Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

তৃতীয় দফায় মোদির ‘সরকার বাঁচানোর বাজেট’

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১৫:৫৩

তৃতীয় দফায় মোদির ‘সরকার বাঁচানোর বাজেট’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। তৃতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি প্রথম বাজেট। এখানে ৯টি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র উল্লেখ করেছেন সীতারমণ। এর মধ্যে বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের উন্নয়নে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এ নিয়ে বিরোধীদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েছে মোদি সরকার। এ বাজেটকে মোদির ‘সরকার বাঁচানোর বাজেট’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরুর আগেই ইন্ডিয়া জোটের এমপিরা পার্লামেন্ট ভবনের দরজার সামনে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাতে অংশ নেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, এসপি, এনসিপি (শরদ), শিবসেনাসহ (উদ্ধব) ইন্ডিয়া জোটের সদস্যরা। প্ল্যাকার্ডগুলোয় লেখা বাজেটে বঞ্চিত হওয়ার কথা। বিরোধীরা এই বাজেটকে ‘লজ্জার’, ‘জনবিরোধী’ ও ‘ধ্বংসাত্মক’ বর্ণনা করে বলেন, মোদির চিন্তায় সরকারের অস্তিত্ব রক্ষা ছাড়া আর কিছু ছিল না। সবার স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু দুই শরিকের কথা তিনি ভেবেছেন। রাহুল বলেন, ‘এটা মোদির গদি বাঁচানোর বাজেট।’

বাজেট নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এবার ‘ঘুষের বাজেট’ দিয়েছে মোদির সরকার। সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বাজেটে ‘ঘুষ’ দেওয়া হয়েছে। এই বাজেট শুধুই অন্ধকার অভিমুখী। এটি বাংলার প্রতি বঞ্চনার বাজেট। এটি রাজনৈতিক বাজেট। বিরোধীদের অভিযোগ, এই বাজেটের মূল লক্ষ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারকে খুশি রাখা, যাতে দুই শরিক তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ও জনতা দল সংযুক্ত (জেডিইউ) জোট না ছাড়ে। দুই দলের দুই মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমার সরকার থেকে সমর্থন তুলে না নেন। বাজেট প্রস্তুতির সময় মোদির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল দুই শরিককে সন্তুষ্ট রাখা, পার্লামেন্টে যাদের মোট সদস্য ২৮। এ কারণে এই বাজেটে অন্য সব রাজ্য বঞ্চিত হয়েছে। এমনকি চলতি বছরের শেষে যে চার বিধানসভার ভোট রয়েছে-মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড ও জম্মু-কাশ্মীর, উপেক্ষিত হয়েছে তারাও।

বাজেটে বিহারে নতুন মেডিক্যাল কলেজ এবং বিমানবন্দর তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গঙ্গার ওপর তৈরি হবে দুটি নতুন সেতু। অন্ধ্রপ্রদেশে নতুন রাজধানী নির্মাণে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। রাজ্য পুনর্গঠনের পর থেকেই বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশ বিশেষ মর্যাদার দাবিতে সরব। যদিও মোদি সরকার সেই দাবিকে সেভাবে আমল দেয়নি। এবার দুই সহযোগী সেই দাবি জোরালোভাবে না তুললেও বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ পেতে সচেষ্ট ছিলেন।

বিহারের জন্য অবকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি রুপি, যার মধ্যে সড়ক নির্মাণে খরচ হবে ২৬ হাজার কোটি। এই অর্থে তিনটি সড়ক তৈরি হবে। বক্সারে গঙ্গার ওপরে তৈরি করা হবে একটি সেতু। এক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২১ হাজার কোটি রুপি। বন্যা নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হচ্ছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি। এ ছাড়া হবে একটি বিমানবন্দর, নতুন মেডিক্যাল কলেজ ও ক্রীড়া কাঠামো। দুই মুখ্যমন্ত্রী বাজেট ভাষণের পর তাদের সন্তুষ্টি চেপে রাখতে পারেননি। নীতীশ বলেছেন, বিশেষ মর্যাদার দাবি অতীত। বর্তমান হলো বিশেষ আর্থিক সহায়তা, যা কেন্দ্র দিয়েছে। আর চন্দ্রবাবু বলেছেন, রাজ্য এবার নতুন রাজধানী পাবে। 

বাজেট হলো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে সরকারের প্রত্যাশিত আয় এবং ব্যয়ের রূপরেখা। অন্যভাবে বললে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে এবং কর্মসূচিতে সরকার যে অর্থ বরাদ্দ করে তার একটি সুসংহত পরিকল্পনাই হলো বাজেট। 

বাজেটে নয়টি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়-কৃষি, কর্মসংস্থান, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, উৎপাদন ও পরিষেবা, নগর উন্নয়ন, জ্বালানি, পরিকাঠামো, উদ্ভাবন এবং গবেষণা ও উন্নয়ন এবং পরবর্তী প্রজন্মের সংস্কার। বাজেট পেশের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী বলেন, ভারতের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং খাদ্যদ্রব্যের যথেষ্ট জোগান আছে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে কেন? সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই পরিষ্কার। বাজেটে খাদ্যদ্রব্যের দাম কমানোর কোনো ইঙ্গিত নেই।

২০২৩ সালের শেষে দেখা গেছে, ভারতে ১ শতাংশ ধনী লোকের হাতে রয়েছে দেশের মোট সম্পদের ৪০.১ শতাংশ। সেখানে দেশের ৫০ শতাংশ জনগণ মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদের মালিক। আয়ের এই বৈষম্য ক্রমশ বেড়েছে। দেশটির খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি প্রায় ৮.৭০ শতাংশ। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের আয় বাড়ানোর কোনো দিশাও নেই এবারের বাজেটে। তবে বরাবরের মতোই বৃহৎ ধনীদের ঋণ ও করে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫