Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আফগান অর্থনীতি

Icon

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আফগান অর্থনীতি

ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে আফগান অর্থনীতি। ছবি: সংগৃহীত

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তালেবান যখন ক্ষমতা দখল করে তখন দেশটি ছিল বৈদেশিক মুদ্রাশূন্য দুর্ভিক্ষের এক দেশ। অর্থনীতি ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত। সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে আফগান অর্থনীতি। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আফগানিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৭ শতাংশ। মূলত ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আফগানিস্তান এই প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে। তিন বছর আগে তালেবানের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর এবারই প্রথম আফগান অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হলো।

বিদেশি সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন দেশে আফগানিস্তানের তহবিল অবরুদ্ধ হয়, দেশ ছেড়ে যান অনেক দক্ষ কর্মী। এ কারণে বিপদে পড়ে আফগানিস্তান। তালেবান সরকার তাদের আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যও পুনরুজ্জীবিত করতে পেরেছে। তারা দুর্নীতি হ্রাস, কর সংগ্রহ বৃদ্ধি ও মুদ্রার বিনিময় মূল্য বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে দেশটি তার সুফল পেতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় প্রবৃদ্ধির দেখা পায় আফগানিস্তান।

তবে এখনো আফগানিস্তানের অর্থনীতি অনেক দুর্বল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিবেশী পাকিস্তান থেকে ফিরতে থাকা নিজ দেশের শরণার্থী নাগরিকের ঢল তালেবানের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। তালেবান নারী শিক্ষা প্রায় নিষিদ্ধ করেছে। সব ধরনের চাকরি থেকে নারীদের বরখাস্ত করেছে। এসব কিছুও দেশটির অর্থনীতির জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা।

প্রসঙ্গত, গত অর্থবছরে আফগানিস্তানের রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও আমদানির ঊর্ধ্বগতির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। খাদ্য, জ্বালানি ও যন্ত্রপাতির জন্য বিদেশনির্ভরতা দেশটির স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য এখন বড় হুমকি। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা ছাপাতে পারে না। তাদের বিদেশে মুদ্রা নোট ছাপাতে হয়। দেশটিতে সুদের লেনদেনও নিষিদ্ধ। তাই ব্যাংকগুলো অর্থ ধার দেওয়া বন্ধ রেখেছে। আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত না হওয়া তালেবান সরকার বিদেশ থেকে ঋণ সহায়তাও পাচ্ছে না। দেশটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেনও বন্ধ। 

বিশ্বের কোনো দেশ এখন পর্যন্ত তালেবানকে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও তারা চীন ও রাশিয়ার মতো আঞ্চলিক বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেছে। এমনকি তাদের প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন বৈঠকেও অংশ নিয়েছেন। চাপ সত্ত্বেও জাতিসংঘের এসব বৈঠকে কোনো নারী বা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি রাখেনি তালেবান। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তালেবানের সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেন করছে। আন্তর্জাতিক 

স্বীকৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কাতার। আর আমিরাতের উড়োজাহাজ সংস্থার সহায়তাও তালেবানের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

সংকট কাটাতে তালেবান নানা ধরনের কর নির্ধারণ করেছে। ২০২৩ সালে তারা প্রায় ২৯৬ কোটি ডলার রাজস্ব সংগ্রহ করেছে। কিন্তু ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি চাঙা করতে তাদের আরো অনেক বেশি অর্থ প্রয়োজন। তালেবানের সবচেয়ে বড় সাফল্য কৃষি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। আফগানিস্তান একসময় বিশ্বে আফিম উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে ছিল। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফিম উৎপাদনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত দপ্তর এক প্রতিবেদনে বলছে, ২০২৩ সালে সারা দেশে আফিম চাষ দুই লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর থেকে কমে মাত্র ১০ হাজার ৮০০ হেক্টরেরও কম হয়েছে। আফিমের উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে ৯৫ শতাংশ কমে ৩৩৩ টনে দাঁড়িয়েছে। আফিমের বদলে তালেবান সরকার জাফরান আবাদ বাড়াচ্ছে। ডালিমও আফগানিস্তানের অন্যতম কৃষিপণ্য। দেশটিতে প্রচুর ডালিম চাষ বেড়েছে গত কয়েক বছরে। এতদিন ফল হিসেবে ডালিম রপ্তানি হলেও এখন সেটি পানীয় আকারে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশটির পামির কোলা ‘শাফা’ ব্র্যান্ডের পানীয় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে এটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

মূলত তালেবানের নীতিগত পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে দেশটির অর্থনীতিতে। আফগানিস্তান খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এক অঞ্চল। সেখানে যে পরিমাণ লিথিয়াম আছে, তার মূল্য প্রায় তিন লাখ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছর লৌহ, আকরিক ও স্বর্ণের খনি নির্মাণে চীনা, ব্রিটিশ ও তুর্কি কোম্পানির সঙ্গে তালেবান সরকার ৬৫০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে। গত বছর জানুয়ারি মাসে তেল উত্তোলনের জন্য চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে তালেবান।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫