Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

সিরিয়ায় জাতিগত হত্যাযজ্ঞে চাপে অন্তর্বর্তী সরকার

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১০:০৬

সিরিয়ায় জাতিগত হত্যাযজ্ঞে চাপে অন্তর্বর্তী সরকার

সিরিয়ার গণহত্যায় প্রাণ হারানো অনেকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ৯ মার্চ। ছবি: বিবিসি

সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিগত আসাদ সরকারের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গত ৬ মার্চ থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার খবর আসার পর বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এই সংঘর্ষে যুক্ত হয়। তারা আলাউইত সম্প্রদায় অধ্যুষিত লাতাকিয়া ও তার্তুস অঞ্চলে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েক দিনের সংঘর্ষে ব্যাপক প্রাণহানির পর সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতিসাধনের সঙ্গে জড়িত যে কাউকে জবাবদিহির মুখোমুখি করার অঙ্গীকার করেছেন।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, নারী ও শিশুসহ মোট ৯৭৩ জন বেসামরিক সিরীয় গণহত্যার শিকার হয়েছেন। সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাযজ্ঞ এবং জাতিগত নির্মূল অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিনের সংঘর্ষে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ২৩১ জন সদস্য এবং অন্তত ২৫০ জন আসাদপন্থি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। নিরাপত্তাবাহিনী বেশির ভাগ জায়গার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর অনেকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তবে ৯ মার্চও অনেক মরদেহ বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

লাতাকিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা আইমান ফারেস ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বিগত আসাদ সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসনের সমালোচনা করেছিলেন। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং গত ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর তিনি মুক্তি পান। ফারেস এবারের হত্যাযজ্ঞ খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘তারা (হত্যাকারীরা) আমাদের অপরিচিত। আমি তাদের পরিচয় বা ভাষা চিনতে পারিনি, কিন্তু তাদের উজবেক বা চেচেন বলে মনে হচ্ছিল। তাদের সঙ্গে কিছু সিরীয়ও ছিল, কিন্তু তারা সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ নয়। কিছু বেসামরিক লোকও ছিল, যারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে।’

আসাদের সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াথ দাল্লাহ একটি ‘সামরিক কাউন্সিল’ গঠন করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি নতুন বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছেন। গত ৬ মার্চ এই বিদ্রোহীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো শুরু করে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর বহু সদস্য নিহত হয়েছে। এর পরই নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান জোরদার করে। এর সঙ্গে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী নিজ নিজ স্বার্থে যুক্ত হয়েছে। এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীই গণহত্যার মূল হোতা বলে মনে করা হচ্ছে।

সিরিয়ায় এই ঘটনা নিয়ে মতভিন্নতা সমাজের বিভাজনকে নির্দেশ করে। ক্ষমতাসীনরাসহ বৃহত্তর সুন্নি সম্প্রদায় যেকোনো বেসামরিক নাগরিকের হত্যার নিন্দা জানিয়েছে এবং দামেস্কে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে গত কয়েক দিনে, সিরিয়ার বিভিন্ন অংশে ‘জিহাদ’-এর আহ্বানও শোনা গেছে। তারা দামেস্কের বিক্ষোভেও বাধা দিয়েছে। তবে সেখানে নিরাপত্তাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। বানিয়াসের বাসিন্দারা জানায়, এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে কিছু বেসামরিক লোকও অস্ত্র হাতে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।

সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিরা গত ১৩ বছর ধরে আসাদ শাসনের বাহিনীর হাতে নৃশংসতার শিকার হয়েছে। এটি প্রধানত শিয়া আলাউইত সংখ্যালঘুদের প্রতি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উসকে দিয়েছে। কারণ আসাদ এই সম্প্রদায়ভুক্ত এবং তার অনেক সেনা কর্মকর্তাও এই সম্প্রদায়ের, যারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, আসাদ শাসনামলে তারা হাজার হাজার সিরীয়, যাদের বেশির ভাগই সুন্নি মুসলিম, তাদের হত্যা ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল। সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব সদস্য নিহত হয়েছেন, তারা বেশির ভাগই সুন্নি সম্প্রদায়ের এবং এখন সুন্নি সম্প্রদায়ের কিছু লোক প্রতিশোধের আহ্বান জানাচ্ছে। তবে দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শান্তি ও ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আল-শারা দামেস্কের একটি মসজিদে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘আমাদের জাতীয় ঐক্য ও বেসামরিক শান্তি বজায় রাখতে হবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা এই দেশে একসঙ্গে বসবাস করতে পারব। এই ঘটনাগুলো আমাদের প্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জেরই অংশ। বেসামরিক নাগরিকদের রক্তপাত অথবা জনগণের ক্ষতিসাধনে জড়িত ব্যক্তি, নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের অপব্যবহারকারী যে কাউকে কঠোরভাবে এবং নমনীয়তা ছাড়াই জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারবেন না।’ 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে শারা বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে হওয়া সহিংসতার তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করা হয়েছে।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫