Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হবে

Icon

অরুন্ধতী সুরঞ্জনা

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ২৩:৩৮

ইউক্রেন যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হবে

ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রুশ বাহিনীর মহড়া। ফাইল ছবি

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রেক্ষাপট দীর্ঘ। দুই দেশের এবং আশপাশের ও দূর-পরবাসের বহু মানুষ বহুদিন ধরেই এমন যুদ্ধের আশঙ্কায় ছাতা সঙ্গে নিয়ে ঘুরছিল। অবশেষে সত্যি সত্যি যুদ্ধ বেধে গেল ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু হয়। অনেক পরে তারা একে যুদ্ধ বলে স্বীকার করে নেয়। ইউক্রেনও প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে আসছে এবং সম্প্রতি আকস্মিক ও অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে রাশিয়ার জমিনে ঢুকে হাজার বর্গকিলোমিটার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

সামরিক আগ্রাসন শুরুর সময় রাশিয়ার অভিযোগ ছিল, পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো ইউক্রেনে তাদের সেনা মোতায়েনের পাঁয়তারা করছে। মানচিত্র লক্ষ করলে দেখা যাবে, রাশিয়ার আশপাশের বেশ কিছু রাষ্ট্র এরই মধ্যে ন্যাটোর সদস্যভুক্ত; অর্থাৎ রুশ সীমান্ত থেকে সম্ভাব্য মোতায়েনকৃত ন্যাটোর সৈন্যদল ও আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র খুব দূরে নয়। আবার ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার ২৩০০ কিলোমিটারের সীমান্ত (৩২১ কিলোমিটারের সমুদ্র সীমান্তসহ)। মস্কোর মনে এই আশঙ্কা বাড়ছিল যে, শিগগির ন্যাটোর সদস্যপদ পেয়ে যাবে ইউক্রেন, আর তা হলে, সীমান্তে ন্যাটোর সেনা মোতায়েন হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই পুতিনের ভাষায়, ‘রাশিয়ার জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ায়’ বাধ্য হয়ে তারা ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে। রাজধানী কিয়েভেও গত আড়াই বছর ধরে চলমান যুদ্ধে বহুবার হামলা করেছে মস্কো; তবে এই অভিযান মূলত পূর্ব ইউক্রেনে।

এই অভিযানে রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের ২০ শতাংশের মতো ইউক্রেনীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এগুলোতে নিজেদের প্রশাসকও নিয়োগ করেছে। ভবিষ্যতে এসব অঞ্চলকে গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়ার অংশীভূত করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। এই মুহূর্তে রাশিয়ার কুরস্কে শক্ত অবস্থান করছে ইউক্রেনের সেনারা। বেলগোরোদেও বেগতিক হয়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে রাশিয়া। মস্কোর অভিযোগ, ভাড়াটে যোদ্ধাবাহিনী এবং মার্কিন সেনারা সরাসরি যুক্ত না থাকলে রাশিয়ার অভ্যন্তরে এভাবে হামলে পড়া ও ভূভাগ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ইউক্রেনীয় বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয়। এ ধরনের অভিযোগ ওয়াশিংটন প্রত্যাশিতভাবেই প্রত্যাখ্যান করেছে। 

এদিকে ইউক্রেন তাদের সীমান্তে সোয়া লাখের মতো সেনা মোতায়েন করেছে বলে অভিযোগ করেছে বেলারুশ। দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কো এ সপ্তাহে বলছেন, নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে তারাও পাল্টা পুরো সীমান্তজুড়ে নিজেদের এক-তৃতীয়াংশ সেনা মোতায়েন করেছে। পুতিনের সবচেয়ে বড় মিত্র লুকাশেঙ্কো। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম দিকেই অভিযোগ উঠেছিল, বেলারুশের মাটি ব্যবহার করে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রুশ সেনারা। মস্কোকে এভাবে সহযোগিতার ব্যাপারে কিয়েভের অভিযোগ অবশ্য বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে মিনস্ক।

এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে সেনা সমাবেশের বিষয়ে লুকাশেঙ্কো বলেছেন, ‘ইউক্রেনের আগ্রাসী নীতি দেখে আমরা কিছু নির্দিষ্ট পয়েন্টে সেনা মোতায়েন করেছি। যেমনটা প্রয়োজন হয় যুদ্ধ বা প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে। পুরো সীমান্তজুড়ে।’ সেনাবাহিনীর ‘আলফা’ ও ‘আলমাজ’ নামে দুটি বিশেষ ইউনিট ইউক্রেনের সীমান্তে কাজ করছে। লুকাশেঙ্কো বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী বর্তমানে বেলারুশ সীমান্তের দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। কারণ তারা মনে করে, পুতিন বেলারুশের ভূখণ্ড থেকে আবার আক্রমণ করবে। 

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে বেসামরিক মানুষ হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগও রয়েছে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে। বিশেষত এই অভিযানের সর্বাধিনায়ক পুতিনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হয়েছে। এমনকি ২০২৩ সালের মার্চে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। আর ন্যাটোর মূল চালিকা রাষ্ট্র তথা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। অবশ্য পুতিন এসবকে থোড়াই পাত্তা দেন। আর অবরোধ-নিষেধাজ্ঞায় রুশ অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে, তা-ও বলার জো নেই। 

এর আগে ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে পূর্ব ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয় রাশিয়া। এখন ওই অঞ্চল পুরোপুরি রুশ মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত। ওই সময় ১৪ হাজারের মতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। যুদ্ধ শুরুর সময় রাশিয়া বলেছিল, অন্তত পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর দাবি, মাত্র দুই দিনেই তারা ইউক্রেনে তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু ইউক্রেন হাল ছেড়ে দেয়নি। তারা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে তারা পশ্চিমাদের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা অব্যাহতভাবে পাচ্ছে। বিশেষ করে, যুদ্ধবাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পূর্ণাঙ্গ সহায়তা পাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

আবার যুদ্ধের নানা পর্বে রুশ কৌশলের দিকে ভালোভাবে খেয়াল করলে এ প্রশ্নও জাগে, পুতিন কি ইচ্ছে করেই যুদ্ধ দীর্ঘ করছেন? কী কারণে? এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ধনকুবের রিপাবলিকান নেতা বলেছেন, তিনি ভোটে জিতলে ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন। পুতিনের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক বন্ধুত্বের কথা বহুল চর্চিত। পুতিন কি এই আশায় বসে আছেন, ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় এলে কিয়েভকে সব রকম সহায়তা দেওয়া বন্ধ করবে ওয়াশিংটন? এবং এও কি আশা করছেন পুতিন, যুদ্ধ শেষ করার চুক্তি হিসেবে তিনি ইচ্ছেমতো শর্ত আরোপ করবেন আর ইউক্রেন তা বাধ্যানুগত হয়ে মেনে নেবে? ফলে ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলের ওপর অনেকখানি নির্ভর করছে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি, যেমনটা নির্ভর করছে গাজা যুদ্ধের পরিণতি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫