
চীনের আবাসন প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিকভাবে চীনের দুর্দান্ত উত্থান এবং এতে রাশিয়াসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার জানান দেয়। তবে করোনা মহামারি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য-যুদ্ধ এবং ইউক্রেন যুদ্ধ চীনের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে ভোক্তাব্যয় কমেছে; কমেছে আবাসন খাতে বিক্রি। সম্প্রতি দেশটিতে যে জাতীয় দিবসের ছুটি গেল, ওই সময় দেশটির আবাসন বাজারে কেনাবেচার গতি বেড়েছে। চীন সরকার অর্থনীতি চাঙা করতে সম্প্রতি যে প্রণোদনা দিয়েছে, সে কারণে পরিস্থিতি বদলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, চীনের জাতীয় উৎসবে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে আসে। এ সময়ে প্রতিবছরই ভোক্তাব্যয় বৃদ্ধি পায়।
২০২২ সালের শেষ দিকে চীন যখন কোভিডজনিত বিধিনিষেধ পুরোপুরি তুলে নেয়, তখন ধারণা করা হয়েছিল, ক্রেতারা শপিং মলগুলোতে হামলে পড়বেন, বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ আবার বাড়বে, কারখানায় উৎপাদন বাড়বে এবং জমির নিলাম ও গৃহস্থালি কেনাকাটা স্থিতিশীল হবে; কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। এর বিপরীত চিত্রটাই ছিল সাধারণ। সেখানে দেখা যায়, চীনের মানুষ দুর্দিনের জন্য সঞ্চয় করছেন, বিদেশি ফার্মগুলো বিনিয়োগ তুলে নেয়, চাহিদা কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানাগুলো উৎপাদন কমিয়ে দেয়, স্থানীয় সরকারের রাজস্ব আয় ও অর্থায়ন মুখ থুবড়ে পড়ে আর সেই সঙ্গে আবাসন কোম্পানিগুলোর খেলাপি হওয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়।
চীনের প্রবৃদ্ধির মডেল এখন পর্যন্ত অর্থনীতিতে নির্মাণ খাতভিত্তিক। এটিকে ভোক্তাভিত্তিক প্রবৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারেনি দেশটি। ঋণের প্রবৃদ্ধির হার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, স্থানীয় সরকার ও আবাসন কোম্পানিগুলো এখন ঋণের ভারে হিমশিম খাচ্ছে। দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশ আসে আবাসন খাত থেকে। দেশটির মোট সম্পদের ৭০ শতাংশই এই খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশটির আবাসন মালিকরা আগের চেয়ে বেশি চাপ বোধ করছেন।
গত মাসে চীনের গুয়ানডং প্রদেশের গুয়াংঝু শহরে বাড়ি কেনার ওপর সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। সাংহাই ও শেনঝেন শহর কর্তৃপক্ষ বলেছে, এসব শহরে অন্যান্য শহরের মানুষের আবাসন কেনায় যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা শিথিল করা হয়েছে। আবাসন কেনার জন্য যে এককালীন অর্থ দিতে হয়, তা-ও কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে জাতীয় দিবসের ছুটির শুরু থেকেই চীনের অনেক শহরে বাড়ি বিক্রির সংখ্যা বেড়েছে। দেশটির আবাসন ও নগর-পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এ খবর জানিয়েছে। সপ্তাহব্যাপী ছুটিতে ২০টির বেশি প্রদেশের ১৩০টির বেশি শহরে বাড়ি বিক্রির নানা প্রচারমূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে শরৎকালীন বিক্রয়, হাউজিং এক্সপো এবং লাইভস্ট্রিমিং হাউস ভিজিট ছিল অন্যতম। এই প্রচার কার্যক্রমে জড়িত অনেক আবাসন প্রকল্পে দর্শনার্থীর সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। ছুটির প্রথম তিন দিনে বেইজিংয়ে বাড়ি কেনার জন্য আগ্রহী দর্শনার্থীর সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ৯২.৫ শতাংশ। পুরনো বাড়ি কেনার জন্য আগ্রহীদের আনাগোনা ছিল গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। সহস্রাধিক আবাসন কোম্পানি এই জাতীয় দিবসের ছুটির প্রচারে অংশ নিয়েছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে বিশাল প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে চীন। প্রায় এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ইউয়ানের এই প্রণোদনা মহামারি কোভিড ১৯-এর পর সবচেয়ে বড়। আবাসন খাতের দীর্ঘস্থায়ী ঋণসংকট, অব্যাহত মন্দার চাপ ও তরুণদের বেকারত্ব হ্রাসে এই প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন বাজারে প্রণোদনা দিতে বেশ কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন- এককালীন প্রদেয় অর্থের পরিমাণ কমানো ও বন্ধকি ঋণের সুদহার কমানো। এসব নীতিগত পদক্ষেপের কারণে চীনের আবাসন বাজারে গতি এসেছে।