Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

আফ্রিকায় চীনের বাণিজ্য বিস্তৃত হচ্ছে

Icon

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:১০

আফ্রিকায় চীনের বাণিজ্য বিস্তৃত হচ্ছে

আফ্রিকা ও চীনের পতাকা। ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন। আফ্রিকার সঙ্গে চীনের বাণিজ্য চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বেড়েছে।

চীনের সাধারণ শুল্ক প্রশাসনের (জিএসি) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, এ সময় আফ্রিকার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ১.১৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ১৬৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়সীমার তুলনায় ৫.৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে চীন-আফ্রিকা বাণিজ্য ২৮২.১ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড তৈরি করেছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ১.৫ শতাংশ বেশি। গত কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে চীন-আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ছে। ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনেও অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা আলোচিত হয়।

২০২৩ সালে চীনে আফ্রিকা থেকে বাদাম আমদানি আগের বছরের তুলনায় ১৩০ শতাংশ বেড়েছিল। একই বছর সবজি ৩২ শতাংশ, ফুল ১৪ শতাংশ ও ফল আমদানি ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। অন্যদিকে আফ্রিকায় চীনের পরিবেশবান্ধব গাড়ি রপ্তানি বেড়েছে ২৯১ শতাংশ। এ ছাড়া লিথিয়াম ব্যাটারি ১০৯ শতাংশ ও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরঞ্জাম রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বাড়ে। জিএসি জানিয়েছে, চীন ১৫ বছর ধরে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে রয়েছে। অব্যাহতভাবে এ বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি চীন-আফ্রিকা বাণিজ্যের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও ইতিবাচক উন্নয়ন নির্দেশ করে।

এ ছাড়া চীনের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০০৩ সালে আফ্রিকায় চীনের বার্ষিক এফডিআই-প্রবাহ ছিল প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা ২০২২ সালে ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এটি আফ্রিকা অঞ্চলের মোট এফডিআইয়ের প্রায় ৪.৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) হলো চীনের এফডিআই-এর কাঠামো, যার আওতায় পরিবহন, শক্তি ও খনির অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা হয়।

২০০৬ বেইজিং শীর্ষ সম্মেলন, ২০১৫ জোহানেসবার্গ শীর্ষ সম্মেলন এবং ২০১৮ বেইজিং শীর্ষ সম্মেলনের পর এবারের শীর্ষ সম্মেলনটি চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন। এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে অনুষ্ঠিত বৃহত্তম ইভেন্ট এবং সর্বাধিক বিদেশি নেতা এতে উপস্থিত ছিলেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তার স্ত্রী ফেং লিইউয়ান নর্থ হলে আসেন এবং শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানকারী আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসু-এনগুয়েসো, জিবুতির প্রেসিডেন্ট ইসমাইল ওমর গুলেহ, গিনির প্রেসিডেন্ট তেওডোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা এমবাসোগো, মালির প্রেসিডেন্ট অসিমি গোইটা, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট বাসিরু দিওমায়ে ফায়ে এবং চাদের প্রেসিডেন্ট মুসা ফকি মোহাম্মদসহ আফ্রিকার ২৫টি দেশের রাষ্ট্র অথবা সরকারপ্রধান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। আফ্রিকা মহাদেশের অন্তত ৫৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অথবা তাদের প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বেইজিং। পাশাপাশি প্রতিটি দেশের মন্ত্রিপর্যায়ের প্রতিনিধি দলও সম্মেলনে যোগ দেন।

গত ১১ বছরে বিআরআই প্রকল্পে যৌথভাবে নির্মিত প্রকল্পগুলো মঞ্চে প্রদর্শিত হয়। এরপর মঞ্চের মূল পর্দায় চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্বের সাক্ষ্য বহনকারী ৫৪টি সহযোগিতা প্রকল্প ক্রমানুসারে উপস্থাপন করা হয়। শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জিনপিং বলেন, ‘২৪ বছর আগে, নতুন শতাব্দীর শুরুতে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ফোরাম তৈরি হয়েছিল। এই গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করে আমরা রাস্তা, রেল, স্কুল, হাসপাতাল, শিল্প পার্ক এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে একসঙ্গে কাজ করেছি। যা অগণিত মানুষের জীবন ও ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।’

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের পক্ষ থেকে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে সেই ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সময় বৃদ্ধি ও শর্ত শিথিল করতে চাইবেন আফ্রিকার নেতারা। আর কূটনৈতিক লক্ষ্যের কারণে এতে কিছু ছাড় দিতে পারে চীন। আফ্রিকার নেতাদের নিয়ে এ সম্মেলনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চীনের প্রভাব বৃদ্ধির একটি কূটনৈতিক চেষ্টা হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক জানা ডি ক্লুভার। তিনি বলেন, ‘আফ্রিকা চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আফ্রিকার দেশগুলোর ভোটের একটা মূল্য আছে। আফ্রিকার দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে ছবি ও সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম তাদের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে জিনপিংয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের আফ্রিকা বিষয়ক কর্মসূচির প্রধান জয়নব ওসমানের মতে, ‘আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করাই এই সম্মেলনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অংশীদারত্বের সম্পর্কের সঙ্গে অর্থনীতির যোগ না থাকলেও এর চালিকাশক্তি হিসেবে থাকবে ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫