রাশিয়ায় মার্কিন অস্ত্র দিয়ে হামলা ইউক্রেনের

অরুন্ধতী সুরঞ্জনা
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৯

রাশিয়ার ভূখণ্ডে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে হামলা চালানোর অনুমতি ইউক্রেনকে দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। এমন অনুমোদনের এক দিন পরই ব্রিয়ানস্ক এলাকায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, তারা পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে এবং একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিকল হয়েছে।
বাইডেনের এমন বিতর্কিত অনুমোদনে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নিয়ে ওয়াশিংটনের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করবেন। এর দুই মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিল। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চল থেকে দূরে দেশটির ভূখণ্ডের গভীরে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর অনুমতির জন্য কয়েক মাস ধরে অনুরোধ করে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে এটিএসিএমএস রকেট দিয়ে আরো হামলা চালানো হতে পারে। এসব রকেট ৩০৬ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে হামলা চালানোর অনুমতি যুদ্ধের গতিপথ কতটা বদলাতে পারবে, তা নিয়ে কিছু মার্কিন কর্মকর্তা সংশয় প্রকাশ করেছেন।
তবে ক্ষমতা নেওয়ার পর ট্রাম্প বাইডেনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। ইউক্রেনকে যে পরিমাণে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল, ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে সেটার সমালোচনা করে আসছিলেন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তা কীভাবে করবেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি। এদিকে রিপাবলিকান পার্টির কিছু কংগ্রেস সদস্য ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহারের নীতিমালা সহজ করার জন্য বাইডেনকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
কেন নীতি বদলালেন বাইডেন
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে হামলা চালাতে এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে এ ধরনের হামলায় ওয়াশিংটনের সায় ছিল না। মার্কিন প্রশাসনের আশঙ্কা ছিল, রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে কিয়েভকে হামলা চালানোর অনুমতি ইউক্রেন যুদ্ধের আরো সম্প্রসারণ ঘটাতে পারে।
ন্যাটোয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত কুর্ট ভলকার বলেছেন, যুদ্ধে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের পরিসর সীমিত রেখে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন অযৌক্তিকভাবে ইউক্রেনের আত্মরক্ষায় একতরফা বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে। এই কূটনীতিক আরো বলেন, এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত ‘পুরোপুরি স্বেচ্ছাচারী’ এবং রাশিয়াকে উসকানি না দেওয়ার আশঙ্কা থেকে করা হয়েছিল।
এখন ওয়াশিংটনের নীতি পরিবর্তনের বড় কারণ হতে পারে উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের কুরস্ক অঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এসব সেনা যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করছেন। ওই অঞ্চলটি গত আগস্ট থেকে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধবে
নীতি বদলে যে নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে বাইডেন প্রশাসন, এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিন বলছে, বাইডেন বিদায়ের আগে ‘আগুনে ঘি ঢালছেন’। ওয়াশিংটনের এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রুশ শীর্ষ আইন প্রণেতারা। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সদস্য আন্দ্রেই ক্লিশাস মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেন, পশ্চিমারা এমন একটি মাত্রায় উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে, যা এক রাতে ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। রাশিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির প্রথম ডেপুটি প্রধান ভ্লাদিমির জাবারভ বলেন, এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এ বিষয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন। এর আগে তিনি বলেন, পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভেতরে হামলার ঘটনাকে মস্কো-ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো দেশগুলোর ‘সরাসরি অংশগ্রহণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। এই যুদ্ধে বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। বহু আবাসিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উভয় দেশের সেনার প্রাণহানি হয়েছে। যুদ্ধে রাশিয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। এসব অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে পুতিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তবে পুতিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।