Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

সামাজিক মাধ্যম কি সরকারবিরোধী কু-তথ্য ছড়াচ্ছে

Icon

অরুন্ধতী সুরঞ্জনা

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৩

সামাজিক মাধ্যম কি সরকারবিরোধী কু-তথ্য ছড়াচ্ছে

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্স। ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক মাধ্যম সেই সব মানুষকে তার কণ্ঠস্বর জানান দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে, যাদের কথা কেউ, বিশেষত কর্তৃপক্ষ, কখনো কান পেতে শুনতে চায়নি। ফলে অনেকেই বলে থাকেন, সামাজিক মাধ্যমগুলো গণতান্ত্রিক। তবে কোনো কোনো দেশে সরকারকে সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে ফেসবুক, এক্স ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে।

বিশেষ করে এই প্রশ্ন আছে, সামাজিক মাধ্যম কি স্বৈরশাসনকে সমর্থন জোগাচ্ছে? কিন্তু এর চেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে-গণতান্ত্রিক হওয়ার বদলে সামাজিক মাধ্যম কি স্বৈরাচারী আচরণ করছে? যেমন-বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক সরকার অভিযোগ করছে, বাক-স্বাধীনতার নামে সামাজিক মাধ্যমগুলো মূলত ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কু-তথ্য ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া অনেকের এই অভিযোগ তো রয়েছেই-ভিন্ন মত, লিঙ্গ, বর্ণ ও ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে ঘৃণা, হিংসা, কুৎসা ও কু-তথ্য ছড়াতে বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষকে মদদ দিয়ে আসছে সামাজিক মাধ্যম। 

সম্প্রতি তুরস্ক, ভেনেজুয়েলা, মালয়েশিয়া ও ব্রাজিল সরকার একাধিক সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক ‘টুইটার’) গত মাসে ৯ দিন বন্ধ ছিল ব্রাজিলে। বেঁধে দেওয়া শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে এক্স বন্ধ ছিল। এর আগে এক্সের বিরুদ্ধে দেশটিতে কু-তথ্য ছড়ানোরও অভিযোগ ওঠে। শর্ত বলতে, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ব্রাজিলে এক্সের একজন আইনি প্রতিনিধি নিয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ মাস্ক বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট অন্যায্য সেন্সরশিপ আরোপের চেষ্টা করছেন, তারা ব্রাজিলে সত্যের এক নম্বর উৎস বন্ধ করছেন। 

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দিয়ে একটি বিল পাস করেছে তুরস্ক, যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বেশ। নতুন আইনের অধীনে ফেসবুক ও এক্সকে তুরস্কে স্থানীয় প্রতিনিধি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু সরানোর ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ মেনে চলতে হবে অথবা বড় ধরনের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। সামাজিক মাধ্যমগুলো এই আইন মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানালে জরিমানা এবং এগুলো তা বন্ধ করেও দিতে পারবে তুরস্ক। এই আইন পাসের কদিনের মধ্যেই খবর পাওয়া যায়, তুর্কিরা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে পারছে না। দেশটির ‘আইন ও বিধি’ মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় এই প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয় প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের সরকার। আঙ্কারার অভিযোগ, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যাকাণ্ডের পর শোক জানিয়ে করা পোস্টগুলো ব্লক করে দিয়েছিল ইনস্টাগ্রাম। মূলত এর পরই ওই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। এরদোগান সামাজিক মাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ফ্যাসিবাদী আচরণের অভিযোগ তুলে বলেন, এই কোম্পানিগুলো ভার্চুয়াল জগতে ফিলিস্তিনি জনগণের গৌরবময় প্রতিরোধের বিরুদ্ধে ও বীরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। 

একই বিষয়ে সম্প্রতি মেটার মালিকানাধীন আরেক প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের সমালোচনা করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ডে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেই পোস্ট সরিয়ে ফেলে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মেটা কর্তৃপক্ষকে ‘কাপুরুষ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন আনোয়ার।

আগস্টে ভেনেজুয়েলায়ও এক্স বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা চলার মধ্যে এক্সকে ১০ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। তাকে গাধার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন মাস্ক। অন্যদিকে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে ও বিক্ষোভের পেছনে মাস্ক ইন্ধন জোগাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন মাদুরো।

শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারও ৫ আগস্ট মহাপতনের আগে কয়েক দফায় সামাজিক মাধ্যম বন্ধ রেখেছিল যেন সরকারবিরোধী কথা, কু-কথা না ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যম বলছে, তারা সত্য প্রচার করছে, সবার কথা প্রকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু সরকারগুলো বলছে, সামাজিক মাধ্যম বিরোধীদের উসকে দিচ্ছে, ঘৃণা ছড়াচ্ছে ও বিদ্বেষ বাড়াচ্ছে। প্রকৃত চিত্র আসছে কোনটা? সত্য-মিথ্যার বিতর্ক বাদ দিলে এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, সামাজিক মাধ্যম কি সরকারবিরোধী কু-তথ্য ছড়াচ্ছে? এর সঙ্গে তাদের বাণিজ্যের যে বড় যোগ আছে, তা বলা বাহুল্য।  

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫