ভয় পেলেন? নাকি কৌশল নিলেন? কমলা হ্যারিসের সঙ্গে নতুন টেলিভিশন বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নারাজির পর দুটি প্রশ্নই সামনে এসেছে। বলা চলে, যে কোনো কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নিতে চান রিপাবলিকান এই প্রার্থী। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট, এমনকি এর আগের নির্বাচনের পরাজয় এখন অব্দি স্বীকার করেননি।

রাজনীতির মঞ্চে ট্রাম্পের আবির্ভাব এক রকম আকস্মিকই এবং ‘গোড়ায় গ-গোল’ নয়, ‘গোড়ায় গোল’ দিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থাকা প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। সার্বিক সরল ভোট গণনায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক ফার্স্ট লেডি ৩০ লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও ইলেক্টোরাল কলেজের নিয়মানুসারে জয়ী হন ধনকুবের ট্রাম্প। ফলে সেবার প্রথম নারী প্রেসিডেন্টের দেখা পায়নি মার্কিনিরা।

কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ভোটে হেরে যান ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে এবারও দাঁড়িয়েছিলেন বাইডেন। জুনে দুই নেতার মধ্যে প্রথম মুখোমুখি নির্বাচনী বিতর্ক হয়। এতে বিপর্যস্ত হন বাইডেন। এরপর দলের দাতা ও নেতাদের অব্যাহত চাপের মুখে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। দলটির বদলি প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা।

১০ সেপ্টেম্বর কমলার সঙ্গে এবিসি নিউজের আয়োজনে মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন ট্রাম্প। প্রথম নির্বাচনী বিতর্কে কমলাই জয়ী হয়েছেন বলে মনে করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এমনকি ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক ফক্স নিউজও স্বীকার করে নিয়েছে, বিতর্কে ট্রাম্প খুব খারাপ করেছেন। কমলা বিতর্কে ট্রাম্পকে গর্ভপাতের আইন, প্রেসিডেন্ট অফিসের জন্য তার ফিটনেস ও তার অগণিত আইনি লড়াইয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে প্রচণ্ড চাপে রেখেছিলেন। বিতর্কে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক অবস্থানে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি বেশ কিছু মিথ্যার আশ্রয় নেন। 

যদিও কমলার বিরুদ্ধে ভালো করেছেন বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। তবে রিপাবলিকান পার্টির ছয়জন দাতা ও ট্রাম্পের তিনজন উপদেষ্টা রয়টার্সকে বলেছেন, তারা মনে করেন, কমলা মূলত বিতর্ক জিতেছেন এ কারণে যে, ট্রাম্প নিজের বক্তব্যের মূল জায়গা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। ট্রাম্পের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কর্মীদের প্রধান মার্ক শর্ট বলেন, ‘অর্থনীতি ও সীমান্ত নিয়ে বাইডেন-কমলার বিরুদ্ধে মামলার বিচারের বিষয়ে জোর দেওয়ার একটি সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন ট্রাম্প। তার পরিবর্তে তিনি কমলার ফাঁদে পা দিয়ে অভিবাসীরা আমাদের পোষা প্রাণী খাচ্ছে- এমন অবান্তর দাবি করেছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের একাধিকবার বিতর্কে মুখোমুখি হওয়াটা ঐতিহ্য। কিন্তু ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি তৃতীয় কোনো বিতর্কে আর রাজি নন। মানে, কমলার সঙ্গে আর কোনো বিতর্কে মুখোমুখি হবেন না তিনি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কমলার সঙ্গে প্রথম বিতর্কে পরাজয়ের পর ট্রাম্পের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে। আর তাই তিনি কমলার মুখোমুখি না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

এবিসি নিউজের বিতর্কের পর অনলাইনে ‘প্রেডিকট ইট ২০২৪’-এ ট্রাম্পের জয়ের পক্ষে বাজির দর ৫২ শতাংশ থেকে কমে ৪৭ শতাংশ হয়েছে। বিপরীতে কমলার জয়ের পক্ষে বাজির দর ৫৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৫ শতাংশ হয়েছে। এই বিতর্কে উজ্জীবিত কমলার প্রচার দল ট্রাম্পকে অবিলম্বে দ্বিতীয় নির্বাচনী বিতর্কের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। কমলা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। ৫ নভেম্বরের ভোটে তিনি দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস গড়তে পারবেন কি?