-67d931b92c037.jpg)
গাজার একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মরদেহগুলোর পাশে স্বজনরা। সংগৃহীত
যুদ্ধবিরতির পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এরই মধ্যে নিহতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।
গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এমনটাই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। এর আগে গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় দুই শতাধিক নিহত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিল।
ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক শাখার নেতারা তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু গাজার গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু, এমনকি নারীদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বাও রয়েছেন।
মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি হিন্দ খৌদারির মতে, ইসরায়েলের এই আক্রমণ উপত্যকাটির জনগণের জন্য ছিল বিস্ময় ও বড় ধাক্কার।
তিনি জানান, রমজান মাসে সবাই রোজা রাখছে। তাই গাজাবাসীর প্রত্যাশা ছিল অন্তত রমজানের শেষ দিনগুলোতে কোনো বিমান হামলা হবে না। এই জন্য যখন হামলা শুরু হয়- বেশিরভাগ মানুষ সে সময় ঘুমাচ্ছিল। প্রচণ্ড বোমাবর্ষণের শব্দে জেগে উঠে।
হিন্দ খৌদারি আরও জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। অনেক মানুষই ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছে। বহু আহতও হয়েছেন। এর মধ্যেই রাফাহ ক্রসিং দিয়ে ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসার জন্য যে স্থানান্তর করা হতো- তা বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, গাজায় বিশেষ অভিযানে তাদের একশ বিমান অংশ নিয়েছে। এখনও অভিযান চলছে।
এই যুদ্ধবিরতিই এমনিতেই খুবই ভঙ্গুর ছিল। ১৯ জানুয়ারি তা কার্যকর হওয়ার পরেও গত ২ মাসে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য হামাসকেই দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস টাইমস অফ ইসরায়েলকে বলেন, ‘হামাস তাদের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের ছেড়ে দিতে পারত। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখান করেছে এবং যুদ্ধ বেছে নিয়েছে।’
তবে ইসরায়েল এবার এমন সময় গাজায় হামলা শুরু করল- যখন যুক্তরাষ্ট্রও ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতি গোষ্ঠীর উপর একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। অসমর্থিত সূত্র বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন তিনটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরীও রওনা দিয়েছে।
এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট জানিয়েছেন, গাজায় হামলা শুরুর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পরামর্শ করেছিলেন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ।
ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন- হামাস, হুতি ও ইরান- যারা কেবল ইসরায়েলকেই নয় বরং আমেরিকাকেও আতঙ্কিত করতে চায়- তাদের মূল্য দিতে হবে এবং সমস্ত নরক তাদের উপর ভেঙে পড়বে।’
যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, মিশর, কাটার ও যুক্তরাষ্ট্রের নিশ্চয়তা পাওয়ার পর হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের সব শর্তই মেনে চলেছিল। বরঞ্চ ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন নিয়ে ইসরায়েলই চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে অস্বীকার করেছে।
এর আগে দেড় বছরের টানা ইসরায়েলি হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৭ হাজারই শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এখনও নিখোঁজ ১৪ হাজারের বেশি।