Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

বুমেরাং হতে পারে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ

Icon

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৪

বুমেরাং হতে পারে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ। ছবি: সংগৃহীত

আট বছর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইস্যু ছিল মেক্সিকো ও চীন। মেক্সিকোতে কংক্রিটের দেওয়াল তোলার প্রস্তাবও করেছিলেন। অন্যদিকে নিরাপত্তার নামে চীনা কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাণিজ্য গুটিয়ে নিতে বাধ্য করা হচ্ছিল। তখন ট্রাম্পের অস্ত্র ছিল নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপ। পরে তা গড়ায় চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধে। ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে পরাজিত করলেও তার চীনবিরোধী অর্থনৈতিক নীতি চালিয়ে যান ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। 

২০২৪ সালে নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, আগের চীনবিরোধী নীতিতে তিনি অটল রয়েছেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর হোয়াইট হাউস প্রশাসন সাজানোর ক্ষেত্রেও তা প্রকাশ পেয়েছে। ২০ জানুয়ারি তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের দিনই চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এবারের বাণিজ্যযুদ্ধে আগের মতো ট্রাম্পের পাল্লা ভারী থাকছে না। চীন এবার আগে থেকেই এর প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। ফলে এই বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রকেও ভোগাতে পারে।

ট্রাম্পের আগের শাসনামল এবং এবারের নির্বাচনী ইশতেহার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সামরিক যুদ্ধের প্রতি তার তেমন আগ্রহ নেই। এর বিপরীতে তার ভাবনায় রয়েছে বাণিজ্যযুদ্ধ। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সব আমদানি দ্রব্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করবে। চীনের পণ্যে যা হবে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে রপ্তানিনির্ভর প্রায় সব দেশকেই বাণিজ্যনীতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে উচ্চ শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছিল। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের সমর্থকরা আশা করেছিলেন যে, শুল্ক আরোপের কারণে মার্কিন নাগরিকরা বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য কিনতে নিরুৎসাহিত হবে এবং এর পরিবর্তে আরো বেশি নিজেদের দেশে তৈরি পণ্য কিনবে। দেশীয় পণ্যের চাহিদা বাড়লে তা মেটাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব কমে যাবে। আবার আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেশি হলে সামগ্রিকভাবে দেশের জিডিপির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। জিডিপির এই অতি বাড়াবাড়ির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়ে যায়; কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পণ্যের সরবরাহ থাকেনি। এর ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। 

বাণিজ্যযুদ্ধের সমর্থকরা আমলে নেননি যে, চীন ও ইউরোপও তাদের নিজস্ব শুল্কের মাধ্যমে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানি পণ্যের অর্ধেকের বেশি কাঁচামাল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টরিগুলোতে উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। অতিরিক্ত শুল্কারোপ এই আমদানীকৃত উপকরণগুলোর ক্রয় খরচ বাড়িয়ে দেয়। আমদানীকৃত উপকরণের মূল্য বেশি থাকায় উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়ে। ফলস্বরূপ অপ্রত্যাশিত মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এবার অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ হলে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি আরো অধিক হারে বাড়তে পারে, যা আদতে মার্কিন অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করবে।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় অনেকটা মুখ বুজে মার্কিন শুল্ক আক্রমণ সহ্য করেছিল চীন। বাইডেনের সময়ও চীনবিরোধী বিভিন্ন বাণিজ্যিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে কড়া বিবৃতির বাইরে বেইজিংকে দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এর ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে। ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে চীন দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার বিশ্বাস, চীন-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা প্রকৃতপক্ষে পারস্পরিক লাভজনক। বাণিজ্যযুদ্ধের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়; কোনো পক্ষই এতে বিজয় অর্জন করতে পারবে না। চীন সব সময় আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে প্রস্তুত, যদিও নিজের অধিকার রক্ষায় পিছপা হবে না চীন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করতে থাকে বেইজিং। তখনই তারা মার্কিন কোম্পানিগুলোর চুক্তি পর্যালোচনাসহ প্রয়োজনীয় আইন পাস এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কাজ শুরু করে; যেন প্রয়োজনে এসব কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যায়। মার্কিন কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখতেই এসব পদক্ষেপ নেয় চীন।

এরই মধ্যে মার্কিন ড্রোন কোম্পানি স্কাইডিওর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বেইজিং। এটি কার্যত মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য এক সতর্কবার্তা। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ড্রোন নির্মাতা কোম্পানিটির ড্রোনগুলোতে ব্যবহৃত ব্যাটারিগুলোর উৎস মূলত চীন। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তারা এখন বেকায়দায় পড়েছে। কারণ শিগগিরই চীনা ব্যাটারির বিকল্প খুঁজে বের করা কিংবা নতুন পদ্ধতি তৈরি করা সহজসাধ্য কাজ নয়। এ জন্য কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। অতিরিক্ত মূল্যে ব্যাটারির ব্যবস্থা করা হলে ড্রোনের দামও বৃদ্ধি পাবে। আর তা আদতে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পকেট থেকেই যাবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫