Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

শ্রীলংকায় বামপন্থি দিশানায়েকের চমক

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:২৭

শ্রীলংকায় বামপন্থি দিশানায়েকের চমক

বামপন্থি নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। ছবি: সংগৃহীত

শ্রীলংকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন বামপন্থি নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। দেশটির দশম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। দিশানায়েকে নিজেকে পরিবর্তনের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রতিশ্রুতির কারণে ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

প্রসঙ্গত, চরম আর্থিক সংকটের মুখে ২০২২ সালে এক গণ-অভ্যুত্থানে অসীম শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবারের পতন হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার ভাই প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসে দেশ ছাড়া হন। পরে ওই বছরের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণ করেন ৭৫ বছর বয়সী রনিল বিক্রমাসিংহে। রাজাপাকসে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার সরকারের মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্ব পালনের জন্য বিক্রমাসিংহেকে নির্বাচিত করে দেশটির পার্লামেন্ট। তিনি ক্ষমতাগ্রহণের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ-সহায়তা নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় অনেকটাই কাটিয়ে ওঠেন। ২০২২ সালে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭০ শতাংশ। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী সেটি এখন ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়তে শুরু করে। তবে এক্ষেত্রে দেশটির সরকারের চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং সংস্কারকে কৃতিত্ব দেওয়া হয় বেশি।

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের পছন্দের প্রার্থী ছাড়াও পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে হয়। দ্বিতীয় দফার গণনা করা হয় সেই তালিকা দেখেই। তাতে যে প্রার্থী বেশি ভোট পান, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

শ্রীলংকার রাজাপাকসে পরিবারের প্রভাব এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তবে এবার নির্বাচনে রাজাপাকসে পরিবারের প্রার্থী ছিলেন নমাল রাজাপাকসে; মাহিন্দা রাজাপাকসের বড় ছেলে তিনি। ভোট পেয়েছেন ৩ লাখ ৪২ হাজার। গোতাবায়া ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজাপাকসেরা রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রেসিডেন্ট করে রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছিলেন। সেই রনিল নির্বাচনে ভোট পেয়েছেন ২৩ লাখ। আর জেভিপির প্রার্থী দিশানায়েক পেয়েছেন ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার ভোট।

অনূঢ়ার জন্ম এক গ্রামীণ মধ্যবিত্ত পরিবারে। কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক। স্কুলজীবন থেকে জেভিপির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০০ সালে প্রথম এমপি হন। অনূঢ়া ২০১৪ সালে জেভিপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তার পর থেকে তিনি দলের ভাবমূর্তিকে সহিংসতা থেকে আলাদা করায় ব্রতী হন। ১৯৭১ এবং তার পর ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে এই পার্টি মার্ক্সবাদে অনুপ্রাণিত বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল। রাষ্ট্র প্রতিশোধ-পাল্টা প্রতিশোধ নিতে দেরি করেনি। গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন, অপহরণ ও গণহত্যায় দলসংশ্লিষ্ট কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়। এর মধ্যে দলের প্রতিষ্ঠাতা রোহানা উইজেবিরাসহ বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতাও ছিলেন।

কিছু বিশ্লেষক এবং বিক্রমাসিংহের সমর্থকরা আইএমএফের সঙ্গে চুক্তির প্রশংসা করেছেন। তবে দিশানায়েকে বলেছেন, এই চুক্তি শ্রীলংকার সাধারণ নাগরিকদের জন্য কষ্ট ডেকে আনবে। জেভিপি চুক্তির শর্তগুলো নিয়ে পুনরায় আলোচনা করার পক্ষপাতী। চুক্তির পর সরকার কর বৃদ্ধি, ভর্তুকি হ্রাস এবং সরকারি খাতের সংস্কার প্রবর্তন করে। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। সরকার সামাজিক কল্যাণ সহায়তা হ্রাস করে। কর বৃদ্ধি, ভর্তুকি হ্রাসের প্রভাবে জ্বালানি এবং বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দাম হয় আকাশছোঁয়া। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলো হয়ে পড়ে দিশাহারা। দিশানায়েক বর্তমানে যে অর্থনৈতিক নীতির কথা বলছেন, এর সঙ্গে তার ঐতিহ্যগত সমাজতান্ত্রিক অবস্থানের এক বাঁকবদল ঘটে গেছে। তিনি এখন শুল্ক কাঠামোর সরলীকরণ, ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি, কর প্রশাসনের সংস্কার, দুর্নীতির অবসান এবং ব্যক্তিগত খাতকে প্রবৃদ্ধির চালক হিসেবে দাঁড় করার ওপর জোর দিয়ে একটি বাণিজ্য-সহায়ক পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেন।

গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে লংকার মানুষ কেবল নতুন নেতৃত্বই খুঁজে নেননি, এত দিনকার রাজনৈতিক অঙ্কও বদলে দিয়েছেন। অনূঢ়া প্রথম ভাষণে এটাকে তার দেশের ‘রেনেসাঁ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। রাজাপাকসে ভাইদের পদত্যাগের ফলে তৈরি হওয়া ক্ষমতার শূন্যতায় দিশানায়েকে এবং জেভিপি বৃহত্তর পরিবর্তনের ডাক দেয়। সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের অনড় অবস্থান নাগরিকদের আকৃষ্ট করেছে। প্রান্ত থেকে দলটি একটি আস্থাভাজন প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। দলের সঙ্গে বেড়েছে দিশানায়েকের ব্যক্তিগত আবেদন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫