ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট: শান্তি ও ঐক্যের এক অনন্য মঞ্চ

সাফিন আহমেদ
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৫

ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট ২০২০-এ ভাষণ দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব যখন নানা রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক বিভেদের মধ্যে বিভক্ত, তখন কিছু অনুষ্ঠান মানুষের একত্রিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ এমন একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ, যা প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ধর্মের নেতাদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসে। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা শুধু নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রার্থনা করেন না, বরং তারা পৃথিবীজুড়ে শান্তি, ঐক্য এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রিত হন। ১৯৫৩ সালে এর সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত এটি হয়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী বার্তা, যা সবার মধ্যে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং মানবতার প্রতি শ্রদ্ধার এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয় একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান, ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট। এর আয়োজনের পেছনে ছিলেন উইলিয়াম সিবরি, যিনি ১৯৫৩ সালে এই অনুষ্ঠানের ধারণা নিয়ে আসেন। এর পর থেকে এটি একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান হিসেবে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস সদস্য, বিশ্ব নেতারা, ধর্মীয় প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত অংশগ্রহণ করেন।
এই সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা তাদের ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন, শান্তি ও সহনশীলতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন। ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট একটি সম্মিলিত প্রার্থনা ও আলোচনার সময় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে নিজেদের ভিন্ন ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পরিচয় ছাপিয়ে মানবতার জন্য কাজ করার প্রেরণা লাভ করেন।
রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সবাই একত্র হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রার্থনা করেন এবং একে অপরকে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বের বার্তা দেন। এর গুরুত্ব শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দুনিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশও বিভিন্ন সময়ে এই প্রার্থনা সভায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে ছিল। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যার একটি বড় অংশ রয়েছে।
এই প্রার্থনা সভায় সকল ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে যে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেন, তা বাংলাদেশের জন্যও এক দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ এই সভার মাধ্যমে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক দৃঢ় করার সুযোগ পায়। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সভায় অংশ নিয়ে ধর্মীয় সহনশীলতা, মানবাধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ে তাদের ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে এবং ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টের মতো আয়োজনগুলো বাংলাদেশের মতো দেশে শান্তি, ঐক্য ও মানবিক মূল্যবোধের প্রচার করতে সহায়তা করে। এটি একটি বৃহৎ আধ্যাত্মিক সমাবেশ হলেও এর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বও অপরিসীম। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা এবং ধর্মীয় গুরুরা একত্র হয়ে একে অপরের সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও দর্শন সম্পর্কে জানার সুযোগ পান।
এই সভার মাধ্যমে তারা পৃথিবীজুড়ে মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং সেই বার্তা তুলে ধরেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশই যদি এই জাতীয় আধ্যাত্মিক সমাবেশ থেকে শিক্ষা নেয় এবং সহনশীলতা, শান্তি ও সমঝোতার মূল্যে কাজ করে, তবে এটি পৃথিবীকে আরো ভালো ও শান্তিপূর্ণ জায়গা করে তুলতে সহায়তা করবে।