
২০২১ সালে উইলসন সেন্টারে প্রকাশিত আইএস যোদ্ধার ছবি। সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষবরণ উদযাপনের সময় নিউ অরলিন্সের ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে গাড়ি ও বন্দুক দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। নতুন বছরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এই ঘটনাকে পশ্চিমা দেশে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ফিরে আসা হিসেবেই দেখছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে ৪২ বছর বয়সী শামসুদ-দিন জব্বারের নাম প্রকাশ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, হামলায় ব্যবহৃত গাড়ি থেকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক উগ্রবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পতাকাও পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তদন্ত সংস্থাগুলোর ধারণা একক পরিকল্পনায় এই হামলা চালাননি অভিযুক্ত ব্যক্তি। এ ঘটনার সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবেই বিবেচনা করে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো সংগঠন।
এ ছাড়া এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার (১ জানুয়ারি) বলেছেন, এফবিআইয়ের কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন, হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে জব্বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন- যা নির্দেশ করে তিনি আইএস দ্বারা অনুপ্রানিত ছিলেন। প্রেসিডেন্টের এই বার্তা ইঙ্গিত দেয় যে, হামলায় আইএসের সংশ্লিষ্টতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আর এই হামলা এমন সময় ঘটল যখন চলতি মাসেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তার প্রথম মেয়াদেই আইএসের স্বঘোষিত প্রথম খলিফা আবু বকর আল বাগদাদি মার্কিন অভিযানে নিহত হয়েছিলেন।
এর আগে গত বছরের মার্চে মস্কোর ক্রোকাস সিটি কনসার্ট হলে এক হামলার ঘটনায় ১৩৩ জনের প্রাণহানী হয়। সে সময় আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতিও দেয়। যদিও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে সে হামলার ঘটনায় কিয়েভকে দায়ী করা হয়। সে বছর একই মাসে আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের এক ব্যাংকের সামনে আত্মঘাতি বোমা হামলায় ২১ জন নিহত হন। সে ঘটনাতেও আইএস দায় স্বীকার করে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে আলকায়েদার কিছু মৌলিক পার্থক্য ছিল। যে সময় আল কায়েদা পশ্চিমা দেশগুলোতে হামলার চেষ্টা করত- সে সময় আইএসের লক্ষ্য ছিল ইরাক ও সিরিয়ায় আরও বেশি অঞ্চল দখল। তবে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট এবং ইরান, সিরিয়া ও রাশিয়ার জোটের অভিযানের মুখে তাদের পতন ঘটে। ফলে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে আল কায়েদার কৌশল অবলম্বন করার শঙ্কা বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইসলামিক স্টেটের পরিচয় আইএস, আইএসআইএস, ইসলামিক স্টেট অফ সিরিয়া অ্যান্ড ইরাক নামেও পরিচিত। উগ্রবাদী সংগঠনের ওপর নজরদারী করা সংস্থা সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপের তথ্যমতে, ২০১৪ সালে আল কায়েদা থেকে পৃথক হয়েই আবু বকর আল বাগদাদীর নেতৃত্বে সংগঠনটির জন্ম হয়। শুরুর দিকেই ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অঞ্চল দখল করে আলোড়ন সৃষ্টি করে তারা। গত ডিসেম্বরে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর আইএস দেশটিতে আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
এদিকে বিভিন্ন ইস্যুতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিপরীতমুখী হলেও দুই দেশই সিরিয়া ও ইরাকে আইএস বিরোধী অভিযানে যুক্ত ছিল।