Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

কলকাতার ‘রাত দখল’ যে বার্তা দেয়

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৭:৪০

কলকাতার ‘রাত দখল’ যে বার্তা দেয়

কলকাতায় ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নারীর প্রতিবাদ। ছবি: আজকাল

গত ১৫ আগস্ট ছিল ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস। তবে অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবারের স্বাধীনতা দিবসের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। ১৪ আগস্ট রাত থেকেই ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর দুই রাত ধরে চলে এই প্রতিবাদ। এক নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলনের সূত্রপাত। ৮ আগস্ট রাতে পশ্চিমবঙ্গের ১৩৮ বছরের পুরনো আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাজ করছিলেন ওই চিকিৎসক। দিবাগত রাত ২টার দিকে বাইরে থেকে খাবার এনে দুজন বন্ধুর সঙ্গে নৈশভোজ সারেন তিনি। এরপর জরুরি ভবনের চারতলার একটি সেমিনার কক্ষে বিশ্রাম নিতে যান। পরদিন সকাল ৮টার দিকে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা গিয়ে তার মরদেহ দেখতে পান। 

ওই চিকিৎসকের বাবা জানিয়েছেন, তাকে পরদিন সাড়ে ১০টা নাগাদ হাসপাতালের কর্মকর্তারা ফোন করে জানান তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিন ঘণ্টা হাসপাতালে বসিয়ে রাখা হয় তাদের। পরে মা-বাবাকে মেয়ের ক্ষতবিক্ষত, অর্ধনগ্ন দেহ দেখতে দেওয়া হয়। মুখ, চোখ, যোনিদ্বার ছিন্নভিন্ন। তারপরও হাসপাতাল থেকে বাবাকে জানানো হয় তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। হাসপাতালের প্রিন্সিপাল বলেছেন, ‘রাতে (নারী) ডাক্তার একা থাকে কেন?’ পরে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবির মুখে ময়নাতদন্তে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার আলামত পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন জুনিয়র ডাক্তার, সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারীরা। 

পুলিশ শোকাহত ওই চিকিৎসকের বাবাকে অর্থ দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। সাংবাদিকরা বারবার প্রশ্ন করলেও পুলিশ কমিশনার কিছুতেই অভিযুক্তের পেশা জানালেন না। মানুষ তাই পুলিশে ভরসা হারায়। সেই সেমিনার রুমের উল্টোদিকের রুমগুলো জরুরিভিত্তিতে ভাঙা হয়। অজস্র অনিয়মের অভিযোগ থাকা অধ্যক্ষ সকালে পদত্যাগ করে দুপুর না গড়াতেই সরকারি চাকরির এই দুর্দিনের বাজারে আরও বড় হাসপাতালে নতুন করে চাকরি পেলেন।

এমন এক বাস্তবতায় ওই চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং হত্যার পর নারীর সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায় একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও নারী নেত্রী রিমঝিম সিনহা ওই পোস্টে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ৮-বি বাসস্ট্যান্ড, অ্যাকাডেমি ও কলেজ স্ট্রিট; এই তিন জায়গায় জড়ো হয়ে নারীদের রাত দখলের আহ্বান জানান। এর আগেও ২০১৯ সালে এক নারী চিকিৎসকের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর তিনি এমন আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে সেবার তেমন সাড়া পাননি। এবার কলকাতা লোকে লোকারণ্য ছিল পরপর দুই রাত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিত ভট্টাচার্যের মতে, ‘সাধারণ মানুষ একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ, তোমরা যদি নারী নিরাপত্তার ইস্যুতে শুধু রাজনীতিই করে যাও, তাহলে আমাদের ব্যবস্থা আমরাই করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখি।’ নারী আন্দোলন কর্মী অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী ১৬ আগস্ট ফাঁসির দাবিতে মিছিল করছেন, তবে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা তো তার হাতে, তার পুলিশের হাতেই ছিল। ব্যবস্থা তো তিনিই করতে পারতেন। এখন রাতের রাস্তা দখল কর্মসূচির পর সাধারণ মানুষের সেই আন্দোলন কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। সেদিন অবশ্য অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিই দলীয় পরিচয় ছাড়া যোগ দিয়েছিলেন। তবে ওই বিপুল জনসমাগম দেখে তাদের এখন মনে হচ্ছে যে আমরা দলীয়ভাবে কিছু করব না? পথে না নামলে তো কর্মীরা আমাদের কাছে প্রশ্ন তুলবে। তাই তারা সাধারণ মানুষের চাপে পড়ে মিছিল করতে বাধ্য হচ্ছেন।’

আন্দোলন এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, এমন বার্তাই দিয়েছেন রিমঝিম সিনহা। তিনি বলেন, ‘ভাবিনি, একটি ফেসবুক পোস্ট ওই রকম দাবানলের মতো হয়ে যাবে। ভাবিনি, এত এত মানুষ রাস্তায় নেমে আসবেন। ভাবিনি, এত মানুষ নিজের মতো করে তাদের এলাকায় আন্দোলনকে সংগঠিত রূপ দেবেন। যা ভাবিনি, তা-ই হয়েছে। সেই রাতে নতুন দিনের মশাল জ্বলেছে। সেই মশালকে প্রজ্বলিত রাখাই এখন কাজ। যে মানুষ রাতের দখল নিয়েছিলেন, যারা প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন, সেই মানুষকে আন্দোলনের রাস্তায় রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। সেটাই এখন দায়িত্ব বলে মনে করছি। কারণ লড়াইটা অনেক লম্বা। যেতে হবে অনেকটা পথ। যেতে হবে বহু দূর।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫