
গৌতম আদানি। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ বিষয়ক গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ জানিয়েছে, আদানি গ্রুপের অফশোর ফান্ডে অংশীদারত্ব ছিল ভারতের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (সেবি) চেয়ারপারসন মাধবী পুরী বুচ ও তার স্বামী ধাওয়াল বুচের।
১০ আগস্ট হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের ওয়েবসাইটে আদানি গ্রুপের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে। হুইসেলব্লোয়িংয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত গোপন নথির ভিত্তিতে সেবি চেয়ারম্যান মাধবীর অফশোর কোম্পানিতে অংশীদারত্ব এবং সেখানে আদানি গ্রুপের মালিকানার বিষয়টি ফাঁস হয়। হিন্ডেনবার্গের নতুন প্রতিবেদন ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনেও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এর আগেও এ নিয়ে সংসদে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। এখন আদানিদের অর্থ পাচারে মাধবীর সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে বিরোধীরা সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে তদন্তের দাবি তুলেছেন।
মাধবীকে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্র বেশ কিছু প্রশ্ন করেছেন। এক্স হ্যান্ডলে তিনি একের পর এক পোস্টে তীব্র আক্রমণ করেছেন সেবি প্রধানকে। মহুয়ার প্রশ্ন, ‘আপনি কি ২০১৫ সালে বিনোদ আদানির গ্লোবাল অপরচুনিটিস ফান্ডের অংশ আইপিইপ্লাস ফান্ড-১-এ বিনিয়োগ করেছেন? কবে থেকে এই সংস্থার সঙ্গে আপনার আর কোনো সম্পর্ক নেই? এই বিনিয়োগের বিষয়ে কি সেবি অবগত ছিল?’ মাধবী নিজে যে সংস্থায় বিনিয়োগ করে রেখেছেন, সেটি নিয়ে তাকেই তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছিল, এ কথা কি সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছে? প্রশ্ন মহুয়ার। ‘তবে কি মাধবী নিজেই নিজেকে তদন্তের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন?’ মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ট্যাগ করে মহুয়া লেখেন, ‘ক্যাবিনেট কমিটি তাকে নিযুক্ত করার আগে কি মাধবী অফশোর সংস্থায় তার বিনিয়োগের বিষয়টি জানিয়েছিলেন? তার আইবি রিপোর্টে কী উল্লেখ রয়েছে?’
এক বিবৃতিতে বিষয়টিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেন মাধবী। আদানি গ্রুপও হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও কারসাজিমূলক’ বলে মন্তব্য করা হয়। এর আগে ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপকে আর্থিক দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত করে। চাঞ্চল্যকর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক দশক ধরে শেয়ার কারসাজি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ।
কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বহু গুণ বাড়িয়ে এ গ্রুপ বিশাল সম্পদ গড়েছে। গত কয়েক বছরে আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
পুঁজিবাজারে আদানি গ্রুপের ‘শর্ট সেলিং’-এর অভিযোগ করা হয় হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনে। ‘শর্ট সেলিং’ হলো একটি কৌশল, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী কোনো কোম্পানির দর কমতে পারে এমন ধারণা থেকে শেয়ার বিক্রি করে দেয়, যাতে পরে কম দামে কিনে নেওয়া যায়। আদানি গ্রুপের অধীনে সাতটি কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো পণ্য ব্যবসা, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, বন্দর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করছে। অনেক ভারতীয় ব্যাংক এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বীমা সংস্থা এ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বা ঋণ দিয়েছে।
হিন্ডেনবার্গের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর হুহু করে তার বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। এশিয়ার শীর্ষ ধনীর মুকুট হারান গৌতম আদানি। চলতি বছরের জুলাই মাসে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চকে সেবি একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে, ২০২৩ সালের ওই প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে। সেবি অভিযোগ করেছে, হিন্ডেনবার্গ মিথ্যা দাবি করে বাজারকে বিভ্রান্ত করেছে যে, ভারতে তালিকাভুক্ত আদানি গ্রুপের শেয়ারে কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ এক্সপোজার নেই।
ওই প্রতিবেদন প্রকাশের ১৮ মাস পর ফের বড়সড় দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে হিন্ডেনবার্গ। হুইসেলব্লোয়ার তথ্যের ভিত্তিতে তারা দেখিয়েছেন, বারমুডাভিত্তিক গ্লোবাল অপরচুনিটিজ ফান্ড, যা আদানি গ্রুপের সঙ্গে সংযুক্ত, সেখানে মাধবী ও তার স্বামী ২০১৫ সালে বিনিয়োগ করেছেন। ওই অফশোর তহবিলে আদানি গ্রুপের অংশীদারত্ব রয়েছে।
হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনের জেরে আদানির শেয়ারের দাম এক ধাক্কায় অনেক পড়েছে। ১২ আগস্ট আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার ৩.৫২ শতাংশ, আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনের শেয়ার ২.১৪ শতাংশ, আদানি পাওয়ারের দাম ৩.৩৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারও এদিন কমেছে। এ ছাড়া আদানি উইলমারের শেয়ার ৩.০৪ শতাংশ, আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ার ৪.৯৭ শতাংশ এবং আদানি এনার্জি সলিউশনের শেয়ারও ২.২০ শতাংশ কমেছে।