Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

তুরস্ক-পিকেকে যুদ্ধবিরতির নেপথ্যে

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৩

তুরস্ক-পিকেকে যুদ্ধবিরতির নেপথ্যে

পিকেকের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা। ছবি: সংগৃহীত

গত ১ মার্চ কারাবন্দি নেতা আব্দুল্লাহ ওজলানের নিরস্ত্রীকরণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তুরস্কের নিষিদ্ধঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণাকে তুরস্ক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পিকেকের ৪০ বছরের সশস্ত্র বিদ্রোহ অবসানের দিকে এক বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তার কুর্দি সমর্থন দরকার। আর শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে তা হবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের জন্য এক উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক বিজয়।

কুর্দিরা ঐতিহাসিকভাবে আধুনিক তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া ও ইরানের অংশে বাস করে। অথবা বলা উচিত, তাদের বাসস্থান এই চার দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে। যে কারণে তারা নিজেদের পৃথক আবাসভূমি স্থাপনের লড়াইয়ে অগ্রসর হতে পারেনি। তুরস্কের কুর্দি সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো আচরণ এবং জাতিগত নিপীড়নের কারণে ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে তুরস্কের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে কুর্দিরা। তখন আবদুল্লাহ ওজালানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। তুরস্কের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ কুর্দি। বিদ্রোহ-সংঘাতে পরবর্তী ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ১৯৯৯ সাল থেকে কারাবন্দি রয়েছেন আবদুল্লাহ ওজালান।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কুর্দিপন্থি ডিইএম পার্টির আইন প্রণেতাদের একটি প্রতিনিধিদল কারাবন্দি ওজালানের সঙ্গে দেখা করে। এরপর ওজালান তার সংগঠনের সদস্যদের উদ্দেশে একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানাচ্ছি এবং আমি এই আহ্বানের ঐতিহাসিক দায় নিচ্ছি। আপনারা (দলের) সম্মেলন করুন এবং সিদ্ধান্ত নিন। সংগঠনের সবাইকে অবশ্যই অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। পিকেকেকে অবশ্যই বিলুপ্ত করতে হবে।’

অনেক বিশ্লেষকের মতে, এরদোয়ানের রাজনৈতিক মিত্রদের প্রকাশ্য পরামর্শ- ৭৫ বছর বয়সী পিকেকে নেতা ওজালানকে সহিংসতা ত্যাগের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। আর এতে কুর্দি ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ সম্ভব হবে। ২০২৮ সালে এরদোয়ানের পুনর্নির্বাচনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে গত কয়েক মাসে তুরস্কের বৃহত্তম নির্বাচনপন্থী কুর্দি-সমর্থক রাজনৈতিক দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি) চাপের মুখে রয়েছে, যেখানে দলের মেয়রদের স্থলে এরদোয়ান-সমর্থকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণাটি নিঃসন্দেহে শান্তির দিকে প্রথম বড় পদক্ষেপ, যেহেতু পিকেকে ও তুর্কি সরকার গত এক দশকে কোনো শান্তি আলোচনায় বসেনি। তবে কিছু বিশ্লেষক এর স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দিহান।

কিংস কলেজ লন্ডনের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো বিল পার্ক বলেন, ‘আমি অবাক হব যদি এর থেকে কিছু বড় কিছু আসে, কিন্তু তা দেখতে বছরের পর বছর লাগতে পারে। সিরিয়ায় পিকেকের মিত্ররা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নাও হতে পারে এবং তা এই ঘোষণাকে জটিল করে তুলতে পারে। আমি খুব সন্দিহান। আমি তুরস্কে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবর্তন দেখছি না। কুর্দি স্থানীয় সরকার বন্ধ হয়ে গেছে; রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিকরা কারাগারে বন্দি। সেই সঙ্গে পিকেকের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। অনেক সদস্য মনে করতে পারেন, তাদের ওজালানের কথায় চলতে হবে, কারণ তিনি দলের দীর্ঘকালীন কারাবন্দি মহান নেতা।’

তবে গত সপ্তাহে পিকেকে যোদ্ধাদের যুদ্ধবিরতির যে আহ্বান ওজালান জানিয়েছেন, এটিকে তুরস্কের জনগণের জন্য শান্তি প্রচেষ্টার ‘নতুন পর্যায়’ বলে উল্লেখ করেছেন এরদোয়ান। ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেছেন, ‘তুরস্ক ও কুর্দি জনগণের মধ্যে এক হাজার বছরের পুরোনো ভ্রাতৃত্বের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসের প্রাচীর ভেঙে ফেলার দিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

এদিকে সিরিয়ায় নাটকীয় পরিবর্তনও একটি ভূমিকা পালন করেছে এই যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে। ওয়াশিংটনভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিকেন্দ্রিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউজ লাইনস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ক্যারোলিন রোজ বলেন, ‘প্রতিবেশী সিরিয়ায় পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি কুর্দিদের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মূল প্রভাবক হতে পারে। গত তিন মাসের ঘটনাবলি, বিশেষ করে এসডিএফ এবং নতুন সিরিয়ান সেনাবাহিনীর মধ্যে নিরাপত্তা সংস্কার প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে একটি, যার জন্য আমরা পিকেকে ও তুরস্কের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে দেখেছি।’

কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) ঐতিহাসিকভাবে পিকেকের প্রতি সহানুভূতিশীল; যদিও তারা সরাসরি সংযোগের কথা অস্বীকার করে। শিগগিরই সিরিয়ার নতুন সামরিক বাহিনীতে এসডিএফ একীভূত হতে পারে। সিরিয়ার নতুন নেতারা তাদের দেশের সীমানার মধ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস উৎখাতের প্রচেষ্টায় তুর্কি সামরিক বাহিনীর ভূমিকা আশা করছে। 

উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় এরদোয়ানের প্রতি কুর্দিদের অবিশ্বাস রয়েছে। তবে নতুন পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনেক কুর্দি নির্বাচনী আসনগুলোতে ভোটের লড়াইকে নতুন মাত্রা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫