Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে চীনের আঘাত

Icon

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২১

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে চীনের আঘাত

যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে চীন। ছবি: সংগৃহীত

বাণিজ্যনীতিতে প্রথম মেয়াদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছে তিনি। মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ, কানাডার জ্বালানিতে ১০ শতাংশ এবং চীনা পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন। ব্যাপক শুল্কযুদ্ধ শুরুর পর অনেক দেশ এ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে। তবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে শুল্কযুদ্ধে নতুন মাত্রা এনেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। 

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সব ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার এই নতুন বাণিজ্যনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কানাডার ওপর। এর আগে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে কানাডা, মেক্সিকো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ইস্পাত ও ১০ শতাংশ অ্যালুমিনিয়াম আমদানি শুল্ক বসিয়েছিলেন। পরে কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এই শুল্ক প্রত্যাহার করা হলেও ইইউয়ের ওপর শুল্ক ২০২১ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প জানান, চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হয়েছে। এর পাল্টা জবাব হিসেবে বেইজিংও নতুন শুল্ক কার্যকর করেছে। চীনের সর্বশেষ শুল্কারোপ করা মার্কিন পণ্যের মধ্যে কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। এসব পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ সীমান্ত কর আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, কৃষি যন্ত্রপাতি ও বড় ইঞ্জিনের গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

তবে এর প্রভাব সেভাবে পড়বে না মার্কিন অর্থনীতিতে। পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনা অর্থনীতি বিভাগের প্রধান জুলিয়ান ইভানস–পিচার্ড বলেন, চীনা শুল্কের মুখে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা দেশটি থেকে চীনের আমদানি করা পণ্যের প্রায় ১২ শতাংশ। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে চীন থেকে আমদানি করা সাড়ে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য।

শুল্কের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে চীন। এর একটি হলো মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলের বিরুদ্ধে তদন্ত। তবে কী ধরনের তদন্ত হবে, তা স্পষ্ট নয়। ২০১৮ সাল থেকেই চীনে গুগলের সেবা বন্ধ; তবে চীনে এখনো গুগলের কিছু ব্যবসা চালু রয়েছে। স্থানীয় ডেভেলপারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চীনের বাজারে গেমস ও অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পিভিএইচকে ‘অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের’ তালিকায় ফেলেছে বেইজিং। পিভিএইচের মালিকানায় রয়েছে ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগারের মতো খ্যাতনামা ব্র্যান্ড। চীনের অভিযোগ, এই ব্র্যান্ডগুলো চীনা উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে ‘বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে’।

যুক্তরাষ্ট্রে ২৫টি বিরল ধাতুর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে চীন। এর মধ্যে কয়েকটি ধাতু ইলেকট্রনিক পণ্য ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের মূল উপাদান। এই ধাতুগুলোর মধ্যে রয়েছে টাংস্টেন। ধাতুটি মহাকাশবিষয়ক শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধাতুটি পাওয়াও কঠিন। পিচার্ড বলেন, রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিপ, সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রপাতি, ওষুধশিল্প এবং মহাকাশসংক্রান্ত শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেসব ধাতু যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন আমদানি করে, সেগুলোকে কোনো পদক্ষেপের লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।

ট্রাম্প ইইউয়ের বিরুদ্ধে আসন্ন শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা বিশ্ববাজারে আরো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে চীন উপকৃত হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। সপ্তাহখানেক আগে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো ফিরিয়ে দেওয়া অভিবাসীদের প্রতি আচরণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তারপরই ট্রাম্প কলম্বিয়ার রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ করেন। ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে এই পদক্ষেপ ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশাল পরিবর্তন, যা আন্তর্জাতিক অংশীদারির ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, ঐতিহাসিকভাবে কোনো মার্কিন মিত্র দেশ আকস্মিক অর্থনৈতিক শাস্তির মুখোমুখি হলে অন্য মিত্ররা নতুন মিত্রের খোঁজ করতে পারে। আর লাতিন আমেরিকায় ক্রমেই বাণিজ্য বিস্তৃত করছে বেইজিং। কয়েক বছর ধরে চীন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা হাজির করেছে। লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ায় বাণিজ্য ও আর্থিক সম্পর্ক যথেষ্ট প্রসারিত করছে চীন। এখন ট্রাম্প শুল্ক হুমকি ও অর্থনৈতিক চাপ দেওয়ার ফলে ইউরোপ ও লাতিন অঞ্চলে চীনের নতুন সম্ভাবনাও সামনে এসেছে। যদি ট্রাম্পের নীতি দেশগুলোকে বেইজিংয়ের দিকে ঠেলে দেয়, তবে ওয়াশিংটন কেবল বাণিজ্য বিপর্যয়েই পড়বে না; তার আঞ্চলিক প্রভাবও কমে আসতে বাধ্য।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫