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন, দলিতদের অধিকার রক্ষায় আজাদ সমাজ পার্টির সমকক্ষ আর কেউ নেই। এই কেন্দ্রে রাবণের জয়ের পথে বড় অন্তরায়ও ছিলেন দলিত ভোটাররাই। কারণ তরুণদের মধ্যে তার ব্যাপক প্রভাব থাকলেও বয়স্ক দলিতদের অনেকেই এখনো ভরসা রাখেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর ওপর। সেই বাধা কাটিয়ে দলিত সমর্থন নিজের পক্ষে নিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির মতো হেভিওয়েট দলের বিরুদ্ধে মাত্র চার বছর বয়সী আজাদ সমাজ পার্টির লড়াইটা অসম মনে হলেও, শেষ পর্যন্ত আন্ডারডগেরই জয় হলো। ভারতজুড়ে সংবিধান বদলে দেওয়ার হাওয়ার মধ্যেই সংবিধান প্রণেতা আম্বেদকরের ওপর ভরসা রেখে ভোট বৈতরণী পার হলেন রাবণ। লোকসভা কেন্দ্রে দেড় লাখেরও বেশি ভোটে জয় পেয়েছেন। বিজেপি এবং সমাজবাদী পার্টি (এসপি) দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে উত্তরপ্রদেশে ‘দলিত আইকন’ হিসেবে দেখা হচ্ছে রাবণকে।

অন্যদিকে কারাগার থেকেই লোকসভা নির্বাচনে লড়ে জয়ী হয়েছেন ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের স্বঘোষিত খালিস্তানি নেতা অমৃতপাল সিং। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অমৃতপালকে কেন্দ্র করেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয় পাঞ্জাব। তার এক সমর্থককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর তাতে আরও চরমে ওঠে পরিস্থিতি। উন্মত্ত জনতা থানায় আক্রমণ করে। এমনকি ওই  সমর্থককে ছাড়িয়েও আনে। তবে অভিযোগ রয়েছে এসবের পেছনে ছিলেন ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’ সংগঠনের নেতা অমৃতপাল। তারপর থেকে বেশকিছু দিন গা ঢাকা দেন তিনি। একের পর এক জায়গায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ২৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের মোগা থেকে জাতীয় সুরক্ষা আইনে (এনএসএ) গ্রেপ্তার করা হয় অমৃতপালকে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আসামের ডিব্রুগড় কারাগারে।

কারাবন্দি এই খালিস্তানপন্থি নেতা লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করার আবেদন জানান। আদালতের দ্বারস্থ হন। খাদুর সাহিব আসন থেকে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দেন নির্বাচন কমিশনে। অমৃতপালের হয়ে মূলত প্রচার চালিয়েছিলেন তার বাবা তারসেম সিংহ। পাশে ছিলেন স্থানীয় সমর্থকরা। খাদুর সাহিব আসন ছেয়ে গিয়েছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে তলোয়ার হাতে অমৃতপালের পোস্টারে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, অমৃতপাল প্রায় দেড় লাখ ভোটে জয়লাভ করেছেন। ওই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থান পায় কংগ্রেস, তৃতীয় স্থানে ছিল আম আদমি পার্টি। তবে শপথগ্রহণের জন্য অমৃতপালকে আগে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে। কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে পার্লামেন্টে গিয়ে শপথ নিতে পারবেন তিনি। তবে তারপর আবার জেলে ফিরতে হবে তাকে। 

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও অমৃতপাল যদি দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাকে দুই বছর বা তার বেশি সময় জেলে থাকতে হয়, তাহলে এমপি পদ হারাবেন তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫