
ইস্পাত উৎপাদন। ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছর ইস্পাতের চাহিদা ১৭৫ কোটি ১০ লাখ টনে নেমে আসবে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন (ওয়ার্ল্ডস্টিল)। ইস্পাতের বৈশ্বিক চাহিদা নভেম্বর-ডিসেম্বরে আরও ০.৯ শতাংশ কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রধান ভোক্তা দেশ চীনে ধাতবটির চাহিদা কমে গেছে। তা আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে বৈশ্বিক চাহিদা কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাড়তে থাকবে; ২০২৫ সালে এ চাহিদা ১৭৭ কোটি ২০ লাখ টনে পৌঁছবে। এ চাহিদা ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলেও ওয়ার্ল্ডস্টিলের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
অর্থায়নের অভাব, মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ ব্যয়ের কারণে বিশ্বজুড়ে আবাসন শিল্প খারাপ পরিস্থিতি পার করছে। এর প্রভাবে ইস্পাতের চাহিদাও কমেছে বলে মনে করা হয়। জার্মান স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ওয়ার্ল্ড স্টিল ইকোনমিকস কমিটির চেয়ার মার্টিন থিউরিঙ্গার বলেন, ‘চলতি বছর বিশ্বব্যাপী ইস্পাতের চাহিদা কমে যাচ্ছে। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, কঠোর আর্থিক নীতিমালা ও ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বৈশ্বিক উৎপাদন খাত খারাপ সময় পার করছে।’
চাহিদা কমায় ইস্পাতের উৎপাদনও কমেছে। ওয়ার্ল্ড স্টিলের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টনে নেমেছে। গত বছরের একই সময় যা ছিল ১৫ কোটি ৭ লাখ টন। বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ চীন। সম্প্রতি দেশটির নির্মাণ খাতের কার্যক্রম কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে ইস্পাত উৎপাদনে। ওয়ার্ল্ড স্টিল জানায়, সেপ্টেম্বরে চীনে ধাতুটির উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.১ শতাংশ কমে ৭ কোটি ৭১ লাখ টনে নেমেছে। জুলাই ও আগস্টে দেশটিতে ইস্পাত উৎপাদন কমেছে যথাক্রমে ৯ ও ১০.৪ শতাংশ।
বেশ কয়েক মাস ধরেই ইস্পাত উৎপাদনে ঊর্ধ্বমুখিতা ধরে রেখেছিল ভারত। তবে গত মাসে এ দেশের উৎপাদনও কমেছে। সেপ্টেম্বরে ভারতের ইস্পাত উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ২ শতাংশ কমে ১ কোটি ১৭ লাখ টনে নেমেছে। বিশ্বে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদনে রাশিয়ার বড় একটি হিস্যা রয়েছে। সেপ্টেম্বরে দেশটিতে ধাতুটির উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৩ শতাংশ কমে ৫৬ লাখ টনে নেমেছে। এদিকে এ সময় জাপানের উৎপাদন কমেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৮ শতাংশ। মোট উৎপাদন নেমেছে ৬৬ লাখ টনে। গত মাসে ইরানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইস্পাত উৎপাদন কমেছে। ৪১.২ শতাংশ কমে ১৫ লাখ টনে নেমেছে।
তবে সেপ্টেম্বরে বিশ্বের কিছু দেশে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন বেড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার উৎপাদন ১.৩ শতাংশ বেড়ে ৫৫ লাখ টনে পৌঁছেছে। ব্রাজিলের উৎপাদন বেড়েছে ৯.৯ শতাংশ। মোট উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ টনে। সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনও ১.২ শতাংশ বেড়ে ৬৭ লাখ টনে পৌঁছেছে। জার্মানি ও তুরস্কে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন বেড়েছে যথাক্রমে ৪.৩ ও ৬.৫ শতাংশ। মোট উৎপাদন পৌঁছেছে ৩০ লাখ ও ৩১ লাখ টনে।
চলতি বছর দুর্বল উৎপাদন খাত ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে চীনসহ বড় অর্থনীতির দেশগুলোয় ইস্পাতের চাহিদা কমে যাওয়ার প্রাক্কলন করেছে ওয়ার্ল্ড স্টিল। তবে চলতি ও আগামী বছর ভারতে ইস্পাতের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। প্রাথমিকভাবে ভারতে ইস্পাতের চাহিদা ৮ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অবকাঠামোসহ আবাসন খাতে ইস্পাত ব্যবহার হয়, এমন খাতগুলোয় প্রবৃদ্ধি ইস্পাতের চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখবে।
ওয়ার্ল্ড স্টিল বলছে, আবাসন খাতে সমস্যার কারণে চীনে ইস্পাতের চাহিদা এখনও কম। ২০২৪ সালে দেশটিতে ইস্পাতের চাহিদা ৩ ও ২০২৫ সালে আরও ১ শতাংশ কমতে পারে। তবে সংস্থাটি বলেছে, ২০২৫ সালে চীনে ইস্পাতের চাহিদা সরকারি হস্তক্ষেপ এবং অন্যান্য পদক্ষেপের কারণে বাড়তে পারে। আবাসন খাতে স্থিতিশীলতা অর্জনে অগ্রগতি, সুদহার সামঞ্জস্যের মাধ্যমে ব্যক্তিগত খরচ ও ব্যবসায়িক বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে আগামী দিনগুলোয় ইস্পাতের চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।