
ভারতের মানচিত্র। ছবি: সংগৃহীত
কেরালার ওয়েনাড়ে ভয়াবহ বন্যা, চিকিৎসক তরুণী হত্যাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন বা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিরূপ সম্পর্ক- সব মিলিয়ে চলতি বছরটি ভারতের জন্য ভালো যায়নি। নির্বাচনের বছরে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির জন্য বড় ধাক্কা ছিল এককভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়া।
‘অভয়া’ বৃত্তান্ত : এক অতল অন্ধকূপ
৯ আগস্ট ছিল এক বেদনাদায়ক দিন। কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডাক্তার ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল হয় দেশ। ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ স্লোগান ওঠে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ মূল অভিযুক্ত হিসেবে সঞ্জয় রায় নামে সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করে। পরে সিবিআই তদন্তভার গ্রহণ করে পুলিশের হাতে ধৃত সঞ্জয়ের বিরুদ্ধেই চার্জশিট পেশ করে। বর্তমানে শিয়ালদহ আদালতে সেই মামলা চলছে। খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও অন্যতম তদন্তকারী পুলিশ অফিসার অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে জামিনে মুক্ত হন। এই নৃশংস ঘটনায় দেশের শীর্ষ আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা গ্রহণ করে। এদিকে সহকর্মীর সুবিচারের দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ প্রায় এক মাস কর্মবিরতি পালন করে। চলে অনশনও। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে কাজে ফেরেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। তবে আন্দোলন পুরোপুরি নিভে যায়নি।
জ্বলছে মণিপুর
জাতিগত সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে গত বছর থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুর জ্বলছে। নানা সহিংসতা-হানাহানির মাঝে বছরের শেষদিকে জিরিবাম প্রদেশের এক দৃশ্য কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছিল গোটা দেশকে। কুকি সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে সশস্ত্র মেইতি জাতিগোষ্ঠীর দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। তার বদলা নিতে এক মেইতেই পরিবারের নারী, শিশুসহ ছয় সদস্যকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আর তা আবারও কুকি-মেইতেই সংঘর্ষ বাড়িয়ে তোলে। এর বিপরীতে পুলিশের গুলিতে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। তাদের সশস্ত্র ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। নতুন করে কারফিউ জারি হয়। কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি; অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে সহিংসতার আগুন নেভাতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভারত-মালদ্বীপ সংঘাত
৪ জানুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরের পর মালদ্বীপ-ভারত সংঘাত সামনে আসে। মোদিকে নিয়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুইজ্জুর দলের একাধিক নেতা। ক্ষমতায় আসার পর মালদ্বীপে থাকা ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদেরও প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় ভারত। তবে অর্থনৈতিক বিনিয়োগের প্রশ্নে ভারত নতুন করে মুইজ্জুর সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তৈরি করে।
বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানে বিব্রত ভারত
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে একের পর এক সব একতরফা নির্বাচনে বাংলাদেশে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা সরকারকে অন্ধ সমর্থন দিয়ে এসেছে ভারত। ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে যান ভারতে। এর পর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নতুন বাস্তবতায় সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে তেমন আগ্রহী নয় ভারত। বিভিন্ন বক্তব্য ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে বিব্রতকর অবস্থান নিয়েছে দেশটি। সেই সঙ্গে তাদের পক্ষ থেকে অসহযোগিতাও ছিল সুস্পষ্ট। এটিকে ভারতের কূটনৈতিক পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতে আবারও জোট সরকার
দেশটির ১৮তম সাধারণ নির্বাচনে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয় ১৯ এপ্রিল। ১ জুন সপ্তম দফার ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দেড় মাসব্যাপী ভোটগ্রহণ। নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয় ৪ জুন। নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেও বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জোট সরকার গঠন করতে হয়েছে তাকে। ১০ বছর আগে উগ্র হিন্দুত্ববাদে ভর করে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন মোদি। তখন তিনি ভারতীয়দের ভালো চাকরি ও উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সরকার ভারতের অর্থনীতির লাগাম ধরতে ব্যর্থ হয়, যা মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। এবার নিরঙ্কুশ জনসমর্থন না পাওয়ার পেছনে এটাকেই মূল কারণ হিসেবে মনে করা হয়।