
ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগে নিজের পরবর্তী প্রশাসন গোছানোর কাজ শেষ করে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারও একান্ত অনুগতদের দিয়েই প্রশাসন সাজালেন তিনি। যাদের বাছাই করেছেন, তাদের মধ্যে আছেন তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী, বিভিন্ন খাতের নামকরা ব্যক্তি এবং তুলনামূলক স্বল্প পরিচিত ব্যক্তিও। দ্বিতীয় মেয়াদের এই মন্ত্রিসভায় পাঁচ নারী রয়েছেন। নবীন-প্রবীণের মিশেলে বৈচিত্র্যময় কর্মক্ষেত্র থেকে উঠে আসা ১৫ ব্যক্তিকে নিয়ে নিজের পরবর্তী প্রশাসন সাজিয়েছেন হবু মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যদিও তাদের সবার নিয়োগ চূড়ান্ত হতে মার্কিন সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
মার্কো রুবিও, পররাষ্ট্রমন্ত্রী : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্কো রুবিওকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। রুবিও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর। তিনি বিগত বছরগুলোতে চীন, ইরান, কিউবাসহ যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান রেখেই শক্তিশালী মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে কথা বলেছেন। কিউবান অভিবাসী মা-বাবার সন্তান রুবিও। তিনি ইসরায়েলের একনিষ্ঠ সমর্থকও এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্রাদিমির পুতিনের দীর্ঘদিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত।
পিট হেগসেথ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী : প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে মনোনয়ন পেয়েছেন পিট হেগসেথ। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের উপস্থাপক ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ডের সাবেক এই সদস্য বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের কর্মীদের সামলাতে হবে তাকে। ট্রাম্পের প্রিয় সংবাদ নেটওয়ার্ক ফক্স নিউজে ২০১৪ সালে যোগ দেন হেগসেথ।
ডগ বারগাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ৬৮ বছর বয়সী ডগ বারগামকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি নর্থ ডাকোটার গভর্নর। সম্পদশালী বারগাম একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের সাবেক নির্বাহী। বারগাম নিজেকে একজন প্রথাগত ব্যাবসায়িক মনমানসিকতার রক্ষণশীল ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে একসময় রিপাবলিকান পার্টি থেকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। পরে অবশ্য মনোনয়নের দৌড় থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন, ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেন।
স্কট ব্যাসেন্ট, অর্থমন্ত্রী : অর্থমন্ত্রী পদে স্কট ব্যাসেন্টকে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের করনীতি, সরকারি ঋণ, আন্তর্জাতিক অর্থায়ন, নিষেধাজ্ঞার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলিতে তিনি নেতৃত্ব দেবেন। ব্যাসেন্ট ওয়াল স্ট্রিটের স্বনামধন্য বিনিয়োগকারী।
হওয়ার্ড লাটনিক, বাণিজ্যমন্ত্রী : বাণিজ্যমন্ত্রী পদে ধনকুবের হওয়ার্ড লাটনিক মনোনয়ন পেয়েছেন। লাটনিক মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ক্যানটর ফিৎসজেরাল্ডের প্রধান। তিনি রিপাবলিকান পার্টির ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতিসংক্রান্ত দলের কো-চেয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ট্রাম্পের ভাষ্য, লাটনিকের ওয়াল স্ট্রিটে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করার দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।
লোরি শাভেজ-ডিরেমার, শ্রমমন্ত্রী : শ্রমমন্ত্রী পদে ৫৬ বছর বয়সী লোরি শাভেজ-ডিরেমারের নাম ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান এই রাজনীতিক ওরেগন থেকে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচিত সদস্য। তার প্রতি ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সমর্থন রয়েছে।
ব্রুক রলিন্স, কৃষিমন্ত্রী : দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ব্রুক রলিন্সকে কৃষিমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প। রলিন্স চিন্তক-প্রতিষ্ঠান আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অফিস অব আমেরিকান ইনোভেশনের পরিচালক ছিলেন তিনি। এ ছাড়া রলিন্স হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ নীতি কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আর এফ কে জুনিয়র, স্বাস্থ্যমন্ত্রী : ৭০ বছর বয়সী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদে মনোনয়ন পেয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন তিনি। খ্যাতিমান এই মার্কিন রাজনীতিককে নিয়ে রয়েছে বিতর্কও। করোনার টিকার বিরোধিতা করে এ নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বও প্রচার করেন তিনি।
লিন্ডা ম্যাকমোহন, শিক্ষামন্ত্রী : ট্রাম্প তার ট্রানজিশন টিমের কো-চেয়ার লিন্ডা ম্যাকমোহনকে দেশটির পরবর্তী শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন। লিন্ডা ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের (ডব্লিউডব্লিউই) সাবেক নির্বাহী। তিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে প্রশাসক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০২১ সাল থেকে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের বোর্ড চেয়ারপারসন হিসেবে কাজ করেছেন লিন্ডা।
ক্রিস রাইট, জ্বালানিমন্ত্রী : ক্রিস রাইটকে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিমন্ত্রী করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। রাইট জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে। লিবার্টি এনার্জি নামের ডেনভারভিত্তিক একটি তেলক্ষেত্র পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তিনি। তেল-গ্যাসের সর্বোচ্চ উৎপাদনের পক্ষে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় তিনি সমর্থন দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর উপায় খুঁজতে ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেবেন।
সোন ডাফি, পরিবহনমন্ত্রী : পরিবহনমন্ত্রী পদে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য সোন ডাফিকে মনোনয়ন দিয়েছেন। উইসকনসিন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ডাফি ‘ফক্স বিজনেস’ নামের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন।
ডগ কলিন্স, ভেটেরানস অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী : ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ডগ কলিন্সকে ভেটেরানস অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি একজন আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিক।
ক্রিস্টি নোয়েম, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক মন্ত্রী : হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পাচ্ছেন সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম। করোনা মহামারির সময় নিজের অঙ্গরাজ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার বিরোধিতা করে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন।
স্কট টার্নার, আবাসন ও নগর উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী : আবাসন ও নগর উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী পদে মনোনয়ন পেয়েছেন স্কট টার্নার। তিনি ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সাবেক ফুটবলার। টার্নার এর আগে হোয়াইট হাউসের সুযোগ ও পুনরুজ্জীবন কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
পাম বন্ডি, অ্যাটর্নি জেনারেল : অ্যাটর্নি জেনারেল পদে পাম বন্ডি মনোনয়ন পেয়েছেন। ফ্লোরিডার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন বন্ডি। তিনি ট্রাম্পের আগের মেয়াদে মাদক ও ওষুধের অপব্যবহারসংক্রান্ত কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। চিন্তক প্রতিষ্ঠান আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের আইনি শাখার নেতৃত্ব পর্যায়েও দায়িত্ব পালন করেছেন বন্ডি। এই থিংকট্যাংকের কর্মীরা ট্রাম্পকে নীতিনির্ধারণে সহায়তা করেছেন।