Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প কি সত্যিই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারবেন

Icon

অরুন্ধতী সুরঞ্জনা

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৮

ট্রাম্প কি সত্যিই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারবেন

ইউক্রেনের ক্রামাতোরস্ক শহরে রাশিয়ার হামলার পর আগুন নেভাতে ব্যস্ত অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা। ছবি: এএফপি (ফাইল)

তিন বছর হতে চলেছে, এই যুদ্ধ না থামিয়ে বরং আগুন উসকাতে মরিয়া ছিল ইউরোপ। আর জো বাইডেনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র তো স্বয়ং অস্ত্র ও অর্থ পাঠিয়ে এই যুদ্ধকে প্রলম্বিত করেছে। এখন যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যত হয়েছেন, তখন যুদ্ধবাদী বহুপক্ষের মাথা নষ্ট অবস্থা। ইউক্রেন আস্থা রাখতে পারছে না। শান্তি আলোচনায় ডাক না পেয়ে ‘অপমানিত’ ইউরোপীয় নেতারা নিজেদের মধ্যকার বিভেদ আপাতত ভুলে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। এমনকি পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর বয়ানে ট্রাম্পকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের খেলার পুতুল বলে অভিহিত করা হচ্ছে। 

এই অর্থে বিবেচনা করলে ট্রাম্প সম্ভবত সঠিক পথেই আছে। যুদ্ধ বন্ধের প্রাথমিক আলোচনায় ওয়াশিংটন সরাসরি বসছে মস্কোর সঙ্গে। একটু রেডিক্যাল, তবে ট্রাম্পের প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই- এই আলোচনা হচ্ছে সৌদি আরবে, যেখানে যুদ্ধে আক্রান্ত দেশ ইউক্রেন নেই।

পুতিন এরই মধ্যে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং ক্রেমলিনের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ইউরি উশাকভকে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রত্যাশিত আলোচনার জন্য সৌদি আরবে পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তার সঙ্গে থাকছেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং হোয়াইট হাউসের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। এদিকে ট্রাম্প বলেছেন, ‘পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত হয়নি, তবে এটি খুব শিগগির হতে পারে।’ 

ট্রাম্পের আত্মবিশ্বাস, পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করতে চান। 

ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়ার একটি বিশাল ও শক্তিশালী মেশিন আছে এবং আপনারাও তা বোঝেন। তারা হিটলারকে পরাজিত করেছে, নেপোলিয়নকেও পরাজিত করেছে। তারা বহুদিন ধরে যুদ্ধ করে আসছে। রাশিয়া অতীতেও এটি করেছে। তবে আমি মনে করি, পুতিন লড়াই বন্ধ করতে চান।’ এ সময় ট্রাম্পকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে, পুতিন পুরো ইউক্রেন দখল করতে চান কি না? জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি নিজেও পুতিনকে এই প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, যদি সেটাই উদ্দেশ্য হয়, তবে তা ‘আমাদের জন্য বড় সমস্যা’ হয়ে দেখা দেবে।

এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি মার্কো রুবিও বলেন, গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে পুতিন শান্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক সতর্ক করে বলেন যে, এই যুদ্ধ রাতারাতি সমাধান হবে না। রুবিও মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএসের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এখন, অবশ্যই এটি কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। তাই আগামী কয়েক সপ্তাহ ও দিন নির্ধারণ করবে যে শান্তির ইচ্ছা আসলেই আন্তরিক কি না। অবশ্যই, একটি ফোনকল শান্তি স্থাপন করতে পারে না। একটি ফোনকল এই যুদ্ধের মতো জটিল সংকট সমাধান করতে পারে না।’ 

এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের কূটনৈতিক উদ্যোগ ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ওয়াশিংটন হয়তো কিয়েভ বা তার ইউরোপীয় মিত্রদের পরামর্শ ছাড়াই দ্রুত কোনো শান্তিচুক্তির দিকে এগোচ্ছে। আর এ ধরনের শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেনকে নিজ ভূখণ্ডের কিছু অংশ ছাড় দিতে হতে পারে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন-রুশ আলোচনায় ইউক্রেন বা ইউরোপীয় কোনো কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তার দেশকে বাদ দিয়ে যদি কোনো চুক্তি হয়, তবে তিনি তা কখনই মেনে নেবেন না। এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধে আমাদের মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।’

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে আসছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে এই যুদ্ধ শুরু হয়। সীমান্তে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো অস্ত্র ও সৈন্য মোতায়েন বাড়াচ্ছে- এই আশঙ্কা থেকে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করে রুশ বাহিনী। এই যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫