Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

বিজেপির দিল্লি জয়ের নেপথ্যে

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:০৩

বিজেপির দিল্লি জয়ের নেপথ্যে

দিল্লিতে বিজেপির আনন্দ মিছিল।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্না হাজারের যে আন্দোলন, তার অন্যতম সৈনিক হিসেবে উঠে এসেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সেই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণার মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের নির্বাচনে নয়াদিল্লি আসনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে হারিয়েছিলেন আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান। এবার সেই আসনে তিনি নিজে হেরেছেন। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২৭ বছর পর দিল্লি বিধানসভার ক্ষমতায় এসেছে।

২০১৪ সাল থেকে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন; তবে দিল্লির বুকে ক্ষমতায় থেকে যায় বিরোধীদের রাজত্ব। আপের আগে দিল্লি বিধানসভা ছিল কংগ্রেসের হাতে। বিজেপির মদনলাল খুরানা, সাহেব সিং বর্মা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন গত শতকে। এবার দুই দলের মাঝেই সব আসনের হিসাব থেকে গেছে। কংগ্রেস টানা 

তৃতীয়বারের মতো শূন্য আসন পেয়ে হ্যাটট্রিক করেছে। বিজেপি ৪৮ আসন এবং আপ ২২ আসন পেয়েছে। যদিও প্রাপ্ত ভোটে বেশি ফারাক নেই। বিজেপি ৪৬ ও আপ ৪৪ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। কংগ্রেসের প্রাপ্তি ৭ শতাংশের মতো ভোট।

গত দুই বছরে কেজরিওয়াল সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন দুর্নীতির প্রশ্নেই। আবগারি কেলেঙ্কারি মামলায় জড়িয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে তাকে। সেই সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতাকেও একই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কারাগারে বন্দি রাখা হয়। দুর্নীতির দায়ে আপ হেভিওয়েট মণীশ সিসোদিয়া, সত্যেন্দ্র জৈনরা কারাবন্দি ছিলেন। তাদের নিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল চলার পর উচ্চ আদালতের আদেশে মুক্তি পান। পরে একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয় এই আপ নেতাদের কারান্তরীণ রাখা নিয়ে। সেটিও বিজেপি প্রকাশ করতে দেয়নি কোথাও। যে আন্না হাজারের ভাবশিষ্য বলা হতো কেজরিওয়ালকে; তিনি আগে থেকে আপের রাজনীতি পছন্দ করেননি। তিনি এর আগে নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। 

পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিমূলক রাজনীতিতে মানুষের মন কেড়েছিলেন অরবিন্দ। এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে তার থেকেও বেশি সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেয় বিজেপি। বিনামূল্যে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ, যুবকদের চাকরি থেকে নারীদের অ্যাকাউন্টে টাকা, সন্তানসম্ভবাকে অনুদানের মতো নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। 

গেরুয়া শিবির একদিকে আপ নেতাদের আটকে রেখে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছে; মিডিয়া আপ নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রেখেছে; আপ ও কংগ্রেস থেকে বড় নেতাদের দলে টানার সঙ্গে বিজেপির জয়ের পেছনে আরেকটা বড় ভূমিকা ছিল আপের বিরুদ্ধে বিজেপির ভাষায় বক্তব্য দেওয়া। ভোটারদের মধ্যে এসবের মিলিত প্রভাব পড়েছে। এবারের ভোটে দিল্লির দূষণও যথেষ্ট আলোচনায় ছিল। এ ক্ষেত্রে আপ ব্যর্থ বলে প্রচার করেছে বিজেপি ও কংগ্রেস। দিল্লির ব্যাপক দূষণ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যমুনার বেহাল দশা- ভোটারদের একাংশকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

দিল্লি নির্বাচনের আগে টিকিটের জন্য ২৪ জন নেতা দল বদল করেছিলেন। তবে এর মধ্যে জিতেছেন মাত্র ৯ জন। দল বদলের ফলে সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছে বিজেপি। রাজনৈতিক কৌশলেও আপ ও কংগ্রেসকে ছাড়িয়ে গেছে বিজেপি। নির্বাচনী ফলাফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইন্ডিয়া জোট ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে না পারায় সুবিধা পেয়েছে গেরুয়া শিবির। কংগ্রেস গত দুইবারের দিল্লি বিধানসভা ভোটে সেভাবে ভোটের লড়াইয়ে ছিল না। এবার তারা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে আপের ভোটে ভাগ বসিয়েছে। 

দিল্লির নির্বাচন ইন্ডিয়া জোটের অস্তিত্বকে আরো একবার বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ এক্স হ্যান্ডেলে বলেছেন, ‘প্রাণ ভরে লড়াই করুন, একে অপরকে হারিয়ে দিন।’ অথচ গত লোকসভা নির্বাচনে জোট বেঁধে দিল্লির সাতটি আসনে লড়েছিল আপ ও কংগ্রেস। একই ছবি দেখা গিয়েছিল পাশের রাজ্য পাঞ্জাবে। হারের পর কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমরা এখানে গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব। সমাজসেবা এবং মানুষের হিতার্থে কাজ চালিয়ে যাব। ক্ষমতা ভোগ করার জন্য আমরা রাজনীতিতে আসিনি।’ জোট নিয়ে কেজরিওয়াল কিছু বলেননি।

আবার কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ‘মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, তারা পরিবর্তন চাইছিলেন। যারা জিতেছেন তাদের অভিনন্দন। আমরা যারা পরাজিত হয়েছি, তাদের আরো পরিশ্রম করতে হবে।’ যেন বিজেপি ক্ষমতায় আসায় কংগ্রেস হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে; আপ তো আসেনি!

সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায় চৌধুরী বলেন, ‘ইন্ডিয়া জোট আপাতত কোমায় চলে গেছে, এটা বলা যেতে পারে। তবে ভবিষ্যতে আবার কোনো বড় রাজ্যের ভোটে বা জাতীয় নির্বাচনের সময়ে জোট দেখা যাবে। বিরোধীদের একজোট হতেই হবে, নইলে তারা নির্বাচনী ময়দানে বিজেপির সঙ্গে টক্কর দিতে পারবে না।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫