Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প কার্ড : এভাবেও ফিরে আসা যায়

Icon

অরুন্ধতী সুরঞ্জনা

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৬

ট্রাম্প কার্ড : এভাবেও ফিরে আসা যায়

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩০ বছরের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। কারণ এই সময়ের মধ্যে একবার পরাজিত আর কোনো প্রার্থী পরের নির্বাচনে লড়ে প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। ট্রাম্পের জয়ে যেসব বিষয় ভূমিকা রেখেছে।

তিনি ক্ষমতায় ছিলেন না 

ভোটারদের কাছে নিশ্চিতভাবে অর্থনীতিই ১ নম্বর বিষয়। বেকারত্ব বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। বেশির ভাগ মার্কিন ভোটারের নাভিশ্বাস। এ রকম মুদ্রাস্ফীতি সত্তরের দশকের পর আর দেখা যায়নি। ফলে প্রচারসভায় গিয়ে ট্রাম্প এই প্রশ্নটা ঠিকঠাক করতে পেরেছেন, ‘চার বছর আগে যেমন ছিলেন, এর চেয়ে কি বেশি ভালো আছেন আপনারা?’ ২০২৪ সালে যেসব নির্বাচন হয়েছে বিশ্বজুড়ে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভোটাররা ক্ষমতাসীন দলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর একটি কারণ কোভিড-১৯-পরবর্তী জীবনযাপনের ব্যয়বৃদ্ধি। মার্কিন ভোটাররাও সম্ভবত মুখিয়ে ছিলেন বদলের আশায় এবং পরিবর্তন ঘটেছে। 

খারাপ খবরেও কিছু আসে যায় না : ক্যাপিটল হিলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির দাঙ্গা নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব অপরাধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ট্রাম্পের জনসমর্থন সারা বছর ৪০% বা তার ওপরে স্থিতিশীল রয়েছে। ডেমোক্র্যাট ও ‘নেভার ট্রাম্প’ বলে পরিচিত রক্ষণশীলরা বলে থাকেন, ট্রাম্প অফিসের জন্য অযোগ্য। তবে বেশির ভাগ রিপাবলিকান মনে করেন, ট্রাম্প সত্যিই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, যেমনটা সাবেক এই প্রেসিডেন্ট দাবি করে আসছেন। 

অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কড়া সুর : অর্থনীতির বাইরে আবেগেরও একটা প্রভাব আছে মার্কিন নির্বাচনে। যেমন- ডেমোক্র্যাটরা গর্ভপাত নিয়ে প্রচার-রাজনীতি করে। রিপাবলিকানরা অভিবাসন নিয়ে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলে সীমান্তে যে পরিমাণ অভিবাসী ঢুকেছে, সেই কারণে জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসন ইস্যুতে ভোটাররা ট্রাম্পকে বেশি বিশ্বাস করেন। এমন পক্ষাবলম্বনের সুফলও পেলেন তিনি। 

ঝুলিতে কম শিক্ষিত ভোটার : ট্রাম্পের অন্যতম প্রচার সাফল্য হলো তিনি মার্কিন রাজনীতিতে প্রান্তিক ও কম শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও ভোটারকে টানতে পেরেছেন। যেমন- ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত আসনগুলোয় ইউনিয়ন শ্রমিকদের তিনি রিপাবলিকান দলে ভেড়াতে সমর্থ হয়েছেন।  

অস্থিতিশীল বিশ্বে শক্তিশালী মানুষ : তার সমালোচকরা বলে থাকেন, স্বৈরশাসকদের সুরে ট্রাম্প মার্কিন মিত্রদের খাটো করেছেন। তাকে যে ঠিকমতো বোঝা যায় না, এটাই আসলে ট্রাম্পের মূল শক্তি। এটাও খেয়াল রাখতে হবে, তিনি যখন হোয়াইট হাউসে ছিলেন, বড় কোনো যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়ায়নি। ইউক্রেন ও ইসরায়েলে যে বিশাল অঙ্কের অর্থ যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ করছে, এ নিয়ে বিভিন্ন কারণে অনেক মার্কিন নাগরিক ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেন, বাইডেনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল। বিশেষ করে পুরুষ ভোটাররা মনে করেন, কমলার চেয়ে ট্রাম্প বেশি শক্তিশালী নেতা।  

ডেমোক্র্যাটদের অঙ্কে ভুল কোথায় 

এখন অব্দি যুক্তরাষ্ট্র কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারেনি। কমলা হ্যারিস জয় পেলে তিনি হতেন দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। আশা জাগিয়েও কেন হেরে গেলেন এই নারীবাদী নেতা? কমলার দলের মধ্যে যে উৎসাহের জোয়ার দেখা গেছে তাতে যে বড় ফাঁক ছিল, সেটা ফলাফল দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মাঠ পর্যায়ের প্রচার নিয়েও তাদের অনুমান ছিল অতিরঞ্জিত। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ‘দিন বদলের’ পক্ষের প্রার্থীর যে জয় হয়, তা ধ্রুপদি সত্য। এবারও তাই ঘটল। ডেমোক্র্যাটরা সব সময়ই ভোটারদের অসন্তোষকে বিরাজমান পরিস্থিতি দিয়েই মোকাবিলা করতে চেয়েছেন। ‘দেশকে সঠিক পথে আনার’ প্রচার চালাতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। নারীদের উদ্দীপনায় কমলার যে বিশ্বাস ছিল, তা বাস্তবে ঘটেনি। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের সময়ও এমনটিই ঘটেছিল। এখন অবশ্য ডেমোক্র্যাট শিবিরে অন্তঃকোন্দল শুরু হয়েছে, ভুল কার- কমলার, বাইডেনের নাকি দলের, তা নিয়ে।

মার্কিন নির্বাচনের বিশ্বব্যাপী প্রভাব 

বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীন ও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের রূপরেখায় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বলে অনুমান করা যায়।

বদলে যাবে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ : ট্রাম্পের জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। এর আগে ট্রাম্পের কিছু মন্তব্য থেকে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি কী হবে তা নিয়ে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। গত বছর ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের সমাধান করবেন। এর আগে এক বক্তব্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসাও করেছিলেন ট্রাম্প। একই সময়ে যুদ্ধের মধ্যে অতিরিক্ত মার্কিন সহায়তার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুরোধের সমালোচনাও করেছিলেন ট্রাম্প। গত জুনেও এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার আগেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি নির্ধারণ করে ফেলবেন। এর আগে ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতার মাধ্যমে শান্তিচুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প আরো বলেছেন, ইউক্রেনকে আর কোনো আর্থিক সহায়তা দেওয়া উচিত নয় এবং এ বিষয়ে কংগ্রেসে আনা সহায়তা বিলের বিরোধিতা করেছেন। 

চীনের ওপর চাপবে আরো শুল্ক : বেইজিং-বিরোধী হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরছেন। এর প্রভাব পড়বে বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী দেশের অর্থনীতিতে। অন্তত একটি বিষয় নিশ্চিত, চীনের ওপর চাপতে যাচ্ছে আরো শুল্ক। হোয়াইট হাউসে যিনিই আসুন না কেন চীনের ওপর শুল্ক চাপানো চলমানই থাকবে। এবারের পরিস্থিতি ২০২০ সালের তুলনায় ভিন্ন। অনেক ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা নতুন বিনিয়োগ বন্ধ রেখেছেন। চীনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লাগাম টানতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলই এক সুরে কথা বলে। দুই শীর্ষ অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাণিজ্য আগামী দিনে আরো চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যাবে। তবে নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীন প্রস্তুত বলে জানিয়েছে বেইজিং। 

ঘুঁচতে পারে ভারত-মার্কিন ‘দূরত্ব’ : বিগত বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বন্ধু’ হয়ে উঠেছিল ভারত। তবে এই শেষ চার বছরে কিছুটা ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। সে ক্ষেত্রে খালিস্তানি ইস্যু, ইউক্রেন যুদ্ধ, রাশিয়ার থেকে তেল কেনা ইত্যাদি নানা বিষয় রয়েছে। এর আগে রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়েও দিল্লির ওপর ওয়াশিংটনের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা দেখা গিয়েছিল। আবার খালিস্তানি নেতা পান্নুন হত্যার পরিকল্পনায় ভারতীয় সরকারি সাবেক এজেন্টকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে সে দেশের বিচার বিভাগ। আবার খালিস্তানি নেতা নিজ্জর খুনের ঘটনায় কানাডার ‘পাশে’ দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমতাবস্থায় সম্প্রতি ডেমোক্র্যাট সরকারের সঙ্গে ভারতের মোদি সরকারের কিছুটা হলেও ‘দূরত্ব’ দেখা গেছে। ট্রাম্পের শাসনামলে ভারতের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক বেশ ‘মধুর’ ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫