Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

অটোমানদের কোরবান বায়রামি

Icon

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৪, ১৮:৪৭

অটোমানদের কোরবান বায়রামি

তুরস্কের ঈদুল আজহা। ছবি- সংগৃহীত

তুরস্কে ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদ কোরবান বায়রামি নামে পরিচিত। আর ঈদুল ফিতর রমজান বায়রামি নামে পরিচিত। এই কোরবান বায়রামি অটোমান বা উসমানীয় শাসনামলে রাজদরবারে বিশেষভাবে পালিত হতো। উসমানীয় প্রাসাদে, ‘মুয়ায়েদে আলায়ি’ নামে সুলতানের সঙ্গে জনসাধারণের একটি বায়রামি শুভেচ্ছা অনুষ্ঠান হতো। তা ছাড়া সিংহাসনের উত্তরাধিকার চিহ্নিত অনুষ্ঠানের পর উসমানীয় প্রাসাদে একইভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটি ছিল এই শুভেচ্ছা অনুষ্ঠান।

ইসলামি দিবসে ছুটির দিনগুলোতে অনুষ্ঠানগুলো সাম্রাজ্যে শুধু ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না; উসমানীয় রাজবংশের মহিমা প্রকাশের ক্ষেত্রেও তা ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এর কারণ হলো-ইসলামি বিশ্বে সরকারকে কেবল সামরিক শক্তি দ্বারা নয়, প্রাসাদের জাঁকজমক ও সমৃদ্ধ জনসাধারণের অনুষ্ঠান দ্বারাও পরিমাপ করা হতো। অটোমান সাম্রাজ্যে, সরকারি অনুষ্ঠানের পদ্ধতি ও নীতিগুলো ফাতিহ কানুননামসি (মেহমেদ দ্য কনকাররস কোড অব ল)-এর কাঠামো দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল; আর এই ব্যবস্থা খুব অল্প পরিবর্তনের সঙ্গে দীর্ঘকাল অব্যাহত ছিল। কুরবান বায়রামিকে চিহ্নিত করার অনুষ্ঠানটি ১৯ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তোপকাপি প্রাসাদে ও ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত দোলমাবাহচে প্রাসাদের কেন্দ্রে গ্র্যান্ড সেরেমোনিয়াল হলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

আরাফাহ দিবস নামে পরিচিত উৎসবের আগের দিনটি প্রাসাদের দ্বিতীয় উঠানে একটি অনুষ্ঠান হতো। এই দিনে সুলতানের সিংহাসনটি ফেলিসিটির গেটে নিয়ে যাওয়া হতো, যা আরজ ওদাসিতে খোলে, যেখানে সুলতান শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতেন।

সুলতান নিজেই বায়রাম নামাজের জন্য মসজিদকে বেছে নিয়েছিলেন। এটি সাধারণত তারা হাজিয়া সোফিয়া বা নীল মসজিদকে নির্বাচন করতেন। বায়রামের প্রথম দিনে সুলতানদের সকালের নামাজ চেম্বার অব হলি রিলিক্সে করার প্রথা ছিল। সুলতান তখন বায়রামের নামাজ পড়ার আগে একটি অদ্ভুত সুন্দর ঘোড়ায় চড়ে মসজিদে যেতেন। ঘোড়ার খুরে সোনার খাড়ু, মুক্তা ও রত্ন দিয়ে সজ্জিত ছিল। নামাজের পর গেট অব ফেলিসিটিতে শুরু হতো অনুষ্ঠান।

সুলতানের জন্য প্রস্তুত করা ভেড়া কোরবান বায়রামির সময় বিশেষ পোশাক পরিহিত কর্মকর্তাদের দ্বারা খাওয়ানো ও বহন করা হতো। কোরবানির পশু পাঠানো হতো মাদ্রাসা বা স্কুলে ও অভাবগ্রস্তদের কাছে। অটোমান রাজ্যগুলোতেও উৎসবের দিনগুলো ছুটি ঘোষণা করা হতো। উৎসবের আগে সামরিক কর্মকর্তা ও বেসামরিক কর্মচারীদের বেতন বোনাস দেওয়া হতো। উৎসব চলাকালে সৈন্যদের চিনি, ভেড়ার মাংস, হালভা (পারস্য থেকে উদ্ভূত এক ধরনের মিষ্টান্ন), সালাদ ও বাকলাভা (ফিলো পেস্ট্রি দিয়ে তৈরি একটি স্তরযুক্ত পেস্ট্রি ডেজার্ট, বাদাম দিয়ে ভরা ও মধু দিয়ে সুমিষ্ট করা হয়।) দেওয়া হতো। আর পুলিশ সদস্যদের একটি ফেজ ও ট্যাসেল দেওয়া হতো। হাজিয়া সোফিয়া, নীল মসজিদ, সুলেমানিয়া মসজিদ ও ফাতিহ মসজিদের মতো বড় মসজিদের উলামায়ে কেরামদের কাছে উপহার সামগ্রী হস্তান্তর করা হতো। বায়রামির প্রথম দিনে কারাগারে বন্দিদের মাঝে হালভা বিতরণ করা হতো। কিছু বন্দি যারা তাদের সাজার দুই-তৃতীয়াংশ ভোগ করেছে তাদের উৎসব উপলক্ষে মুক্তি দেওয়া হতো।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫