Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

সংকটের আবর্তে ভারতের অর্থনীতি

Icon

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৯

সংকটের আবর্তে ভারতের অর্থনীতি

অব্যাহত রয়েছে ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতন। ছবি: সংগৃহীত

নতুন বছরের শুরুতে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার আরো কিছুটা কমেছে। সেই সঙ্গে অব্যাহত রয়েছে ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতন। পুঁজিবাজার নিম্নমুখী হওয়ায় দেশটির গোটা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৬৩৪.৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রিজার্ভ। ওই সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার ৫.৭ বিলিয়ন ডলার কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার গত কয়েক মাসে অনেকটাই কমেছে। সেপ্টেম্বরের শেষে ভারতের ভান্ডারে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ছিল ৭০৪.৮৮৫ বিলিয়ন ডলার। এদিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে পতন অব্যাহত রয়েছে ভারতীয় মুদ্রা রুপির। এরই মধ্যে ভারতীয় রুপির মান আরো কমে ৮৬.২০-এ দাঁড়িয়েছে, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন। ডলারের শক্তিশালী অবস্থান ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে অর্থ প্রত্যাহারই রুপির দরপতনের মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত ৯ জানুয়ারি রয়টার্সের এক সমীক্ষায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, ভারতীয় রুপি আরো দুর্বল হয়ে ডলারের বিপরীতে ৮৬-তে নেমে যেতে পারে। এর পরদিনই ১৪ পয়সা পতন হয় রুপির। রুপির এই দরপতনের পাশাপাশি ভারতের শেয়ারবাজারেরও পতন হচ্ছে লাগাতার।

বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও দেশীয় শেয়ারবাজারের নেতিবাচক প্রবণতাও রুপি, তথা ভারতের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের পুঁজিবাজার সংকটে পড়েছে। ১০ জানুয়ারি সেনসেক্স ২৪১.২০ পয়েন্ট পড়ে ৭৬ হাজারের দোরগোড়ায় চলে এসেছে; ৭৭ হাজার ৩৭৮.৯১ অঙ্কে নেমেছে। এর আগের তিন দিনে সূচকটি পড়েছে মোট ৮২০ পয়েন্ট। বাজারের মূলধন কমেছে ১২ লাখ কোটি রুপি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মোট ১২৭৮৭.৭৩ কোটি রুপি পুঁজিবাজার থেকে তুলে নিয়েছেন, যা রুপির অবমূল্যায়নের অন্যতম কারণ।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এভাবে শেয়ার বিক্রি করা নিয়ে ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। তারা মনে করছে, এটা মোদি সরকারের প্রতি ‘করপোরেট জগতের অনাস্থা’। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘বাজারে কেনাকাটা কমে গেছে বলে বিনিয়োগ আসছে না। আয়কর ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো শিল্পমহলকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রেখেছে। বিষয়টি হলো, মাত্র চার-পাঁচটি শিল্পগোষ্ঠী মোদি জমানায় ব্যবসা করতে পারবে বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। এখন নতুন করে প্রমাণ হলো, বেসরকারি শিল্প মহল ভারতে বিনিয়োগ করতে চাইছে না।’ তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘হিসাব মতে, নতুন বছরের প্রথম কয়েক দিনেই শেয়ারবাজার থেকে ২০০ কোটি ডলারের পুঁজি তুলে নিয়েছে বিভিন্ন বিদেশি ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান। ফলে সূচক আরো নিচে নেমেছে।’ 

১০ জানুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে সেনসেক্সের মোট পতন হয়েছে ১৮৪৪.২ পয়েন্ট, নিফটির ৫৭৩.২৫। রুপির বিনিময়মূল্য কমে আসা এবং শেয়ারবাজারে দরপতন দেশটির অর্থনীতিকে অস্থির করে তুলেছে, যা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের এপ্রিল-অক্টোবরে নিট মাত্র এক হাজার ৪৫০ কোটি ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে, যা ২০১২-১৩ সালের পর সবচেয়ে কম। এ সময় মোট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৮৬০ কোটি ডলার। এই সময়ে তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ ভারত থেকে বেরিয়ে গেছে। এফডিআইয়ের গতি ফেরাতে বাজেটে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার উৎপাদনভিত্তিক উৎসাহ প্রকল্প (পিএলআই) ঘোষণার পরিকল্পনা করছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সম্প্রতি চীন বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। বিনিয়োগকারীরা তাদের পুরনো বাজার চীনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেইজিং যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তাতে চীনের শিল্প খাতের মুনাফা বাড়বে, উৎপাদনও বাড়বে। তবে ওয়াল স্ট্রিটের বড় ব্যাংকগুলো এখনো মনে করে, আগামী এক দশক বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হবে ভারতের শেয়ারবাজার। যদিও মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠদের সহায়তায় যেভাবে পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করা হয়েছে গত এক দশক ধরে তাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হতাশ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। 

আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাংকের উপাত্ত অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮.৪ শতাংশ বেড়েছে। সেই সঙ্গে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা হয়েছে, শেষ প্রান্তিকে যার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩০ কোটি ডলার। এর আগের প্রান্তিকে ভারতে দুই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছিল। এসব কারণে রুপির ওপর চাপ বেড়েছে। সংকটের ঘূর্ণিপাকে রয়েছে ভারতের অর্থনীতি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫