Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

দিল্লিতে কেজরিওয়ালই আসছেন

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০৪

দিল্লিতে কেজরিওয়ালই আসছেন

আম আদমি পার্টির নেতা কেজরিওয়াল। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। আম আদমি পার্টি (আপ), ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), কংগ্রেস পার্টি দিল্লির মানুষের জন্য ঢালাও অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এবারের নির্বাচন আপের প্রধান নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। আর এই চ্যালেঞ্জ টপকে যেতে পারলে দলটি জাতীয় স্তরে বিস্তৃত হবে বলেও মনে করা হচ্ছে। ভোটের ফলাফল জানা যাবে ৮ ফেব্রুয়ারি। 

আম নেতা কেজরিওয়াল তিনবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ২০১৩ সালে কংগ্রেসের সমর্থনে, তারপর ২০১৫ সালে তিনি বিপুলভাবে জেতেন। ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসন পায় আপ। কংগ্রেস একটিও আসন পায়নি। ২০২০ সালে কেজরিওয়াল আবার ৬২টি আসনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন। দিল্লি পর্যন্ত আপ তেমন সমস্যার মুখে পড়েনি। তবে যখন আপ পাঞ্জাবে জিতে গুজরাটের দিকেও পা বাড়াতে চায়; তখন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের তোপের মুখে পড়ে। কারণ গুজরাটই দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতার উৎস। 

এরপর মদের লাইসেন্স কেলেঙ্কারিতে দিল্লির সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়াকে প্রথমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কেজরিওয়ালকেও কারাগারে যেতে হয়। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রচার করার জন্য তিনি সাময়িকভাবে মুক্তি পান। পরে আবার তাকে কারাগারে যেতে হয়। এরপর তিনি জামিন পান এবং মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হন আপের আতিশি।

এর মধ্যে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেও আপ একটি আসনেও জেতেনি। দিল্লির সাতটি আসনই বিজেপি জিতেছে। বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়াল আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেননি। একাই লড়ছেন। প্রশ্ন হলো, দীর্ঘকালীন জেলে বন্দি থাকা, দুর্নীতির অভিযোগ, লোকসভায় খারাপ ফলের ধাক্কা কাটিয়ে আপ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

বিজেপি এখনো পর্যন্ত দিল্লির জন্য কোনো মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। আগের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী মোদির নামেই ভোট চাইবে। গত কয়েক দিনে প্রধানমন্ত্রী দিল্লির জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। বিজেপি চাইছে, লোকসভা ভোটে দিল্লিতে তারা যে ফল করেছে, তা ধরে রাখতে। গত তিনটি লোকসভা নির্বাচনে অর্থাৎ ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪ সালে বিজেপি দিল্লির সাতটির মধ্যে সব কটি আসনই জিতেছিল। অথচ বিধানসভায় উল্লেখযোগ্য কোনো ফল তারা পায়নি। তবে লোকসভা ভোট ছিল মোদি বনাম রাহুল গান্ধীর লড়াই। সেখানে কেজরিওয়ালের ভূমিকা ছিল খুবই কম। কিন্তু এবার কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বিজেপিকে লড়তে হবে। 

এ ক্ষেত্রে লোকসভা নির্বাচনে মোদির মতো শক্ত প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার আছে, কিন্তু দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরে কেজরিওয়ালের সামনে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো তেমন কোনো মুখ্যমন্ত্রী দাবিদার নেতা নেই। দিল্লিতে তারা নেতা বদল করলেও এমন কাউকে আনতে পারেনি, যাকে সামনে রেখে এগোনো যায় বা তুলে ধরা যায়। প্রসঙ্গত, বিজেপি ভোটে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হলেও তারা যেখানেই জিতেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেখানে প্রতিপক্ষ ছিল কংগ্রেস। দিল্লির বিষয়টি ভিন্ন। এখানে আগে থেকেই বিজেপির চেয়ে ভালো বিকল্প পেয়েছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। যে কারণে বিজেপির বহু প্রপাগান্ডা সত্ত্বেও বিধানসভা নির্বাচনে তারা আশা জাগাতে পারছেন না।

দিল্লির ভোটে কেজরিওয়ালের একের পর এক সাফল্যের পেছনে রয়েছে দলটির জনমুখী সিদ্ধান্ত এবং এর বাস্তবায়ন। তিনি প্রথমে স্লোগান দেন, ‘বিজলি হাফ, পানি মাফ’, অর্থাৎ বিদ্যুতের বিল হবে অর্ধেক ও পানি পাবে বিনামূল্যে। পরে ক্ষমতায় এসে তিনি প্রতিশ্রুতি পালন করেন। এরপর তিনি মেয়েদের সরকারি বাসে যাতায়াত ফ্রি করে দেন। বিভিন্ন জায়গায় মহল্লা ক্লিনিক করে বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সরকারি স্কুলের অবস্থা এখন খরুচে প্রাইভেট স্কুলের চেয়ে কম কিছু নয়। দিল্লি সরকারের মহল্লা ক্লিনিক, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, পানি, বিনামূল্যে যাতায়াতের মতো প্রকল্প থেকে মানুষ সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। তাই এ সরকারের পরিবর্তন তারা চান না। দিল্লির বেশিরভাগ ভোটারই হয়তো ঠিক করে ফেলেছেন যে তারা লোকসভায় বিজেপিকে এবং বিধানসভায় আম আদমি পার্টিকে ভোট দেবেন।

দিল্লির আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আবহে প্রতিটা দলই তাদের পূর্ণ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে চলেছে। রণকৌশলের অঙ্গ হিসেবে কেজরিওয়ালের বিপরীতে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ দীক্ষিতকে। কংগ্রেস যদি তাদের কৌশলে সফল হয় এবং ভালো ভোট পায়, তাহলে দিল্লির নির্বাচন বেশ আকর্ষণীয় হতে চলেছে বলে মনে করা যেতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে কেজরিওয়াল নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫