বরখাস্ত ২৫ হাজার কর্মীকে চাকরিতে ফেরাতে ট্রাম্প প্রশাসনকে নির্দেশ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৯:২৮

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে যে তারা ফেডারেল সরকারের প্রায় ২৫ হাজার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে। একজন বিচারকের রায়ে এই বরখাস্তকে অবৈধ বলে ঘোষণা করার পর প্রশাসন জানিয়েছে, তারা ওই কর্মীদের পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এই তথ্যগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালতে জমা দেওয়া নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর ফেডারেল আদালতে এই নথি দাখিল করা হয়। নথিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ১৮টি সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বক্তব্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা জানিয়েছেন, চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া শিক্ষানবিশ কর্মীদের প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল, অন্তত সাময়িকভাবে।
বুধবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ধনকুবের ইলন মাস্ক ফেডারেল সরকারের খরচ ও জনবল কমানোর লক্ষ্যে একটি বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। এর অংশ হিসেবে এই ২৫ হাজার কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের পর সমালোচনা ও বিক্ষোভ শুরু হলে বিভিন্ন স্থানে মামলা করা হয়। এবার প্রথমবারের মতো প্রশাসন বরখাস্তের বিষয়টি স্বীকার করে। তারা কর্মীদের সংখ্যা উল্লেখ করে আদালতে নথি জমা দিয়েছে।
বেশিরভাগ সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা কয়েক শতাধিক থেকে হাজার হাজার কর্মীকে চাকরি থেকে সরিয়েছেন। অর্থ বিভাগ থেকে প্রায় ৭ হাজার ৬০০, কৃষি বিভাগ থেকে ৫ হাজার ৭০০ এবং স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ থেকে ৩ হাজার ২০০-এর বেশি কর্মী বরখাস্ত হয়েছেন।
বাল্টিমোর ফেডারেল আদালতের বিচারক জেমস ব্রেডার ১৩ মার্চ একটি রায়ে বলেন, গত মাসে শিক্ষানবিশ কর্মীদের গণহারে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া অবৈধ ছিল। তিনি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মীদের চাকরিতে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। তবে তিনি সংস্থাগুলোকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে বাধ্য করেননি। তবে গণহারে ছাঁটাইয়ের পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আদালতের মতে, কর্মীদের ব্যাপকভাবে বরখাস্ত করতে হলে সংস্থাগুলোকে আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে।
সাধারণত শিক্ষানবিশ কর্মীদের এক বছরের কম সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে বরখাস্ত হওয়া কিছু কর্মী দীর্ঘদিন ধরে ফেডারেল সরকারে কাজ করে আসছিলেন।
মঙ্গলবার এক সংক্ষিপ্ত নির্দেশে বিচারক ব্রেডার বলেন, সংস্থাগুলো তার রায় অনুসারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। তিনি আগামী সোমবার বিকেলের মধ্যে কর্মীদের পুনর্বহালের অগ্রগতি সম্পর্কে তাকে জানাতে বলেছেন। একই সঙ্গে তার নির্দেশের ‘যথাযথ বাস্তবায়ন’ প্রত্যাশা করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছিল, শিক্ষানবিশ কর্মীদের বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের কর্মদক্ষতা বা ব্যক্তিগত কারণে। তবে বিচারক ব্রেডার ১৩ মার্চের রায়ে বলেন, এই দাবি সঠিক নয় এবং বরখাস্ত কর্মীদের সহায়তা করা প্রশাসনের দায়িত্ব।
ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত ১৯টি অঙ্গরাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এই গণহারে ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে বিচারকের রায় এসেছে। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে কর্মী ছাঁটাই ও খরচ কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া সব ফেডারেল সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ট্রাম্প প্রশাসন ব্রেডারের রায়ের বিরুদ্ধে ভার্জিনিয়ার একটি আপিল আদালতে আপিল করেছে। এর আগে, সান ফ্রান্সিসকোর একটি আদালতে বিচারক উইলিয়াম অ্যালসুপ ছয়টি সংস্থার বরখাস্ত কর্মীদের চাকরিতে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৩ মার্চের রায়ের কয়েক ঘণ্টা আগে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।