Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

নারীর ভোটাধিকার জীবনের বিনিময়ে

Icon

সাফিন আহমেদ

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৩

নারীর ভোটাধিকার জীবনের বিনিময়ে

১৯১১ সালে যুক্তরাজ্যে নারীরা ভোটাধিকারের জন্য সমাবেশ করছেন। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনে নারীর ভোট দেওয়ার অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার, যা তার রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এবং পুরো সমাজের জন্য একটি সমৃদ্ধিশালী ও ন্যায়বিচারমূলক পরিবেশ গড়তে সাহায্য করে।

ভোট দেওয়ার অধিকার পেতে নারীকে এক দীর্ঘ ও কঠিন পথ পাড়ি দিতে, অসীম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ১৮৯৩ সালে নিউজিল্যান্ডের নারীরা প্রথম ভোট দেওয়ার অধিকার পান। নারীর ভোটাধিকারের ধারণা নানান দেশে ছড়িয়ে পড়লেও বিশ শতকের গোড়ার দিকেও ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিলেন খোদ ইংল্যান্ডের নারীরা! কেননা অন্যান্য অনেক দেশের মতো সেখানকার নারীদেরও পুরুষের সমকক্ষ বলে মনে করা হতো না। 

ব্রিটিশ নারী অধিকারকর্মী এমেলিন প্যাংকহার্স্ট ১৯০৩ সালের শেষের দিকে নারীর ভোটাধিকার এবং অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উইমেনস সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল ইউনিয়ন (ডব্লিউএসপিইউ) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রায় দুই বছর পর, ১৯০৬ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলে সাংবাদিক চার্লস ই হ্যান্ডস বিষয়টির বিরোধিতা করে একটি লেখা লেখেন। সেখানে লেখক এই সংগঠনের সদস্যদের ব্যঙ্গ করে ‘সাফ্রেজেটিস’ নাম দেন। 

‘সাফ্রেজেটিস’ বলতে সেই নারী আন্দোলনকারীদের বোঝানো হয় যারা ১৯ এবং ২০ শতাব্দীতে নারীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। যদিও এই শব্দের উৎপত্তি বিদ্বেষপ্রসূত এবং এটি ব্যবহার করা হতো ব্যঙ্গার্থে। তখনকার সময় বেশির ভাগ সংবাদপত্র নারীর ভোটাধিকারপ্রাপ্তির আন্দোলনকে অহেতুক, অসার এবং ফালতু আখ্যা দিয়ে নানান ধরনের রচনা প্রকাশ করে।

আন্দোলনে আত্মাহুতি 

ভোটাধিকারপ্রাপ্তির জন্য লড়া নারীরা কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। তারা কাজে বিশ্বাসী ছিলেন, কথায় নয়। এই আন্দোলনকারীরা জানালা ভাঙচুর করতেন, দালানে আগুন দিতেন এবং রেলিংয়ের সঙ্গে নিজেদের শিকলবন্দি করে রাখতেন ইস্যুটির প্রতি সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। কিন্তু এত করেও যেন কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। 

১৯১৩ সালে ব্রিটিশ ‘সাফ্রেজেট’ অধিকারকর্মী এমিলি ডেভিসন (১৮৭২-১৯১৩) ইংল্যান্ডের এপসম শহরে এক ঘোড়দৌড়ের সময় ঘোড়ার পায়ের নিচে পড়ে প্রাণ হারান। অনেকে মনে করেন, সেটি ছিল আত্মহত্যা। তবে এটা নিশ্চিত করা যায়নি যে তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন নাকি শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। 

যে ঘোড়ার পায়ের নিচে পড়ে প্রাণ হারান ডেভিসন, সেই ঘোড়াটি ছিল ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জের। সুতরাং এটা অসম্ভব নয় যে ডেভিসন নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই তা করেছিলেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যেই হোক, ডেভিসনের মৃত্যু আবারও ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসে।

অবশেষে সাফল্য

বেশ কয়েক বছর ভয়ডরহীন আন্দোলন করার পর অবশেষে সাফল্য ধরা দেয়। ১৯১৮ সালে ব্রিটিশ নারীরা ভোট দেওয়ার অধিকার পান। মার্কিন নারীরা পান এর দুই বছর পর, ১৯২০ সালে। এরপর ধীরে ধীরে অনেক দেশেই নারীরা ভোটাধিকার লাভ করেন। বর্তমানে বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া প্রায় সব অঞ্চলেই নারীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মধ্য এশিয়ার নারীরা ভোটাধিকার অর্জন করেন। মার্ক্সবাদীরা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করতেন, তাই ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের শেষ দিকে রাশিয়ার নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করা হয় এবং এ সময় রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্ত মধ্য এশীয় দেশগুলোতেও নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়। 

নারীদের ভোটাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে আইনি ও সাংবিধানিক সংশোধন আদায়ের জন্য নারীদেরকে এবং তাদের সমর্থকদেরকে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রচার চালাতে হয়েছে। বেশিরভাগ দেশে সম্পদশালী নারীরা অনেক আগেই ভোটের অধিকার পান, এমনকি সর্বজনীন পুরুষ ভোটাধিকারেরও আগে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাতিসংঘ নারীদের ভোটাধিকারকে উৎসাহী করতে থাকে এবং ১৯৮১ সালে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ নামক সনদটিতে জাতিসংঘের ১৮৯টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে নারীর ভোটাধিকারকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

নারীরা ভোটাধিকার পাওয়ার পর সমাজের উন্নয়নে তাদের ভূমিকা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোটাধিকার অর্জনের ফলে নারীরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন, যা তাদের মতামত ও চাহিদাগুলোকে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। নারীরা যখন নির্বাচনে ভোট দেন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসেন, তখন তারা বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং মানবাধিকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারেন। এই পরিবর্তনগুলো সমাজের সমৃদ্ধি এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে।

সুতরাং নারীদের ভোটাধিকার শুধু তাদের জন্য নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পৃথিবীতে এখনও সমান অধিকারের জন্য নারীদের লড়ে যেতে হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫